সুউচ্চ পর্বতমালা, দুর্গম ঘন জঙ্গলে ঢাকা গা ছমছমে পরিবেশ। নানা প্রজাতির হিংস্র জীবজন্তুর ছড়াছড়ি। আফ্রিকা! একরাশ রোমাঞ্চ!
এ হেন আফ্রিকায় তানজানিয়ার কথা মনের কোনায় উঁকি দিলে যে নামটা মাথায় আসবেই, তা হল জগৎ-বিখ্যাত কিলিমাঞ্জারো পর্বত। বাঙালি সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছে যাবে চাঁদের পাহাড়ে। ফিরে দেখবেই বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাসের নায়ক চির রোম্যান্টিক পর্যটক শঙ্করকে!
উপন্যাসের পটভূমি পূর্ব আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ার অন্তর্গত কিলিমাঞ্জারো পর্বতমালা আর তাকে ঘেরা ভয়াল দুর্গম জঙ্গল! এর পর তানজানিয়া কেন বাঙালির প্রিয় সেটা আর বলে দিতে হয়? তার চেয়ে বরং দেওয়া যাক পুজোয় তানজানিয়া ভ্রমণের সুলুকসন্ধান।
কোথায়: ভারত মহাসাগরের তীরে পূর্ব আফ্রিকার দেশ তানজানিয়া।
ইতিহাস ও সংস্কৃতি: দেশটির তুমুল জাতিগত বৈচিত্র্যের কারণে এখানে প্রচলিত ১০০টি ভিন্ন ভিন্ন ভাষা। তার মধ্যে অবশ্য সরকারি ভাষা দু'টি। ইংরেজি ও সোয়াহিলি।
১৯৬৪ সালে টাঙ্গানিকা এবং জাঞ্জিবার, এই দুই দেশ মিলেমিশে তানজানিয়া প্রজাতন্ত্রের সৃষ্টি। তাঙ্গানিকার 'তান্' ও জাঞ্জিবারের 'জান্' শব্দাংশ মিলে তানজানিয়া। যার রাজধানীর নাম দোদোমা।বোমার মতো না ফাটলেও তানজানিয়ার রাজধানী-সহ অন্যত্র প্রায়ই এ দেশের বাসিন্দাদের উপরে মূলত বিস্ফোরণ ঘটিয়েই আক্রমণ চলে।
তানজানিয়ার ক্ষমতাসীন চামা চা মাফিন্দুঝি বা সিসিএম ১৯৯২ সাল পর্যন্ত দেশের একমাত্র বৈধ অনুমোদিত রাজনৈতিক দল ছিল। অবশেষে ২০১৫ সালে জন মোগুফুলি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পাশাপাশি সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে প্রজাতন্ত্র কায়েম করেন। তানজানিয়ার অন্যান্য দল বা প্রধান বিরোধী দলকে বলা হয় চ্যাডামা।
তানজানিয়ার আদিবাসী উপজাতি হাডজা ও স্যান্ডওয়ের মধ্যে এখনও শিকারী সংগ্রামীদের সন্ধান মেলে। পাশাপাশি এ দেশের চাকুরিজীবী সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ লোহা ও ইস্পাত উৎপাদন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। এ ব্যাপারে বিশেষ করে ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি যাত্রিবাহী জাহাজ ও ব্যবসায়ীদের সেই প্রথম সহস্রাব্দ এডি থেকে পূর্ব আফ্রিকার এই অঞ্চলে যাতায়াতের ইতিহাস আছে। কিন্তু বাঙালি বহু যুগ ধরে তানজানিয়ায় মজে দেশটার অপার ভৌগোলিক সৌন্দর্যের টানে!
কী দেখবেন: আফ্রিকা মহাদেশের ১৩ তম এবং গোটা পৃথিবীর ৩১তম বৃহত্তম দেশ তানজানিয়ার ৩৮ শতাংশ ভূমি কেবলমাত্র বনাঞ্চল এবং বন্যপ্রাণীদের সংরক্ষণের জন্য সম্পূর্ণ রূপে সুরক্ষিত। ১৬টি বিশাল জাতীয় উদ্যান আছে এ দেশে। উত্তর ও দক্ষিণে যথাক্রমে কেনিয়া ও উগান্ডা সীমান্ত থেকে শুরু করে তানজানিয়ার উত্তর-পূর্বে কিলিমাঞ্জারোর ঘন জঙ্গল, উত্তর-পশ্চিমে গোটা আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যে বৃহত্তম হ্রদ, লেক ভিক্টোরিয়া ভ্রমণপিপাসু বাঙালি পর্যটকদের নেশার মতো টানে। যে টান 'চাঁদের পাহাড়'-এর শঙ্কর থেকে বাস্তবের ক্রিকেট তারকা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় পর্যন্ত অস্বীকার করতে পারেননি!
ক্রিকেট বিশ্বকাপের ৪৮ বছরের ইতিহাসে ভারতীয় দলের প্রথম ম্যাচ জয় যেমন ১৯৭৫-এ পূর্ব আফ্রিকার বিরুদ্ধে, তেমনই চলতি বিংশ শতাব্দীতে ভারতের ক্রিকেট দলের সঙ্গে যখনই দক্ষিণ আফ্রিকা বা জিম্বাবোয়ে সফরে গিয়েছেন সচিন-সৌরভ, সময় পেলেই ছুটেছেন তানজানিয়ায়। 'শঙ্কর' হতে চেয়ে! কিলিমাঞ্জারো, লেক ভিক্টোরিয়া চষে বেরিয়েছেন।
জগদ্বিখ্যাত যেসব টুরিস্ট স্পটগুলোর জাঙ্গল সাফারি অতুলনীয় এবং অদ্বিতীয় দুই-ই। গোমেবস্ট্রিম ন্যাশনাল পার্কে শিম্পাঞ্জির চারণভূমি বিশ্বের আর কোথাও নেই। সেরেঙ্গেটি অরণ্যের জঙ্গলের অদ্ভুত বিরল বন্যপ্রাণীর সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার ২৭৫ ধরনের ভয়ঙ্কর সব সরীসৃপের সন্ধানও আপনি একমাত্র তানজানিয়াতেই পাবেন।
কী ভাবে যাবেন: তাই পুজোয় বাজেট তৈরি করে তানজানিয়ার বিমানে উঠে পড়ুন। হয়ে উঠুন 'চাঁদের পাহাড়'-এর শঙ্কর! এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।