এবারের ছুটিতে বিদেশে বেড়ানোর কথা ভাবছেন? কিন্তু এমন কোথাও যেতে চান, যেখানে গেলে খুব বেশি খরচ হবে না, আবার এমন জায়গাও দেখতে পাবেন, যা চট করে কেউ যান না? তাহলে আপনার তালিকায় আসতে পারে মধ্য এশিয়ার একটি দেশ। এই দেশ তার ঝুলিতে হাজারো বিস্ময়কর জায়গা নিয়ে অপেক্ষা করছে পর্যটকের জন্য। যার সৌন্দর্য বাকি পৃথিবীর দেশগুলোর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের তুলনায় কোনও অংশে কম নয়। এই দেশের নাম কিরগিজস্তান। আর সেই দেশের আকর্ষণের কেন্দ্রে রয়েছে ইসিক কুল নামের হ্রদ।
কলকাতা হোক বা ভারতের অন্য কোনও শহর, সহজে কিরগিজস্তান পৌঁছোতে হলে দিল্লি হয়ে যাওয়াই ভালো। এয়ার আস্তানার বিমানে দিল্লি থেকে কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেক চলে যাওয়া যায়। যাওয়া-আসার রাউন্ডট্রিপ বিমান ভাড়া হাজার চল্লিশেকের মধ্যে হয়ে যেতে পারে। আরও একটা কাজ করতে পারেন। দিল্লি থেকে কাজাখস্তানের আলমাটি চলে যেতে পারেন। সেখান থেকে বাসে বিশকেক যাওয়া যায় সহজেই। তবে একটু সময় নিয়ে টিকিট কাটা ভালো। কারণ তাতে সস্তায় টিকিট পাওয়া যায়। আরও একটা কথা মনে রাখতেই হবে, অক্টোবর থেকে মার্চ মাস ইসিক কুল দেখার জন্য একেবারেই আদর্শ সময় নয়। বরফে রাস্তা ঢেকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই বছরের বাকি সময়ের মধ্যেই পরিকল্পনা করতে হবে। ভিসার জন্যও চিন্তা নেই। সহজেই ই-ভিসা পাওয়া যায় এই দেশের।
ইসিক কুলের আগে কী কী দেখবেন: বিসকেকের বিমানবন্দর থেকে শহর বেশ খানিকটা দূরে। ট্যাক্সি পাওয়া যায়। কিন্তু স্বল্প খরচে ঘোরাটা যদি কারও লক্ষ্য হয়, তাহলেও অসুবিধা নেই। লাইন ৩৮০ নম্বর বাস মাত্র আধঘণ্টা খানেকেই পৌঁছে দেয় শহরের কেন্দ্রে। আর খরচও ভারতীয় টাকায় ২০০-র মধ্যে। বাসে এই যাত্রাপথটাই দুর্দান্ত । বিসকেকের ইতিহাসের অনেকটাই ছুঁয়ে যাওয়া যায় এই পথে। তবে সেটা পুরোটাই নির্ভর করছে দিনের আলো থাকতে থাকতে এই শহরে পৌঁছোতে পারছেন কি না, তার ওপর। পরদিন সকালে বিসকেকের দ্রষ্টব্য স্থানগুলো ঝট করে দেখে নিতে হবে। আলা-তু স্কোয়ার, ন্যাশনাল হিসটোরিক্যাল মিউজিয়াম, ওশ বাজার। সেই রাতটাও বিসকেকে কাটিয়ে পরদিন রওনা হতে হবে ইসিক কুলের দিকে।
বিশকেক থেকে ইসিক কুল পৌঁছোনের রাস্তা দুটো। বাস এবং ট্রেন। ট্রেন যাত্রা নিঃসন্দেহে দুর্দান্ত। কিন্তু একটু ভিড় এবং গরমে কষ্ট হতে পারে। হালে বেশ কিছু দামি ট্রেন চলছে এই পথে। কিন্তু সেগুলোর ভাড়া বেশ বেশি। তবে বাসও না, ট্রেনও না, ইসিক কুল পৌঁছোনোর সেরা রাস্তা গাড়ি। তার কারণ বুরানা টাওয়ার। এই টাওয়ার দেখে তবে ইসিক কুলের কাছের শহর বালিকচি-তে পৌঁছোনো যায়। বিশকেক থেকে গাড়ি ঘণ্টা খানেকে পৌঁছে দেবে বুরানায়। কিরগিজস্তানের প্রাচীন শহর, এখন ধ্বংস হয়ে যাওয়া বালাসাগুনের শেষ চিহ্ন এই বুরানা টাওয়ার। পিছনে বরফ ঢাকা পাহাড়। আর টাওয়ারের পায়ের কাছে কবরস্থান। দৃশ্যটা যে কোনও পর্যটককে অন্য এক সময়ে পৌঁছে দেয়।
বুরানা থেকে গাড়িতে ঘণ্টা খানেকের পথ বালিকচি। ইসিক কুলের গেটওয়ে বলা যেতে পারে এই শহরকে। রাতে হোটেলে কাটিয়ে পরদিন সকালেই চলে যাওয়া ইসিক কুলের ধারে। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অ্যালপাইন হ্রদ এটি। তিয়ান শান পাহাড় দিয়ে বলয়ের মতো ঘেরা এই হ্রদের পারে দাঁড়ালে অভিভূত হতে হয়। তবে বালিকচি না, ইসিক কুলের ধারের সবচেয়ে আকর্ষণীয় শহর চোলপোন-আটা এবং কারাকোল। ট্যাক্সিতে বালিকচি থেকে কারাকোল পৌঁছতে লাগে ঘণ্টা দেড়েক। পথে পড়ে চোলপোন-আটা। চোলপোনের বাজার খুব বিখ্যাত। হ্রদকে ডানদিকে রেখে যে রাস্তা বালিকচি থেকে কারাকোল গিয়েছে, সেটা ধরে ট্যাক্সিতে এগোলেই দেখা হয়ে যায় হ্রদের অনেকটাই।
কারাকোল পৌঁছোতে বিকেল হয়ে যেতে পারে। পরের দিনটাও কারাকোলের বাজার দেখার জন্য বরাদ্দ রাখতেই হবে। দেশের এই চত্বরের সবচেয়ে বড় শহর কারাকোল। তারও পরের দিন আবার বালিকচি ফেরা। গাড়ির ড্রাইভারকে রাজি করিয়ে হ্রদের অন্য পাড় দিয়ে ফিরতে পারেন। সেটি তুলনায় দুর্গম এবং জনবসতিহীন। তাতে আনন্দ আরও বাড়বে। বালিকচি থেকে বিশকেক ফেরার সময় এবার ট্রেন ধরতে পারেন। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে ট্রেন যাত্রা কেউ কেউ উপভোগ করতে পারবে ষোলো আনা।
বিশকেকে শহরে প্রচুর রেস্তোরাঁ। মধ্য এশিয়ার দুর্দান্ত সব খাবার এখানে ভর্তি। লাঘমান, বেশবারমাক, সামসির মতো প্রচুর খাবার পাবেন এখানে। মাংসে অরুচি না থাকলে এই দেশের বিখ্যাত খাবার লারজুরোও খেয়ে দেখতে পারেন। যাঁরা নিরামিষ খান, তাঁরাও পছন্দমতো খাবার পেয়ে যাবেন এখানে। গ্রুপে বেড়াতে গেলে বিশকেকে চার বা ছয় বেডের ডরমেটারিতে থাকতে পারেন। মাথাপিছু ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় রাত প্রতি থেকে যেতে পারবেন। হোটেলে থাকলে রাতপিছু ঘরভাড়া হাজার দুয়ের ধরে রাখতে পারেন। মধ্য এশিয়ার এই সব দেশে থাকা বা খাবারের খরচ যতটা না বেশি, তার চেয়ে গাড়ি ভাড়া অনেকটাই বেশি। বাজেট তৈরির সময়ে সেটি মাথায় রাখবেন।