তাঁরা আছেন কি নেই, এই নিয়ে জল্পনা চিরকালের। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, কেউ অবিশ্বাসে উড়িয়ে দেন। কিন্তু, যারা নিজেরা অনুভব করেছে তাঁদের অস্তিত্ব, তাদের পক্ষে অস্বীকার করা অসম্ভব। আপনিও যদি নিজে অনুভব করতে চান তাঁদের অস্তিত্ব, তাহলে চলে যেতে পারেন বাংলার এইসব জায়গায়।
১। কার্সিয়াং এর ডো হিল: দার্জিলিং থেকে ৩০কিলোমিটারের মধ্যে পাহাড়ের পাদদেশে বড় বড় পাইন এবং অর্কিডের জঙ্গল ঘেরা অঞ্চলটি যে কোনও প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের ভাল লাগতে বাধ্য। তবে এই ডো হিল নিয়ে অনেক ভৌতিক কাহিনি শোনা যায় ।
শোনা যায় এক কাঠুরিয়া এই জঙ্গলে কাঠ কাটতে গিয়ে দেখেন গলা কাটা এক শিশু হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করেই যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। এছাড়াও স্থানীয় মানুষজনদের মতে, এই জঙ্গলে প্রায়ই ছাই রঙা কাপড় পরিহিতা এক মহিলাকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।
এই জঙ্গল এতটাই অভিশপ্ত যে পর্যটকরা এখানে এলে, তাঁদের স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলা অথবা আত্মহত্যা করার মত ঘটনাও ঘটেছে। এখানকার শতাব্দী প্রাচীন স্কুল ভিক্টোরিয়া বয়েস হাই স্কুলটিতেও অশরীরী কার্যকলাপের প্রমাণ মিলেছে । এমনকি ডো হিল রোড এবং ফরেস্ট অফিসের রাস্তাটি ডেথ রোড হিসেবে পরিচিত ।
২। হলদিয়ার ডুব পুকুর: আঠার শতকে মহিষাদল রাজবাড়ির এক ধাত্রী ডাইনি দ্বারা আক্রান্ত হন। রানির সন্তান প্রসবের সময় তার শিশুকে ডাইনিরা গ্রাস করে এবং ধাত্রীকে বেঁধে টেনে নিয়ে যায় মহিষাদলের অদূরে একটি গভীর জঙ্গলে । তারপর এক গভীর রাতে হলদি নদীর তীরে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
শোনা যায়, এই ঘটনার পর থেকে প্রত্যেক ২৫ বছর পর-পর ভূত চতুর্দশীর রাতে ডুব পুকুর থেকে এক নারীর কণ্ঠস্বর ভেসে আসে। আর এই আওয়াজ শুনে যারা যারা এই পুকুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে, দিওয়ালির দিন সকালে এই পুকুরে তাদের প্রত্যেকের মৃতদেহ উদ্ধার হয় । স্বাভাবিকভাবেই, সাধারণ মানুষের মনে আজও ডুব পুকুরের শঙ্কা রয়ে গিয়েছে।
৩। আসানসোলের বেনাগ্রাম: আপনি বেনাগ্রামে গেলে দেখতে পাবেন বহু পরিত্যক্ত বাড়ি, চাষের ক্ষেত, এমনকি কারখানাও রয়েছে, তবুও এই গ্রামটি এক্কেবারে জনশূন্য। কারণ এই সম্পূর্ণ গ্রামটি ভৌতিক গ্রাম হিসেবে পরিচিত । স্থানীয় মানুষদের মতে একসময় এই গ্রামটি দুষ্কৃতীদের আখড়া ছিল।
এই দুষ্কৃতীরা গ্রামের সাধারণ মানুষদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করে কাছের রেল লাইনে কবর দিয়ে দিত । এই ভাবে দুষ্কৃতীরা গোটা গ্রামে হত্যা লীলা চালায় । এই ঘটনার পর থেকেই রাতে এখান দিয়ে যাতায়াত করলে আজও অদ্ভুত কিছু শব্দ এবং আওয়াজ ভেসে যায় ।
৪। মুর্শিদাবাদের জাফরগঞ্জ সিমেট্রি: ঐতিহাসিক স্থান মুর্শিদাবাদের ইতিহাস চৰ্চা করলে জানা যায় এই সিমেট্রি একসময় 'কিচেন গার্ডেন' হিসেবে পরিচিত ছিল । পরবর্তী কালে বাংলার বিখ্যাত নবাবদের এখানেই সমাধি দেওয়া হয়।
এই কবরস্থানটি বর্তমানে মুর্শিদাবাদের বিখ্যাত পর্যটনস্থান গুলির মধ্যে অন্যতম হলেও রাতে এই স্থানে ভ্রমণ করলে আপনিও শিহরিত হবেন । স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস, মধ্যরাতে নবাব নাজিম এর মৃত পত্নী আজও তাঁর ভালবাসার সন্ধানে ঘুরে বেড়ান ।
৫। খড়দহের পরিত্যক্ত বাড়ি: খড়দহে হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত ২০০ বছর প্রাচীন এই বাড়িটি একসময় ব্রিটিশ ফায়ার ব্রিগেডের অফিস ছিল । স্থানীয় মানুষরা বেশ কিছু বছর ধরে কিছু অদ্ভুত ক্রিয়াকলাপ অনুভব করেন এখানে, যেমন হঠাৎ করে ঠাণ্ডা বাতাস বয়ে যাওয়া কিংবা হঠাৎ করে কিছু পড়ে যাওয়া, এমনকি কান্নার আওয়াজ পর্যন্ত শুনতে পাওয়া যায়। তাই রাত্রিবেলা কেউই সচরাচর এই এলাকার আশেপাশেও যেতে চান না। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।