মন চাইলেই পাহাড়ে চলে যাওয়া বাঙালির এক নেশার মতো! ট্রেনের টিকিট কন্ফার্মড হতেই ব্যাগ গুছিয়ে বেড়িয়ে পড়ার মধ্যে এক আলাদা আবেগ জড়িয়ে।
পাহাড়ি রাস্তার পাশ দিয়ে যাওয়ার পথেই চোখে পড়ে মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য, পাথর বেয়ে ঝরঝরিয়ে নামে পাহাড়ি ঝরনা। দার্জিলিং বা সিকিম যাওয়ার পথে পাহাড়ের কোলে এমনই একটি সুন্দর ছোট্ট জায়গা সেবক।
শুধু প্রাকৃতিক দৃশ্য, পাহাড়, ঝর্নার জন্যই পর্যটকের কাছে প্রিয় নয় সেবক। এই জায়গায় আছে এক কালীমন্দির, যেখানে মা কালী সেবকেশ্বরী মা নামেই পরিচিত। লোকে বলে, তিনি হলেন পাহাড় রক্ষক।
স্বাধীনতার ঠিক পরে সৈন্যরাও এ পথ ধরে যাওয়ার সময়ে পুজো করে তবেই পাহাড়ের দিকে কিংবা সিকিমে রওনা দিতেন। এই দেবীর প্রতি ছিল তাঁদের অটুট ভক্তি।
১৯৭২ সালে আধুনিক মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। কয়েক বছরের মধ্যে নির্মাণের কাজও শেষ করা হয়। তবে স্থানীয়রা বলেন, প্রাচীন কাল থেকে ওই জায়গায় পুজো হতো।
কথিত, রাতে যখন পাহাড় ঘুমিয়ে পড়ে, চার দিক জনশূন্য হয়ে যায়, ঠিক তখন মা প্রহরী হয়ে পাহাড়কে রক্ষা করেন। প্রত্যেক বছর কার্তিক মাসে কালীপূজোতে এখানে ভিড় করেন অসংখ্য ভক্ত। শুধুমাত্র বাংলা থেকেই নয়, মানুষ আসেন সিকিম থেকেও।
এই মন্দিরে পাঁঠাবলির চল আছে। প্রতি বছর বহু পাঁঠাবলি হয় মন্দিরে। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ মানত করেন দেবীর কাছে। তাঁদের বিশ্বাস, মা সেবকেশ্বরী সবার কথা শোনেন।
পুজো শেষে ভক্তদের জন্য থাকে বিশেষ প্রসাদ খাওয়ার ব্যবস্থা। জানা যায়, যত রাতই হোক না কেন, মানুষ যত ক্ষণ থাকেন, সবাই যাতে প্রসাদ খেয়েই বাড়ি ফিরতে পারেন, তার জন্য একটানা চলতে থাকা ভোগ রান্না।
পুজোর সময়ে মায়ের ভোগে থাকে সাদা ভাত, খিচুড়ি, পাঁচ রকম ভাজা, সবজির ঘ্যাঁট, আলু-ফুলকপির তরকারি, ফ্রায়েড রাইস, ছোলার ডাল, পায়েস, সুজি। তা ছাড়াও থাকে বোয়াল মাছ এবং দই-মিষ্টি।
কথিত, ১৯৫০ সাল নাগাদ নীরেন্দ্রনাথ সান্যাল নামে এক ব্যক্তি স্বপ্নে এই জায়গায় দেবীর পুজোর আদেশ পান। তবে সেই সময়ে কোনও মূর্তি ছিল না এখানে। পরবর্তীতে মাটির মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।