কাপাসিয়া কালী
কলকাতা সংলগ্ন বারাসতের কালীপুজো বাংলা জুড়ে প্রসিদ্ধ। এখানে চার দিকে বিভিন্ন ক্লাবের থিমের উদযাপনের আড়ালে আছে এমন কিছু পুজো, যেখানে দীপাণ্বিতা অমাবস্যায় ভক্তদের ঢল নামে। বারাসাতের মধ্যমগ্রামে কাপাসিয়া কালীমন্দির যেমন। কথিত, এখানে দেবী আজ পর্যন্ত কাউকেই খালি হাতে ফেরাননি। যে যা মানত করেন, সব মনস্কামনাই পূরণ করেন তিনি। এই কাপাসিয়া কালীকে কে এবং কবে প্রতিষ্ঠা করেছিল, তার কোনও ব্যাখ্যা নেই কোথাও। কেউ বলতে পারেন না সে কথা। এক সময়ে এই অঞ্চল ছিল গভীর জঙ্গলে পরিপূর্ণ। সেখানেই বহু বছর ধরে ছিল দেবীর অধিষ্ঠান। ছিল না কোনও মন্দির।
এখনকার মন্দিরের প্রধান পুরোহিত অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় আনন্দবাজার অনলাইনকে জানান এক নজরকাড়া তথ্য। মন্দির সংলগ্ন কাপাসিয়া গ্রামটি মুসলিম অধ্যুষিত। এখানে মুসলিমরাই মা কালীর ও তাঁর মন্দিরের সেবাযত্ন করতেন। ১৯৬২ সালে চার-পাঁচ ঘর হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ এখানে বসবাস শুরু করলে মুসলিমরা তাঁদের হাতেই এই মন্দিরের দায়ভার তুলে দেন। আগে নাকি প্রত্যেক বছর পুজোর সময়ে কলকাতা থেকে গরুর গাড়ি চড়ে পুরোহিতরা আসতেন এখানে পুজো করতে। তখন এই চত্বর ছিল ঘন জঙ্গলে ঢাকা। সেই জঙ্গল পরিষ্কার করে পুজোর আয়োজন করা হত। রাতভর পুজো শেষে তাঁরা আবার কলকাতায় ফিরে যেতেন। কথিত, আসল মূর্তিটি কোনও এক সময়ে চুরি হয়ে যায়। পরে আবার পাথরের মূর্তি স্থাপন করে গ্রামের সকলের সহায়তায় মন্দির গড়ে পুজো শুরু হয়।
মন্দির নির্মাণের সময়ে ভিত খুঁড়তে গিয়ে উঠে আসে বহু প্রাচীন কোনও মন্দিরের ইটের অংশবিশেষ। তার থেকেই অনুমান করা হয়, এই মন্দির বহু বছর প্রাচীন। সেই ইট সংগ্রহ করে এখনও মন্দিরেই সযত্নে রাখা আছে।
শোনা যায়, বহু অলৌকিক ঘটনারও সাক্ষী এই কাপাসিয়া মন্দির। শয়ে শয়ে ভক্ত তাই আজও এখানে ছুটে আসেন নিজের মনস্কামনা পূরণে। সাম্প্রদায়িক মেলবন্ধনের জীবন্ত সাক্ষী হয়ে রয়ে গিয়েছে কাপাসিয়া কালীর পুজো।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ