অযোধ্যা। যার ছত্রে ছত্রে পুরাণ এবং ইতিহাস। এই প্রাচীন নগরীর আধ্যাত্মিকতার ইতিহাসে গায়ে কাঁটা দেয় অনেকেরই। রামের জন্মস্থান হিসেবে প্রসিদ্ধ এই শহরে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী এবং পর্যটক যান। অযোধ্যা তাদের দু’হাতে স্বাগত জানায়।
অযোধ্যার অলিতে-গলিতে হাঁটা অনেকটা রামায়ণের মহাকাব্যের জগতে পা রাখার মতো। রাম মন্দির ঘিরে রয়েছে শহরটিকে। এমনিতেই তাই পর্যটকের ঢল থাকে এখানে। কিন্তু দীপাবলি বা আলোর উৎসব, এমন একটি উপলক্ষ যা তীর্থযাত্রী এবং পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রতি বছর।
২০২৪-এর জানুয়ারি মাসে অযোধ্যায় রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষের জমায়েত হয়েছিল সে সময়ে। রামের জন্মভূমির ঐতিহাসিক গুরুত্বকে মাথায় রেখেই অযোধ্যায় এই মন্দির স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
এই উপলক্ষে অযোধ্যায় জমায়েত হয় লক্ষ লক্ষ পর্যটকের। রামলালা মন্দির নির্মাণের পরে এ বছর অযোধ্যায় প্রথম দীপাবলি। তাই পুরাণকে সাক্ষী রেখেই তার উদযাপনের আয়োজন করতে চলেছে রামলালা ট্রাস্ট।
পুরাণ বলছে, দীপাবলি আসলে রামের চোদ্দো বছর বনবাসের পরে নিজ শহর অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তনের সময়কাল। তাঁর প্রত্যাবর্তনকে উদযাপন করতেই এই উৎসবের সূচনা হয়েছিল অযোধ্যায়।
প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে অযোধ্যা। পর্যটক হিসেবে কেউ যদি দীপাবলীর সময়ে এই শহরে যেতে চান, রইল তার ট্যুর গাইড।
অযোধ্যা শহরে দীপাবলীর সময়ে পা রাখলে অদ্ভুত, ঐতিহাসিক এক অনুভূতি হতে পারে। অযোধ্যার প্রতিটি গলি থেকে রাজপথ তার ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে।
সরযু নদীর তীরে অযোধ্যায় দীপাবলীতে প্রতি বছর 'দীপোৎসব' উদযাপন করা হয়। লক্ষেরও বেশি প্রদীপ জ্বালিয়ে তার প্রাথমিক অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। পর্যটকদের সমাগম প্রতি বছরই আগের বছরের রেকর্ড সংখ্যাকে হার মানিয়ে দেয়। বলাই বাহুল্য, রাম জন্মভূমি অযোধ্যার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম।
অযোধ্যায় গেলে যে সব জায়গা ঘুরে দেখবেন- সীতা কি রসোই- অর্থাৎ সীতার রান্নাঘর। মনে করা হয়, রাম জন্মভূমির উত্তর-পশ্চিম দিকে রাজকোটে ছিল সীতার আসল রান্নাঘর। এখন সেখানে একটি মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে।
পুরাণ অনুসারে মনে করা হয়, রাজা বিক্রমাদিত্য হনুমানের স্মৃতিতে এখানে একটি মন্দির নির্মাণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। অযোধ্যা রক্ষা করার জন্য হনুমান সেখানেই বসবাস করতেন বলে কথিত। মূল মন্দিরে তাই মায়ের কোলে বিশ্রামরত ছোট হনুমানের একটি মূর্তি রয়েছে।
কনক ভবন - অযোধ্যার অন্যতম সেরা এবং সুপরিচিত মন্দির কনক ভবন। রামের মা কৈকেয়ী, রাম এবং সীতার বিয়ের পরে এই ভবন তাদেরকে দান করেছিলেন বলে পুরাণে কথিত। সীতা এবং রামের একটি ব্যক্তিগত প্রাসাদও এখানেই রয়েছে।
গোলাপবাড়ি- এটি অযোধ্যার তৃতীয় নবাব সুজা-উদ-দৌলার সমাধি। প্রকৃত সমাধিটি রয়েছে চারবাগ বাগানে। রয়েছে একটি ফোয়ারাও। নবাবের উত্তরাধিকারীদের জন্য আশ্রয়স্থল হিসেবে মাটির নীচে এক সুরঙ্গের মাধ্যমে সংযোগ রয়েছে এই দুই স্থাপত্যের।
অযোধ্যায় পর্যটকদের জন্য নিরামিষ খাওয়ার জায়গা রয়েছে প্রচুর। যে কয়েকটি আমিষ খাবারের রেস্তরাঁ বা দোকান রয়েছে, সেগুলি সব শহরের বাইরে। খুব স্বল্পমূল্যে সুস্বাদু খবর পাওয়া যায় এই জায়গাগুলিতে। তালিকায় আছে
মাখন-মালাই রেস্তরাঁ: NH-27, নয়া ঘাট হোটেল রামপ্রস্থ শ্রী কনক সরকার রসোই: কনক ভবন রোড চন্দ্র মারওয়াড়ি ভোজনালয়: সৃঙ্গার হাট
অযোধ্যায় পৌঁছতে নিকটতম বিমানবন্দর লখনউ, যা অযোধ্যা থেকে ১৫২ কিলোমিটার দূরে। গোরখপুর, প্রয়াগরাজ এবং বারাণসী– এই তিনটি বিমানবন্দরের দূরত্ব অযোধ্যা থেকে যথাক্রমে ১৯৮ কিলোমিটার, ১৭২ কিলোমিটার এবং ২২৪ কিলোমিটার।
ট্রেনে অযোধ্যা যেতে ফৈজাবাদ বা অযোধ্যা, যে কোনও একটি স্টেশনে নামতে হবে। রেলপথে লখনউ থেকে এখানকার দূরত্ব ১২৮ কিলোমিটার।
পর্যটকদের জন্য কতগুলি বিশেষ নিয়ম জারি করেছেন ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ। যেমন, ১। রাম জন্মভূমি কমপ্লেক্সে ঘোরার সময়ে মানিব্যাগ, চার্জার, নোটবুক, পেন বা অন্য কোনও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র সঙ্গে নেওয়া যাবে না। এগুলো বাইরে রেখে আসতে হবে লকারে। লকারের ভাড়া পড়বে ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
২। দু’দিনের জন্য ই-রিকশা বুক করা যায়, যা শহরের আশপাশে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাবে। এর জন্য ভাড়া লাগবে এক থেকে দেড় হাজার টাকা। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।