দক্ষ রাজার অমতে মহাদেবকে বিয়ে করেছিলেন দেবী সতী। প্রতিশোধ নিতে মরিয়া রাজা দক্ষ একটি যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। যজ্ঞের অনুষ্ঠানে মহাদেবকে অপমান করলে দেবী সতী স্বামীর অপমান সহ্য করতে না পেরে যজ্ঞের আগুনে নিজেকেই আহুতি দেন।
এতেই মহাক্রোধে উন্মত্ত হয়ে ওঠেন দেবাদিদেব মহাদেব। যজ্ঞ ভেঙ্গে দেন শিব। সতীর দেহ নিয়ে প্রচণ্ড প্রলয় নৃত্য করতে থাকেন দেবাদিদেব।
পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার ভয়ে তাঁকে থামাতে উদ্যত হন ভগবান বিষ্ণু। প্রলয় থামাতে, সুদর্শন চক্র পাঠিয়ে দেন তিনি।
এই সুদর্শন চক্রের দ্বারা দেবীর দেহ ৫১ খণ্ডে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এইসব জায়গাকেই সতীপীঠ বলা হয়। সতীর ৫১ পীঠ হিন্দু ধর্মে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও পরম পবিত্র জায়গা বলে বিবেচিত হয়।
হিন্দুদের এই পবিত্র ৫১ পীঠের তিনটি কিন্তু অধুনা পাকিস্তানে। পাকিস্তানেই ছড়িয়ে আছে মরুতীর্থ হিংলাজসহ কয়েকটি প্রসিদ্ধ শক্তিপীঠ।
১। হিঙ্গুলা(হিংলাজ)— পুরাণ অনুযায়ী এখানে সতীর মন বা মস্তিষ্ক পড়েছিল। পাকিস্তানের করাচি থেকে ১২৫ কিলোমিটার দূরে এখানে দেবী দুর্গার নাম কোটারি। ভয়ঙ্কর তৃতীয় নয়নের জন্য শিব এখানে ভীমলোচন।
১৯৬০-এর আগে পর্যন্ত হিংলাজ তীর্থ অনেক বাঙালির কাছেই ছিল অচেনা। ১৯৫৯-এ বেশিরভাগ বাঙালি হিংলাজ তীর্থ সম্পর্কে জানল উত্তমকুমার-বিকাশ রায়ের “মরুতীর্থ হিংলাজ” ছবির হাত ধরে।
বালুচিস্তানের রুক্ষ মরুপ্রান্তরে নিঃসঙ্গ এক হিন্দু তীর্থ, হিংলাজ। বহু প্রাচীনকাল থেকেই দেবী এখানে কোট্টরী ও ভৈরব ভীমলোচন রূপে পূজিত হন।
স্থানীয়রা বলেন হিংলাজ দেবী। এই মন্দিরের নামেই গোটা গ্রামের নাম হিংলাজ। মূল সংস্কৃত শব্দটি হল "হিঙ্গুলা"৷ পুরাণ মতে, এই বালুচিস্তানের হিংলাজেই পড়েছিল সতীর ব্রহ্মরন্ধ্র।
মন্দিরের কাছে আছে একটি কুণ্ড, কুণ্ডের মধ্যে অবিরাম ফুটতে থাকে কাদা মাটি। সেই ফুটন্ত কুণ্ডের কাছে এসে অন্তর থেকে নিজের পাপের কথা বললে নাকি ঘটে পাপমুক্তি।
কথিত আছে, রাবণ যেহেতু ব্রাহ্মণ ছিলেন, তাই রাবণ বধের পর এই হিংলাজে এসেই দীর্ঘদিন ধরে তপস্যা করে পাপস্খালন করেছিলেন স্বয়ং রামচন্দ্র।
২। করবীর/সর্করারে- এই হিন্দুতীর্থও পাকিস্তানে। এখানে গেলে বলতে হয় 'জয় কালী করাচিওয়ালি'। করাচির করবীপুর সিন্ধ প্রদেশে পড়ে। এখানে সতীর তিনটি নয়ন পড়েছিল। দেবী এখানে মহিষমর্দিনী রূপে পূজিতা হন। শিবের অধিষ্ঠান ক্রোধীশ নামে।
৩। ইয়ানাস্থানা- এই শক্তিপীঠে সতীর চিবুক পড়েছিল। বর্তমান করাচির কাছে পুণ্যভূমিতে দেবীর নাম ভ্রমরী এবং চিবুকা। শিবের নাম বিক্রকটাক্ষ এবং সর্বসিদ্ধিশ। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।