ভূত আসলে কী? মৃত্যুর পরের কোনও অস্তিত্ব? নাকি ভূত আসলে অতীত? যদি সেই অতীত হয় কোনও এক অন্ধকার সময়ের, তা হলে হয়ত সত্যিই তাকে ‘হন্টেড’ বলা যেতে পারে।
এই ভাবেই জন্ম নিয়েছে পৃথিবীর নানা ‘হন্টেড’ জায়গা এবং সেগুলির গল্প। তার প্রত্যেকটার সঙ্গেই জুড়ে রয়েছে কোনও না কোনও অন্ধকার ইতিহাস। ঠিক এমনই একটি জায়গা হল অস্ট্রেলিয়ার পোর্ট আর্থার। ভূত চতুর্দশীর আগে সেই গল্পটা একটু জেনে নেওয়া যাক।
ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে সহজেই জানা যায়, অস্ট্রেলিয়া দেশের ইতিহাসের অন্ধকার অধ্যায়গুলি। কী ভাবে ব্রিটেনের কারাগার হিসেবে এক সময়ে এই জায়গাটিকে ব্যবহার করা হত, কী ভাবে এই ভূখণ্ডের আদি বাসিন্দাদের ওপর নেমে আসে উপনিবেশের অভিশাপ— সব কিছুই ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে অন্ধকার গল্প হিসেবে। আর এই সব অন্ধকার পাতার একটা পাতায় বেশ মোটা অক্ষরেই লেখা থাকবে পোর্ট আর্থারের নাম।
এক দিকে তাসমান পেনিনসুলা। চোখ ধাঁধানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। তার গা ঘেঁসে চ্যাপেল, গার্ড টাওয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পোর্ট আর্থার।
নাম থেকেই আন্দাজ করা যায়, এক সময়ে এখানে ছিল বন্দর। কিন্তু বন্দরের জন্য যতটা না এই জায়গার সুনাম, তার চেয়েও বেশি দুর্নাম এখানকার জেলখানার জন্য। জেলখানায় ভূতের উৎপাতের জন্য।
ব্রিটিশরা এই এলাকায় জেলখানা তৈরির পর থেকে নাকি এখানে বহু মানুষের ওপর অত্যাচার চালানো হত। এই জেলখানায় কমপক্ষে এক হাজার মানুষের মৃত্যু কথা ইতিহাসের পাতাতেই লেখা রয়েছে।
ফলে আন্দাজ করাই যায়, এই এলাকায় আসলে কত মানুষের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। কথিত, সেই সব মৃতের অনেকেরই আত্মা নাকি ছেড়ে যেতে চায়নি এই জেলখানা চত্বর। আজও তারা এখানে ঘুরে বেড়ায়।
১৮৭৭ সালের পরে এই জেলখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার আগেই নাকি এখানে শুরু হয়ে গিয়েছিল নানা ভৌতিক কাণ্ডকারখানা। বর্তমানে এটি হয়ে উঠেছে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। এমনকি ব্যবস্থা হয়েছে ‘ঘোস্ট ট্যুর’-এরও।
নিজের দেওয়ালের আড়ালে কি পোর্ট আর্থার আজও লুকিয়ে রেখেছে কিছু অতৃপ্ত আত্মাকে? নাকি আসলে ঔপনিবেশিকতার বিশ্রী ‘ভূত’ এই জেলখানার মাটির তলায় চাপা পড়ে রয়েছে? আর রাত নামলে সেই অতীতই মাটি খুঁড়ে বেরিয়ে আসতে চায়? প্রশ্নের উত্তরটা সাধারণ পর্যটক থেকে ঐতিসাকিক— সবাইকেই ভয় পাইয়ে দেয়। এই প্রতিবেদন 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।