রাজস্থানের কুলধারা গ্রামের সম্পর্কে আমরা প্রায় অনেকেই জানি। কিন্তু কখনও শুনেছেন আমাদের পশ্চিমবঙ্গেই এমন এক গ্রাম আছে, যার সঙ্গে মিল রয়েছে কুলধারার! আসানসোলের বেনাগ্রাম। এই গ্রামের মানুষ এক রাতের মধ্যেই গ্রাম ছেড়ে চলে যায় কোনও এক অজানা কারণে। গোটা গ্রাম পরিণত হয় এক পরিত্যক্ত ভূতুড়ে গ্রামে।
তা হলে যাঁদের রাজস্থানের কুলধারা ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে, তাঁরা একবার হলেও নিজের রাজ্যে আসানসোলের বেনাগ্রাম থেকে ঘুরে আসতে পারেন। বর্তমানে বহু পর্যটক রহস্যের স্বাদ পেতে আসানসোলের এই বেনাগ্রামে ভিড় জমান। ঠিক কী এমন ঘটেছিল এক রাতে? কী কারণেই বা এক রাতে সব পরিবার গ্রাম ছাড়া হন? এ সব প্রশ্নের উত্তর কারও জানা নেই।
এই জায়গাটি বর্তমানে তকমা পেয়েছে ভূতুড়ে গ্রামের। পরিত্যক্ত বাড়ি-ঘর, জঙ্গলে ঢাকা পরিবেশ গা ছমছমে পরিবেশের সৃষ্টি করে। যা মানুষের কৌতূহলের বিষয় হয়ে উঠেছে।
আজ থেকে প্রায় বছর ২০ আগে এক রাতের মধ্যেই গোটা গ্রাম জনশূন্য হয়ে যায়। রটে যায়, ভূতের ভয়ে গোটা গ্রাম জনশূন্য হয়েছে। কেউ আর ফিরে আসেনি এই গ্রামে। কিন্তু বিদ্ব্যজ্জনেরা এই ঘটনাকে বুজরুকি বলেই মনে করেন। তাঁদের মতে, এই গ্রাম জনশূন্য হওয়ার পিছনে আছে অন্য কারণ।
মনে করা হয়, আসানসোলের এই জায়গা এক সময় ছিল দুষ্কৃতীদের ডেরা। রেললাইনের ধারে এই গ্রামের আশেপাশে চলত বিভিন্ন দুষ্কৃতীমূলক কাজকর্ম, তার জন্যই নাকি অতিষ্ট হয়ে গ্রামবাসীরা গ্রামছাড়া হন। আবার কেউ কেউ মনে করেন এই গ্রাম ছিল অনুন্নয়নে ঢাকা, কারণ এখানে ছিল জল, বিদ্যুতের সমস্যা। তাই অনেককে সমস্যায় পড়তে হত। গ্রাম ছাড়ার এটিও একটি কারণ বলেই মনে করেন অনেকে।
কিন্তু কারণ যাই হোক না কেন, এই গা ছমছমে পরিত্যক্ত গ্রামের পরিবেশ বর্তমানে মানুষের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসে এই গ্রামের ভৌতিক পরিবেশ উপলব্ধি করার জন্য।
সরকারের তরফে এই গ্রাম বহু বার পরিদর্শন করা হয়েছে, রাস্তাঘাট পরিষ্কার এবং ঠিকঠাক বিদ্যুতের ব্যবস্থা করারও পরিকল্পনা হয়েছে। কিন্তু কোনও এক কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
তবে জানানো হয়েছে, এই গ্রামকে ঘিরে একটি ডার্ক ট্যুরিজমের ব্যবস্থা করা হবে। যেমনটা রাজস্থানের কুলধারা গ্রামে আছে। এই গ্রামের আশেপাশের মানুষদের দাবি, যদি বাস্তবে এমনটা করা হয়, তা হলে হয়তো কিছু রোজগারের পথ খুলবে। কোনও স্থানের সঙ্গে রোমাঞ্চকর বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর মতো ঘটনা বা অন্ধকার ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেই ডার্ক ট্যুরিজমের ব্যবস্থা করা যায়। বেনাগ্রামকে নিয়েও সে রকমই পরিকল্পনা আছে বলে জানা গিয়েছে।