কালীপুজোর মাত্র আর কিছুদিনই বাকি। গোটা বাংলা জুড়ে শুরু হবে মায়ের আরাধনা। বাংলার বিখ্যাত কালীমন্দিরগুলিতে ঢল নামবে বহু ভক্তের।
কলকাতার বুকে কালীমন্দির রয়েছে অসংখ্য। কিন্তু জনপ্রিয়তার নিরিখে এগিয়ে রয়েছে বেশ কিছু কালীমন্দির, লোকমতে এই মন্দিরগুলির কালী জাগ্রত তাই শুধু কালীপুজোতেই নয় বরং প্রত্যেক অমাবস্যাতেই ভক্তেরা আসেন পুজো দিতে।
কালীপুজোর আগেই একবার ঘুরে আসুন না এই বিখ্যাত মন্দিরগুলি থেকে।
দক্ষিনেশ্বর কালীমন্দির: হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত এই বিখ্যাত কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রানি রাসমণি। এখানে মা কালী অধিষ্ঠান করছেন ভবতারিণী রূপে। মূল মন্দিরের বিপরীতে রয়েছে ১২টি শিব মন্দির, যা বাংলার ‘আট চালা’ স্থাপত্য শৈলী অনুসরণে নির্মিত। ঠিকানা - দক্ষিনেশ্বর, কলকাতা।
কালীঘাট: ৫১ শক্তিপীঠের একটি হল কালীঘাট। মন্দিরটি হুগলি নদীর ধারে অবস্থিত হলেও বছরের পর বছর ধরে নদীর জল শুকিয়ে যাওয়ায় এখন একটি খালের ধারে কালীঘাট মন্দির অবস্থান করছে যা আদিগঙ্গা নামে পরিচিত। ঠিকানা - অনামী সংঘ, কালীঘাট।
আদ্যাপীঠ: রামকৃষ্ণদেবের শিষ্য শ্রী অন্নদাঠাকুরের হাত ধরে তৈরী হয় আদ্যাপীঠ, যা দক্ষিনেশ্বরের কিছু দূরেই অবস্থিত। এখানে আদ্যাশক্তি দেবী মহামায়া রূপে পুজো পান মা কালী। ঠিকানা: ৫০, ডিডি মন্ডল ঘাট রোড, দক্ষিনেশ্বর।
ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি: মনে করা হয় স্বামী সুবধানন্দের পিতামহ শঙ্কর ঘোষ এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন, যিনি রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের শিষ্য ছিলেন। মা কালী সিদ্ধেশ্বরী দেবী রূপে এখানে পুজো পান। ঠিকানা - বিধান সরণি রোড, কলেজ স্ট্রিট মার্কেট।
লেক কালীবাড়ি: ১৯৪৯ সালে হরিপদ চক্রবর্তী এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। করুণাময়ী কালী মায়ের পুজো করা হয় এখানে। মনে করা হয় এখানে পঞ্চমুন্ডীর অথবা পাঁচটি খুলির আসন রয়েছে। ঠিকানা - ১০৭, শ্রী শ্রী ১০৮ করুণাময়ী কালীমাতা মন্দির, ১, সাদার্ন অ্যাভিনিউ, রবীন্দ্র সরোবর।
চাইনিজ় কালীবাড়ি: ভারতের মধ্যে কলকাতাই এমন একটি জায়গা যেখানে চায়নাটাউন রয়েছে। ট্যাংরার চিনাপাড়ার এই কালীমন্দির হিন্দু এবং বাঙালি দু’টি সংস্কৃতিরই ধারক। ঠিকানা - জি৯ভিভি + কিউ২৬, ৪১, মাথেস্বরতলা রোড, ট্যাংরা।
এই মন্দিরের ছাদে যে ফ্রেস্কো বানানো রয়েছে তা চীনা শিল্প থেকে অনুপ্রাণিত। আবার দর্শনার্থীদের এখানে চিনা ভোগ পরিবেশন করা হয়। ঠিকানা - জি৯ভিভি + কিউ২৬, ৪১, মাথেস্বরতলা রোড, ট্যাংরা।
ডাকাত কালীবাড়ি: কুখ্যাত ডাকাত মনোহর বাগদি এই মন্দির বানিয়েছিলেন। ১৮৯১ সালে এই মন্দির বানানো হলেও মনে করা হয় মন্দিরের কালীমূর্তি কষ্ঠি পাথরের তৈরি যা মন্দিরের থেকেও বেশি পুরনো। ঠিকানা - ৩৯/১এ, ৩৯/১এ, পূর্ণ দাস রোড, ট্রায়াঙ্গুলার পার্ক, লেক টেরেস, গড়িয়াহাট।
শ্যামাসুন্দরী দেবী মন্দির: সুকীয়া স্ট্রিটের জীবন্ত কালী শ্যামাসুন্দরী নামে পরিচিত। ছোট্ট মেয়ে রূপে পুজো পান দেবী। মায়ের উপস্থিতি টের পেয়েছেন অনেক সেবায়েতই। মাছ, মাংস এখানে পুরোপুরি নিষিদ্ধ। চালকলা দিয়ে পুজো করা হয় দেবীকে। ঠিকানা: ২৩, হরিনাথ দে রোড, যোগী পাড়া, গরপাড়, মাছুয়াবাজার।
সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির: কালীপুজোর রাতে এখনও তন্ত্র মতে পুজো হয় দেবীর। শোনা যায়, শ্রীরামকৃষ্ণ এই মন্দির দর্শনে এসেছিলেন এবং গিরিশচন্দ্র ঘোষ মাকে উত্তর কলকাতার গিন্নি বলতেন। নবকৃষ্ণ দেবের নির্দেশ অনুসারে অতীত থেকে বর্তমান কাল অবধি আজও শোভাবাজার বাজার থেকে মায়ের ভোগের জন্য সবজি আসে। ঠিকানা: ৫২০, রবীন্দ্র সরণি, কুমারটুলি।
ফিরিঙ্গি কালী: অ্যান্টনি কবিয়ালের নাম জড়িয়ে রয়েছে এই মন্দিরের সঙ্গে। ঠিক কবে এবং কে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তা নিয়ে রয়েছে মতান্তর। তবে শ্রীমন্ত পণ্ডিত নামে এক ব্রাহ্মণ এই মন্দিরের দায়ভার নিয়েছিলেন। অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান-ফিরিঙ্গি অধ্যুষিত বৌবাজার অঞ্চলে তিনি বহু মানুষের বসন্ত রোগের চিকিৎসা করেছিলেন এবং মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছিলেন।
কৃতজ্ঞতা স্বরূপ বহু ফিরিঙ্গি এই মন্দিরে পুজো দিতে আসেন। তখন থেকেই লোক মুখে এই মন্দিরের নাম হয় ফিরিঙ্গি কালী। কথিত, মন্দিরের পাশের গলিতে থাকতেন অ্যান্টনি কবিয়ালের মামা অ্যারাটুন সাহেব। সেখানে যাতায়াত থাকার দরুন তিনি নাকি মাঝে মাঝে মন্দিরের চালায় বসে গান গাইতেন। ঠিকানা: ২৪৪, বিপিন বিহারি গাঙ্গুলী স্ট্রিট, বৌবাজার।
পুঁটে কালী: এখনও তন্ত্র মতে পুজো হয় এখানে। কালীপুজোর পরের দিন কুমারী পুজো ও অন্নকূট উৎসব হওয়ারও প্রথা রয়েছে। মাকে ভোগে দেওয়া হয় খিচুড়ি, লুচি, পোলাও, তরকারি, পাঁচ রকমের মাছ, খাস্তা কচুরি, চানাচুর ও পায়েস। ঠিকানা: ২০, কালী কৃষ্ণ ঠাকুর স্ট্রিট।
ই সি কালীমন্দির: একজন আইনজীবী সুনন্দা সরকার ১৯৯০ এর দিকে তাঁর বাড়ির নিচের তোলে এই মন্দির নির্মাণ করেন। তাঁর স্বামী দেবীর স্বপ্নাদেশ পান, তারপরই এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়। ঠিকানা: এইচসিএম৫+সিকিউএম, বিধাননগর, ইসি ব্লক। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।