মহাদেবের বুকের উপর দণ্ডায়মান মহাকালী – কালীর এই রূপের সঙ্গেই পরিচিত আমরা। কথিত আছে, প্রলয় থামাতে কালীকে নিরস্ত করার জন্য তাঁর পায়ের নীচে শুয়ে পড়েছিলেন মহাদেব। এই মূর্তি প্রকৃতি আর পুরুষের ভারসাম্যের প্রতীক।
কিন্তু, এর বিপরীত মূর্তি দেখা যায় মধ্যমগ্রামের মহাকাল মন্দিরে। মহাদেব এখানে চতুর্ভুজ, নীলবর্ণ এবং তিনি দক্ষিণাকালিকার দেহে পা রেখে দণ্ডায়মান - অর্থাৎ সাধারণ কালীমূর্তির সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান।
তন্ত্রশাস্ত্রের "নিগম" পদ্ধতির অনুসারে, এখানে প্রকৃতি (দেবী কালী) পুরুষের(মহাদেব) নিয়ন্ত্রণাধীন বলে ধরা হয়।
জানা যায়, আজ থেকে আনুমানিক অর্ধ শতাব্দী পূর্বে মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতার বাড়ীতে একটি এইরকম ছবি-সম্বলিত ক্যালেণ্ডার ঝোড়ো হাওয়ায় উড়ে এসে পড়ে। ক্যালেন্ডারটি যে কোথা থেকে উড়ে আসে কিছুই জানা যায় না।
কিন্তু, মূর্তিটি বিস্ময়কর বোধ হয় তাঁর। এরপর থেকেই স্বপ্নে এই মূর্তি প্রায়ই দেখতে পান তিনি। শেষ পর্যন্ত তিনি মন্দির প্রতিষ্ঠা করে এই মূর্তির পূজা শুরু করেন।
এরপর থেকেই এরকম ভিন্নধর্মী ব্যতিক্রমী মহাকাল মূর্তির পূজা আরম্ভ হয়। এই মূর্তির পূজা ভারতের মাত্র তিন জায়গায় প্রচলিত- বেনারস, উজ্জয়িনী, এবং এই মধ্যমগ্রাম, যার মধ্যে পূর্ণাঙ্গ মূর্তি একমাত্র এখানেই অবস্থিত। মূল মন্দিরটির গঠন একেবারেই সাদামাটা।
মন্দির চত্বরে দুইটি পৃথক মন্দিরে হনুমানজির মূর্তি ও শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত। প্রতি অমাবস্যায় ভোগ হয় ঠাকুরের। হয় নিয়মিত হোম-যজ্ঞ। বিশালদেহী মহাবাহন "ভৈরব"- কে বাবার প্রসাদী সন্দেশ ভোগ দিয়ে, নিষ্ঠাভরে নিত্যপূজা হয় এই মন্দিরে।
মধ্যমগ্রাম চৌমাথা থেকে বাদু রোড ধরে মিনিট তিনেক হাঁটলেই পাওয়া যাবে এই মূর্তি। সকালে ১০-১.৩০টা এবং বিকেলে ৫-৮ টা খোলা থাকে মন্দির। এই সময়ে গেলেই এই মন্দিরে দর্শন করা যাবে এই বিস্ময়কর দেবমূর্তি। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।