গুপী গাইন, বাঘা বাইন হোক কিংবা ঋজুদার উপন্যাস, চির আলস্যের বদনাম ঘুচিয়ে বারবারই বাঙালি দিব্যি পাড়ি দিয়েছে বন জঙ্গলে, রোমাঞ্চের স্বাদ নিতে। পুজোর ছুটির সদ্ব্যবহার করে রোজকার একঘেয়েমি থেকে কয়েক দিনের মুক্তির জন্য জঙ্গলই হয়ে উঠতে পারে আপনার গন্তব্য।
জঙ্গল ভ্রমণে যেমন রোমাঞ্চ আছে, তেমনই আছে নানা আশঙ্কা। আটঘাট বেঁধে তবেই শুরু করুন জঙ্গল যাত্রা। পুজোর মরসুমে সুস্থ ও সুন্দর ভাবে সবুজের সান্নিধ্যে সময় কাটানোর জন্য রইল কিছু বাছাই টোটকা।
ভ্রমণের আগে:
-
খোঁজ খবর ও পরিকল্পনা — আপনি কি নিছক প্রকৃতি-প্রেমিক নাকি রোমাঞ্চবিলাসী? পছন্দ অনুযায়ী বেছে নিন গন্তব্য। সাফারি, তাঁবুতে রাত্রিযাপন, হাইকিং, অগ্নিকুণ্ড ঘিরে নৈশভোজ- এমন বহু বিকল্পের মধ্য থেকে সাজিয়ে নিন পথের নকশা।
-
আবহাওয়া — গরমে সহজেই কাবু হয়ে পড়েন? অথবা, কলকাতার প্যাচপ্যাচে বর্ষায় নাজেহাল? জঙ্গলে যাওয়ার আগে কিন্তু জলবায়ুর বিষয়টি মাথায় না রাখলেই নয়। সাধের বেড়ানো মাটি করতে না চাইলে গন্তব্য এলাকার রোদবৃষ্টির খবর জোগাড় করে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ।
-
গোছগাছ — জঙ্গলের আসল স্বাদ নিতে গেলে শহুরে পোশাকআশাকের আতিশয্য বর্জন করাই বাঞ্ছনীয়। দীর্ঘ হাঁটাহাঁটির জন্য ভরসা থাক আরামদায়ক এবং মজবুত জুতোর উপর। এ ছাড়া এলাকাভেদে গরম জামা থেকে বৃষ্টিরোধক কোট, সবই সঙ্গে নিতে হতে পারে।
-
আপৎকালীন আয়োজন — সব পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে সঙ্গে থাকুক নিজের একান্ত আবশ্যক রোজকার ওষুধ। সঙ্গে জীবাণুনাশক, ব্যান্ড-এড, সাবান ও শ্যাম্পু। যন্ত্রপাতির জন্য ভুললে চলবে না ব্যাটারি ও চার্জার। দূরবীনটাও কিন্তু খুব জরুরি।
গন্তব্যে পৌঁছে:
-
খাওয়াদাওয়া — জঙ্গল ভ্রমণের খাটনি সইতে গেলে একেবারে হাল্কা খাবার খাওয়াই ভাল। এ দিক-ও দিক ঘোরার সময়েও প্যাকেটজাত টুকটাক খাবারেই ভরসা রাখুন।
-
পরিবেশরক্ষা — একেই তো বিশ্ব পরিবেশ নষ্ট হতে বসেছে। ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ জঙ্গলের পরিবেশ দূষিত না করাই ভাল। প্লাস্টিক ও পলিথিন ভুলেও জঙ্গলের মধ্যে ফেলে আসবেন না। এ ছাড়া, পশুপাখিদের বসতবাড়িতে ক্যামেরার ফ্ল্যাশ জ্বালানো, জোরে গান শোনা, ধূমপান ইত্যাদি নৈব নৈব চ। ভুলবেন না, অনেক জায়গায় এই নিয়ে কড়া আইনকানুন ও জরিমানার বন্দোবস্ত রয়েছে।
-
খুঁটিনাটির উপর জোর — জঙ্গলের গন্তব্যে রয়েছে নিয়মের কড়াকড়ি। কোথাও টিকিট না কেটে গেলে, কোথাও বা নির্দিষ্ট সময় কেটে গেলে প্রবেশ নিষিদ্ধ। মন দিয়ে পড়ে নিন সমস্ত নিয়ম, প্রয়োজনে সাহায্য নিন অন্তর্জালের।
-
নির্দেশক — কোথায় কোন পশুর আস্তানা, কোন জায়গায় সময় কাটালে নিশ্চিত দেখা মিলবে বিরল কোনও প্রাণীর, কোথায় দাঁড়ালেই বা দেখা যাবে নৈসর্গিক সূর্যাস্ত বা সূর্যোদয়, তা আপনার জানার কথা নয়। কিন্তু, চিন্তা কীসের? অভিজ্ঞ পথনির্দেশকের সঙ্গে ঘুরে উপভোগ করুন জঙ্গলভ্রমণের পূর্ণ স্বাদ ।
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।