Durga Puja 2022

ভাল ভূতের দেশ! মঙ্গলগঞ্জ থেকে ঘুরে আসা যাক?

সেই নীলকুঠীতে নাকি তেঁনাদের বাস। ভাগ্য খারাপ হলে নাকি তাঁদের দেখা মেলে। এখনও গ্রামে কারও শরীরে যদি ভূত ধরলে ছাড়িয়ে দেওয়ারও লোক আছে।

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৯:৪৩
Share:

মঙ্গলগঞ্জের ভূতের বাড়ি

গ্রামের কাঁচা পথটা ধরে একটু এগিয়ে গিয়েই পৌঁছোলাম সেই নীল কুঠী। সামনে ইছামতীর ঘাটে দাঁড়িয়ে রয়েছে ছোটো দুটি নৌকা । পড়ন্ত বিকেলে নৌকা করে ইছামতীতে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে, পারমাদন জঙ্গলের চারিপাশে একবার ঘুরে দেখার অনুভুতিটা সর্গীয় শুনেছিলাম । সত্যি মাঝি ভাইয়ের ভাটিয়ালী আমার নৌকা বিহারে অন্যমাত্রা এনে দিয়েছিল । প্রায় ৩০ মিনিটের নৌকা বিহারে জানতে পারলাম গ্রামের অনেক গল্প । সেই নীলকুঠীতে নাকি তেঁনাদের বাস । ভাগ্য খারাপ হলে নাকি তাঁদের দেখা মেলে। এখনও গ্রামে কারোর শরীরে যদি ভূত ধরলে ছাড়িয়ে দেওয়ারও লোক আছে । আর এসব অশরীরীদের গল্প শুনতে নাকি বড় বড় শহর থেকে বহু মানুষ আসেন মঙ্গলগঞ্জের ভালো ভূতের দেশে। সত্যি নাম শুনেই বড় ইচ্ছে হল একবার ঘুরে দেখার এই ভালো ভুতের দেশে।

Advertisement

গল্প করতে করতে নৌকা গিয়ে লাগলো ঘাটে । মাঝি ভাই বলল এই সামনেই রয়েছে আমাদের ভালো ভূতের দেশ । যে রাস্তা দিয়ে বিকেলে অনায়াসে হেঁটে গেলাম, জঙ্গলের ভিতরের সেই রাস্তাটাই যেন আলোর অভাবে কতটা অপরিচিত । নৌকোতে যে গল্পগুলো বোকা বোকা লাগছিল কিছু সময় পর সেই গল্পগুলোই আর যেন একদমই মনে না পরুক চাইছিলাম। ভাবতে ভাবতে পৌঁছে গেলাম ভালো ভূতের দেশ । সপ্তাহান্তে, তাই থাকার জায়গা পুরো ভর্তি । কথা বললাম পর্যটকদের সঙ্গে । এরা অবশ্য নিজেদের ব্যাকপ্যাকার্স বলেন । যারা কিনা একটু অন্য রকমের পর্যটক । ব্যাগ নিয়ে নতুন কিছু দেখতে জানতে বেরিয়ে পরেন । তা ব্যাকপ্যাকাররা কি ভূতে বিশ্বাস করেন, উত্তর প্রায় একরকমই পেলাম না, ভূত আবার আছে নাকি ! কিন্তু কী বলুনতো কিছু সময়ের জন্য তাদের অস্তিত্ব বাস্তব ভেবে জঙ্গলের অন্ধকারে তাঁদের গল্প শুনতে মন্দ লাগে না । আমি যদিও এক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে একমত ।

গল্পের মাঝে ভূতেদের গল্পের মতোই এন্ট্রি নিলেন, অশোক দা (স্থানীয় বাসিন্দা) । শুরুর দিন থেকে ভালো ভূতের দেশের সব গল্পই জানেন তিনি । কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু পড়ুয়া একদিন বেড়াতে এসে প্রেমে পড়ে যায় মঙ্গলগঞ্জের । আগেও অনেকে এসেছেন, প্রেমেও হয়তো পড়েছেন কিন্তু এদের স্বপ্ন ছিল যে গ্রামে নদী আছে, জঙ্গল আছে, বর্ষায় লক্ষাধিক জোনাকি মাইগ্রেট করে, সে গ্রামে হাজার হাজার মানুষ নিয়ে আসবে । শুরু হল গ্রামের মানুষদের প্রশিক্ষণ। ধীরে ধীরে শুরু হল শহুরে পর্যটকদের আনাগোনা । একেবারে গ্রাম্য পরিবেশে গ্রামের মানুষদের আতিথিয়তায় কিছুটা সময় কাটানোই ছিল উদ্দেশ্য । আজ বছরে প্রায় তিন হাজারের বেশি মানুষ ঘুরতে যান Izifiso-র ভালো ভূতের দেশে ।

Advertisement

একসময় যে গ্রামের মানুষকে বাজার করতে ছুটে যেতে হত মাইলের পর মাইল । আজ বাড়ির পাশেই হয়েছে বাজার । যেখানে প্যাকেট বন্দী সব শহুরে খাবার, তৈরি হয়েছে নতুন রাস্তা ঘাট, উন্নত হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা । সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আজ আরও গ্রামবাসী তৈরি হচ্ছেন Izifiso-র মতো করে startup শুরু করতে । পর্যটণ যে খুব সহজে গ্রামের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে পারে মঙ্গলগঞ্জ তার জলজ্যান্ত উদাহরণ ।

গল্পের ফাঁকে অশোক দা জিজ্ঞাসা করলেন কোথায় থাকছেন, বললাম আমার বাড়ি বনগাঁতে একটু পড়েই বেড়িয়ে পড়ব। তখন একটা প্লেটে কিছু মাংসের টুকরো ওফার করলেন অশোকদা । বললেন, বাঁশ বনে ব্যাম্বু চিকেন খেয়ে দেখুন । ব্যাম্বু চিকেন খেতে খেতে অশোকদার কাছে জানতে চাইলাম যাদবপুরের সেই দাদারা কোথায় থাকেন এখানে কি তাদের দেখা পাওয়া যাবে ! অশোকদার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, গত ৫ বছরে ওরা মঙ্গলগঞ্জের মতো ১৫টির ওপর আরও গ্রামে কাজ করেছে। মৌসুনী, দোলাডাঙা, গুর্দুম এসবই নাকি আজ এমনই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতাপূর্ণ পর্যটক কেন্দ্র।

আমার মতো যারা একবার এসে রাত কাটাতে চান এই ভালো ভূতের দেশে (Izifiso Mangalganj Backpackers' Camp), তাদের যোগাযোগ নম্বর +91-8447745964 আর website link রইল www.izifiso.com/escape/mangalgunj-backpackers-camp

এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement