মধ্যবিত্তের কাছে বাড়ি কেনা মানেই স্বপ্নপূরণ। তবে বাড়ি কিনলেই তো আর হল না! বিভিন্ন কারণে খরচ আরও বেড়ে যায়। যার মধ্যে একটা বড় অংশ হল কর। আসলে কোনও সম্পত্তি কেনার সময়ে যেমন বিভিন্ন আইনি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি, ঠিক তেমনই জরুরি বিভিন্ন কর সংক্রান্ত বিষয়েও নজর দেওয়া। তবে মনে রাখবেন, কোনও সম্পত্তি কিনলে যেমন কর বাবদ খরচ বাড়তে পারে, ঠিক তেমনই বাড়ি কেনার পরে বেশ কিছু ক্ষেত্রে কর সাশ্রয় করাও সম্ভব।
কোন কোন ক্ষেত্রে আপনি করে ছাড় পেতে পারেন? দেখে নিন এক নজরে।
পরিষেবা কর: যদি কোনও ব্যক্তি একটি নির্মীয়মাণ সম্পত্তি অর্থাৎ নতুন ফ্ল্যাট কেনেন, তা হলে তিনি সংশ্লিষ্ট জিএসটি বাবদ পরিষেবা কর দিতে দায়বদ্ধ থাকবেন। ফ্ল্যাটটি যদি ৪৫ লক্ষ টাকার কম কিংবা ২,০০০ বর্গফুটের কম হয়, তা হলে কর বাবদ ফ্ল্যাটের মূল্যের ১ শতাংশ ধার্য করা হয়। যদি ফ্ল্যাটের দাম ৪৫ লক্ষ টাকার বেশি হয়, তা হলে সংশ্লিষ্ট ক্রেতাকে ফ্ল্যাটের মূল্যের ৫ শতাংশ হারে জিএসটি জমা করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, পুরনো ফ্ল্যাট কেনার জন্য এই কর প্রযোজ্য নয়।
স্ট্যাম্প ডিউটি: কোনও সম্পত্তি লেনদেনের উপরে সরকার কর্তৃক আরোপিত করকে স্ট্যাম্প ডিউটি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। রেজিস্ট্রেশনের সময়ে সংশ্লিষ্ট ক্রেতার নির্ধারিত হারে স্ট্যাম্প ডিউটি জমা করা বাধ্যতামূলক। সেল ডিড-এ উল্লিখিত সম্পত্তির মূল্য যদি সংশ্লিষ্ট এলাকার জন্য সরকার নির্ধারিত মূল্যের থেকে কম হয়, তবে স্ট্যাম্প ডিউটি ধার্য হবে সরকারি নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী। শহরাঞ্চলে সম্পত্তির উপর স্ট্যাম্প ডিউটি ধার্য হয় ৪ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশ। এই স্ট্যাম্প ডিউটির হার ঠিক করে রাজ্য সরকার। অনেক ক্ষেত্রে অঞ্চল ভেদে তা পরিবর্তিত হতে পারে। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ-সহ অনেক রাজ্যেই মহিলা ক্রেতাদের ১ শতাংশ অতিরিক্ত ছাড় দেওয়া হয়ে থাকে।
মনে রাখবেন, কোনও ফ্ল্যাট কেনার পরে দ্রুত রেজিস্ট্রেশন করা বাঞ্ছনীয়। না হলে সরকারি মূল্যায়ন বৃদ্ধির কারণে স্ট্যাম্প ডিউটিও বেড়ে যেতে পারে।
ডিম্ড ইনকাম কর: যদি কোনও ব্যক্তির একাধিক বাড়ি বা ফ্ল্যাট থাকে, তা হলে একটি বাদে অন্যগুলি ভাড়া দেওয়া না হলেও তার উপযুক্ত (ফেয়ার) ভাড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। তার উপর প্রযোজ্য হারে কর দিতে হবে।
সম্পত্তি কর: কোনও ব্যক্তির একাধিক সম্পত্তি থাকলে, একটি সম্পত্তি বাদ দিয়ে, বাকিগুলির ক্ষেত্রে মোট মূল্য ৩০ লক্ষ টাকার বেশি হলে, তার উপরেও ১ শতাংশ সম্পত্তি কর দিতে হতে পারে। অবশ্য ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় রয়েছে।
মূলধনী লাভকর: কোনও সম্পত্তি ৩ বছর ধরে রাখার পরে বিক্রি করা হলে এবং তাতে লাভ থাকলে, তার উপরে ২০ শতাংশ দীর্ঘকালীন মূলধনী লাভকর ধার্য করা হয়। আর তিন বছর হওয়ার আগেই সেই সম্পত্তি বিক্রি করে লাভ হলে, স্বল্পকালীন মূলধনী লাভের আওতায় পড়ে। সেই ক্ষেত্রে ওই আয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অন্যান্য সূত্র থেকে আসা আয়ের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং প্রযোজ্য হারে কর দিতে হয়।
গৃহঋণে করছাড়: ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে ফ্ল্যাট বা বাড়ি কিনলে, শর্তসাপেক্ষে বাৎসরিক ধার শোধ বাবদ ছাড় পাওয়া যায় ৮০সি ধারায়। আসল শোধের জন্য এক বছরে সর্বাধিক এক লক্ষ টাকা ছাড় পাওয়া যেতে পারে। তা ছাড়াও জীবনবিমা, পিএফ, পিপিএফ সব মিলিয়ে যে দেড় লক্ষ টাকা ছাড় মেলে, তার মধ্যে গৃহঋণের আসলকেও ধরা হয়। পাশাপাশি, কর ছাড়ের সুবিধা মেলে সুদ শোধের ক্ষেত্রেও। ধারা ২৪ অনুযায়ী, সুদ বাবদ বছরে সর্বাধিক দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর ছাড়ের সুবিধা মিলতে পারে। যদিও এই উভয় ক্ষেত্রেই এই সুবিধাগুলি পেতে বেশ কয়েকটি শর্তপূরণ করতে হয়।
স্বপ্নের বাড়ি খুঁজছেন? মার্লিন গ্রুপ রয়েছে তো। বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন পাশের লিঙ্কে — https://www.merlinprojects.com/
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।