প্রতীকী চিত্র
ঘর বাঁধার স্বপ্ন কার না থাকে? নিজের ঘর, নিজের বাড়ি, মাথা গোঁজার ঠাঁই। যে ঠাঁই পাওয়ার লক্ষ্যে জীবনের সমস্ত সঞ্চয় উজাড় করে দেন মধ্যবিত্ত। স্বপ্ন সত্যি করার আশা নিয়ে চলতে থাকে খোঁজ। দ্বারস্থ হতে হয় প্রোমোটার বা কোনও রিয়েল এস্টেট সংস্থার। অথচ স্বপ্ন পূরণের এই সফরে অনেক সময়েই বাধ সাধে নানা সমস্যা। এমনকি, অসাধু ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে বসেন অনেকেই!
আসলে ফ্ল্যাট কেনার স্বপ্ন দেখা যতটা সহজ, তা কেনা এবং সেই সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাওয়া কিন্তু ততটাও সহজ নয়। তাড়াহুড়ো করে বিনিয়োগ করলে তার খেসারতও দিতে হতে পারে। তাই সমস্যা এড়াতে চাইলে ফ্ল্যাট কেনার আগে বেশ কয়েকটি বিষয় যাচাই করে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
বাজেট
আসলে যে কোনও কিছু কেনার আগেই কতটা খরচ করা সম্ভব, সেটা ঠিক করে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে তো বটেই। সেই কারণে প্রাথমিক স্তরে বাজেট ঠিক করে নিয়ে সেই অনুযায়ী ফ্ল্যাট খুঁজুন।
ফ্ল্যাটের সঠিক পরিমাপ
বাংলায় একটি প্রবাদ রয়েছে— ‘ছিল রুমাল, হয়ে গেল বেড়াল’। অর্থাৎ দেখলেন এক। কেনার পরে হাতে পেলেন আর এক রকম। তাই কেনার আগে অবশ্যই ফ্ল্যাটের সঠিক পরিমাপ করে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। দেখে নিন প্রোমোটার বা রিয়েল এস্টেট সংস্থা আপনাকে যে ফ্ল্যাটটি দিচ্ছে, তার পরিমাপ সে সুপার বিল্ট এরিয়া হিসাবে ধরেছে না কি কার্পেট এরিয়া হিসাবে। সুপার বিল্ট এবং কার্পেট এরিয়ার মধ্যে কিন্তু বিস্তর ফারাক। রিয়েল এস্টেট জগতের পরিভাষা অনুসারে, সুপার বিল্ট এরিয়া থেকে এক ঝটকায় ২৫ শতাংশ বাদ দিলে যা দাঁড়ায়, সেটাই কার্পেট এরিয়া। কোনও কোনও ক্ষেত্রে সেই অঙ্কটা ৩০ শতাংশে গিয়ে ঠেকে। আর কারচুপির সুযোগও এখানেই।
কী কী রয়েছে সুপার বিল্ট এরিয়ায়
মনে রাখবেন, সুপার বিল্ট এরিয়ার মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাটের সিঁড়ি থেকে সুইমিং পুল, লিফট্ থেকে কমন এরিয়া, হলঘর সবটাই। এমনকি ফ্ল্যাটের কমন দেওয়ালও এর মধ্যে পড়ে। বহু ক্ষেত্রে এই কমন এলাকাগুলির জন্য প্রত্যেক ক্রেতার থেকেই টাকা নেন প্রোমোটাররা। যা আদতে আইন-বিরুদ্ধ।
প্রোমোটার কেমন?
এখনকার যুগে নতুন ফ্ল্যাট কিনতে হলে প্রোমোটারের সঙ্গে যোগাযোগ করা ছাড়া উপায় থাকে না। ফ্ল্যাট কেনা চূড়ান্ত করার আগে অবশ্যই এক বার প্রোমোটারের সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে নিন। তাঁর দায়িত্বে থাকা অন্য প্রোজেক্টগুলির বিষয়েও জানুন। প্রয়োজনে ঘুরে দেখে আসুন। শুধু তা-ই নয়, ওই প্রোমোটার মানুষ হিসাবে কেমন, তা-ও জেনে রাখা জরুরি।
ইতিহাস যাচাই
ফ্ল্যাট ঘিরে প্রতারণার বিভিন্ন দিক রয়েছে। যে ফ্ল্যাটটি আপনি কিনছেন, তা কার নামে রয়েছে, অথবা যে জমিতে ফ্ল্যাটটি রয়েছে, তার অতীত ইতিহাস কী— এই সমস্ত বিষয়গুলি সম্পর্কে আগে থেকে খোঁজখবর করুন। প্রয়োজনে উকিলের দ্বারস্থ হন। সময় করে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জেনে নিন, ওই জায়গাটির মালিকানা কাদের বা কোনও সমস্যা রয়েছে কিনা। দেখে নিন সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির বিক্রেতা, নির্মাতা কে বা কারা।
স্বত্ব যাচাই
ফ্ল্যাট কেনার আগে অবশ্যই বিক্রেতার স্বত্ব যাচাই করে দেখে নিন। সহজ করে বললে, জেনে নিন ওই জমি সংশ্লিষ্ট রিয়েল এস্টেট সংস্থা বা প্রোমোটারের কাছে কী ভাবে এসেছে। কোনও মতেই সার্চিং করাতে ভুলে যাবেন না। যৌথ উদ্যোগের ক্ষেত্রে চুক্তিপত্র যাচাই করে নিন। আসল দলিল দেখুন। পাশাপাশি, জমির পরচা অথবা বিএলআরও অফিস থেকে জমির চরিত্র সম্পর্কে অন্তত এক বার খোঁজ নিয়ে আসুন। সেই সঙ্গে খাজনা ও মিউটেশনের রসিদের কপি সংগ্রহ করে তা যাচাই করে নিন।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উপভোক্তাদের সুবিধার্থে বিভিন্ন আইন আনা হয়েছে। জমি, বাড়ি কেনা-বেচা সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় আইনে এই সমস্ত দিকগুলি নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে। যদিও সেই আইনের তোয়াক্কা না করে বহু জায়গায় চলছে ইমারত তৈরি। এ সব সমস্যা এড়াতে ফ্ল্যাট কেনার সময়ে অবশ্যই কোনও নামী রিয়েল এস্টেট সংস্থার দ্বারস্থ হোন।
স্বপ্নের বাড়ি খুঁজছেন? মার্লিন গ্রুপ রয়েছে তো। বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন পাশের লিঙ্কে — https://www.merlinprojects.com/
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।