travelling to dhotrey for pujo

হাত বাড়ালেই কাঞ্চনজঙ্ঘা! ধোতরে থেকে অরণ্য পথে টংলু হয়ে টুমলিং

ছোট্ট ট্রেকিং। ধোতরে থেকে টংলু হয়ে টুমলিং। অথবা উলটোটা। সেক্ষেত্রে গাড়ি করে টুমলিং চলে যাওয়া যায়। পথে গাছের ঢল। পাখির ডাক। আর কখনও ডান দিকে, কখনও বাঁ দিকে পাখির ডানার ছড়ানো কাঞ্চনজঙ্ঘা।

Advertisement

প্রদীপ্ত চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২৩ ২০:১১
Share:

বয়সের আর কাজের ভারে যখন পাহাড়ের পথে পথে হেঁটে বেড়ানো যখন ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে তখন একটা ছোট্ট ট্রেকিং রুটের কথা বলতে পারি। বাঙালির প্রথম পছন্দ সান্দাকফু। কিন্তু এখন গাড়ির রাস্তা হয়ে ভিড় বেড়েছে, হারিয়েছে সেই নির্জনতা। আর হাঁটলে বেশ বড় ট্রেকিং।

Advertisement

একটু সমঝোতার পথে হাঁটুন। গাড়িতে টুমলিং গিয়ে সেখান থেকে ট্রেক করে ধোতরে হয়ে ফিরুন বা উলটোটাও করতে পারেন। ধোতরে হয়ে ফিরলে চড়াই ভাঙতে হবে না, পুরোটাই উতরাই। এপ্রিলে হলে রডোডেনড্রন পাওয়ার আশা ষোলো আনা। পুজোর সময় হলে কাঞ্চনজঙ্ঘা।

সকালে নিউ জলপাইগুড়ি নেমে গাড়িতে মানেভঞ্জন। এবার একটা বোলেরো নিয়ে টুমলিং-এর পথে। এখন সান্দাকফু্র পথে অনেকটাই কংক্রিট বাঁধানো পথ, তবে প্রচণ্ড খাড়াই। বুনো শুয়োরের মতো ঘোঁত ঘোঁত করতে করতে গাড়ি পৌঁছবে টুমলিং। টংলু-এর পর রাস্তা খাড়া নেমে গিয়েছে ১.৫ কিলোমিটার। টুমলিং-এ এখন অনেক হোটেল। অধিকাংশ টুরিস্ট কোনও রকমে একটা রাত টুমলিং-এ কাটিয়ে দৌড়োয় সান্দাকফুর দিকে।

Advertisement

খুব তাড়া না থাকলে একটা দিন বরাদ্দ করুন টুমলিং-এর জন্য। সামনে মস্ত এক অজগরের মতো বিছিয়ে আছে রাস্তা, সামনে উঠে গিয়েছে গৈরিবাসের দিকে। পিছনেও চড়াই, টংলু। সামনে তাকান, পিছনে ফিরুন, দৃশ্যপট পালটে যাবে। একটু হেঁটে চলে যান গৈরিবাসের দিকে, মুহূর্তে মুহূর্তে পালটাবে দৃশ্যপট। এগোন টংলুর দিকে, সে আরেক ছবি। এপ্রিলে হলে দুপাশে রডোডেনড্রন স্বমহিমায় বিরাজমান। কপাল খুব মন্দ না হলে কাঞ্চনজঙ্ঘা। সকালের লালচে আলোয় সে ছবি একরকম, সন্ধের নরম আলোয় আরেক রকম। নরম রোদের মায়ায় আরেক রকম। কখনও মেঘ ঝাপসা করে দিচ্ছে, আবার যেন ইরেজার বুলিয়ে কেউ তা পরিস্কার করে দিচ্ছে।

হাতের ক্যামেরা হাতেই থেকে যায়, লেন্সের সাধ্য কি এই মায়ার খেলাকে বন্দি করে! সঙ্গে অবিশ্রান্ত পাখির ডাক। আসলে এটা তো ওদেরই এলাকা, আমরা তো অনুপ্রবেশকারী।

ট্রেক করে ধোতরে ৭ কিলোমিটার রাস্তা। পুরোটাই উৎরাই, তাই দমে টান ধরার আশংকা নেই। তবে রাস্তা বেশ খড়বড়ে, তাই উৎরাই হলেও পায়ে চাপ পড়ে। তাই হোটেলে বলে রাখুন একজন গাইড কাম পোর্টারের কথা।

সকালে খানিকক্ষণ এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করে বেলা ৯টা নাগাদ রওনা হন ধোতরের পথে। কংক্রিট বাঁধানো পথে টংলু পর্যন্ত ঘুরে এসে থাকলে অন্য পথে চলুন। এই পথে সবুজ ঘাসের গালিচা চোখের আরাম। এপ্রিলে এলে পথের দুধারে রডোডেনড্রনের মেলা, পথে ঝরা ফুলের গালিচা। তবে সাবধান, রাস্তা পাথুরে,, অসমান এবড়োখেবড়ো। সাবধানে পা না ফেললে পা মচকানোর সমূহ সম্ভাবনা। উৎরাই পথে দমে টান না পড়লেও পায়ের আঙুলে যথেষ্ট চাপ লাগে। মেঘ ঢুকে মাঝে মাঝেই পথ রহস্যাবৃত করে তোলে। সব কিছু কেমন ঝাপসা, যেন ক্যানভাসে কেউ হঠাৎ করে খানিকটা সাদা রঙ ঢেলে দেয়।

এই পথে নাকি ভাল্লুক আর লাল পান্ডার আনাগোনা আছে। উৎরাই হলেও ৭ কিলোমিটার রাস্তা ক্লান্তিকর বটেই। পথের সৌন্দর্য আর রোমাঞ্চ মন ভোলালেও শরীর জানান দেবে। বসে, জল, চকোলেট খেয়ে আবার হাঁটা শুরু করে এক সময় পৌঁছে যাবেন ধোতরে। পরদিন সকালে সুন্দরী ধোতরের রূপ দেখতে দেখতেই শিলিগুড়ির গাড়ি চলে আসবে। তারপর নটে গাছ মুড়নোর পালা।

এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement