প্রতীকী চিত্র
কখনও বেজে উঠছে সেতার বা সরোদ। জমিদারি আভিজাত্যের আনাচকানাচে ঝঙ্কার তুলছে সুরের মূর্চ্ছনা। কখনও সাতমহলা বাড়ি জুড়ে আস্ত এক রূপকথার জগত। কখনও বা মনের গহীনে আলো-আঁধারির খেলা। অন্তঃপুরে কারও প্রবেশ নিষেধ। সেখানে চলে শুধু জমিদার বাড়ির নিজস্ব নিয়ম। যার বেড়াজালে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যায় কিশোরী থেকে তরুণী, নববিবাহিতা অথবা স্বপ্নের পুরুষকে না পাওয়া নিঃসঙ্গ রমণী।
বাড়ির ভিতরে প্রতিনিয়ত চাওয়া-পাওয়ার হাজারো হিসেবনিকেশ। মনোকষ্ট, মনোবেদনা তার নিত্যসঙ্গী। অথচ বাহ্যিক আড়ম্বরের জৌলুসে সাত মহলা বাড়ি যখন দুর্গাপুজোর আয়োজন করে, তাতে এসে সমবেত হয় বৃহৎ পরিবারের সকল সদস্য। আপাতদৃষ্টিতে বোঝার উপায় নেই, কত না-বলা কথার আখ্যান রচিত হচ্ছে এই জমিদার বাড়ির অন্তঃপুরে। যুগ যুগ ধরে বিলাসে, সম্পদে এবং আভিজাত্যে মোড়া জমিদার বাড়ির সেই অন্দর-কাহিনি যদি সকলের সামনে হাটখোলা হয়ে পড়ে? অন্তঃপুরে সেই আড়ালে থাকা কাহিনিরাই সিংহী পার্ক সর্বজনীনের এ বারের থিম।
শিল্পী প্রদীপ রুদ্র পালের ভাবনায় এই অভিনব প্রয়াস। আবহ সঙ্গীতে যার যুগলবন্দি করেছেন পণ্ডিত শুভেন চট্টোপাধ্যায়। আনন্দবাজার অনলাইন কে শিল্পী জানান, শারদীয়ার আকাশে-বাতাসে তিনি এঁকে দিতে চেয়েছেন এক অন্য রকম দুর্গা পূজার ছবি। তার স্মৃতিকোঠায় বার বার ফিরে ফিরে আসবে জমিদার বাড়ির পুজো। ‘সাতমহলার অন্তঃপুরে’ অতীতের অলিন্দে কখনও খুঁজে পাওয়া যাবে সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের বাড়ি,শোভাবাজার রাজবাড়ি, বসাক বাড়ি, মিত্র বাড়ির স্থাপত্যের ছায়া। অসম, ত্রিপুরা ও তারকেশ্বরের বাঁশ ও বেতের কাজে স্মৃতি থেকে উঁকি দেবে জরাজীর্ণ আসবাবের দল- বিলিতি ঘড়ি,আরামকেদারা, মোমবাতিতে সাজানো ঝাড়বাতি, আলমারি, ড্রেসিং টেবিল ইত্যাদি। অতীতের কুঠুরি থেকে লোহার ঢালাইয়ে সাজানো বারান্দার কারুকার্য বেতের সাবলীল সৌকর্যে ধরে রাখছেন শিল্পী।
গড়িয়াহাট মোড়ে বহু বছরের পুরনো এই পুজো মণ্ডপের দেখা পাবেন গড়িয়াহাট থেকে বালিগঞ্জ ফাঁড়ির দিকে যাওয়ার পথে বাঁদিকের গলিতে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।