বাগবাজারের সিদ্ধেশ্বরী কালী
সেকালের কলকাতায় বাগবাজার ও কুমোরটুলি এলাকায় তখন আজকের জনবসতি ও কোলাহল থেকে ঢের দূরে। চার দিক জঙ্গলে ঘেরা। মানুষ যেতে ভয় পেত। সেখানেই ছিল এক প্রাচীন কালী-থান। শোনা যায়, সেই মন্দিরই এখনকার বাগবাজারের সিদ্ধেশরী মন্দির। পথচলতি মানুষ যেখানে এক বার হলেও মাথা ঠেকিয়ে যান দেবীর পায়ে। কলকাতাবাসীর কাছে এই মন্দিরের এক আলাদা মাহাত্ম্য। একে ঘিরেও আছে অসংখ্য কাহিনি।
এখন যেখানে মন্দির, তার সামনে দিয়ে বয়ে যেত হুগলি নদী। সেই নদী আজ অনেকটা পশ্চিমের দিকে সরে গিয়েছে। শোনা যায়, হিমালয়ে তপস্যারত কালীবর নামে এক সন্ন্যাসী এক সময়ে স্বপ্নাদেশ পান, দক্ষিণে সতীর একটি অঙ্গ পড়েছে। তাকেই খুঁজে বার করে সেখানে দেবীর প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সাধক কালীবর নদীর পার বরাবর হাঁটতে হাঁটতে গঙ্গার পাড়ে এক জঙ্গলে এসে দেখতে পান, একটি ঠাকুরের বেদী, কিছু ফুল ও কোনও প্রাণীর হাড়গোড় পড়ে আছে। কথিত, এই স্থানটি আসলে ছিল সেকালের ডাকাতদের আস্তানা। ডাকাতি করার আগে দেবীকে তুষ্ট করতে এখানে বলি দিত তারা। সাধক কালীবর ওই জায়গাতেই একটি হোগলা পাতার কুটির গড়ে তপস্যা শুরু করেন। সেখানেই সিদ্ধিলাভ করেন তিনি
কথিত, দেবী ওই সাধককে বর্তমান মন্দিরের এই বিগ্রহ রূপেই দর্শন দেন। মা কালী যে মূর্তিতে দেখা দিয়েছিলেন, সেই মূর্তিই প্রতিষ্ঠা করেন কালীবর। এর পরে দেবী মূর্তির ভার দুই কাপালিকের হাতে সমর্পণ করে দেন। পরবর্তীতে কুমোরটুলির গোবিন্দ মিত্রের হাতে নির্মিত হয় এক মন্দির। সেখানেই দেবীর অধিষ্ঠান। এখানে স্বয়ং শ্রীরামকৃষ্ণ এসেছেন বহু বার। নাট্যকার গিরিশ ঘোষ এসে তাঁর নাটকের লেখার প্রতিটি পাতা দেবীর পায়ে সমর্পণ করতেন। তিনিই ভালবেসে মায়ের নাম রেখেছিলেন 'উত্তর কলকাতার গিন্নিমা'। সেই থেকে দেবী এই নামেই পরিচিত ভক্তদের অনেকের কাছে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ