এক মিষ্টি প্রেমকাহিনি এবং নরবলির ঘটনা কি কখনও একইসঙ্গে ঘটতে পারে?
পারে এবং এই দুই ঘটনারই সাক্ষী বর্ধমানের বিদ্যাসুন্দর কালী। মায়ের এই নাম অবশ্য দেওয়া হয়েছে অনেক পরে।
বর্ধমান শহরের দামোদর তীরবর্তী তেজগঞ্জ গ্রামে ছিল এক কালীমন্দির। তখন বর্ধমানের মহারাজা তেজচাঁদ। কথিত, সেই সময়ে যারা অন্যায়-অত্যাচার করত, তাদের সকলকে মন্দিরের সামনে হাড়িকাঠে বলি দেওয়া হত।
নরবলি দেওয়া হত বলে এই মা কালী দক্ষিণ মশানকালী নামে পরিচিত ছিলেন। শোনা যায়, বলি হওয়া অভিশপ্ত আত্মারা আজও নাকি এখানে ঘুরে বেড়ায়।
সেই সময়ে বর্ধমান রাজবাড়ির পূজারী ছিলেন সুন্দর নামে এক ব্যক্তি। তিনিই কালীপুজো করতেন। পুজোর জন্য মালা নিয়ে আসতেন মালিনী মাসি। এক দিন সুন্দর মালিনী মাসিকে জিজ্ঞাসা করলেন, কে রোজ এত সুন্দর মালা গেঁথে দেন। তাঁকে দেখতে চান তিনি।
মালিনী মাসি বলেন রোজ রাজকন্যা বিদ্যা নিজে হাতে এই মালা গাঁথেন। তখন থেকেই পূজারী রাজকন্যাকে একটি বার দেখার জন্য ছটফট করতে থাকেন। মালিনী মাসি বলেন, তাঁর সঙ্গে দেখা করা সম্ভব নয়, কারণ তিনি রাজকুমারী।
পূজারীও রাজকন্যাকে দেখার জন্য নাছোড়বান্দা। মালিনী মাসি সুন্দরকে জানান রাজকন্যার ঘরের অবস্থান। তার পরে দু’জনে মিলে মন্দির থেকে রাজবাড়ি পর্যন্ত কেটে ফেলেন সুড়ঙ্গ।
সেই সুড়ঙ্গ পথেই দেখা হয় রাজকন্যার সঙ্গে। শুরু হয় মিষ্টি প্রেমের গাথা। লুকিয়ে লুকিয়ে এই সুড়ঙ্গেই দেখা হত যুগলের।
কিন্তু এই প্রেমকাহিনি জেনে যান রাজা তেজচাঁদ। রেগে গিয়ে আদেশ দেন, বিদ্যা ও সুন্দর দু’জনকেই বলি দেওয়া হবে।
নির্দিষ্ট দিনে দু’জনকে মায়ের মন্দিরের সামনে হাজির করা হয় বলির জন্য। কাপালিকও প্রস্তুত।
বিদ্যা ও সুন্দর দু’জনেই কাপালিকের কাছে অনুরোধ করেন, এক বার শেষ বারের মতো মাকে প্রণাম করতে দেওয়া হোক। কাপালিক রাজি হলে দু’জনে দেবীর সামনে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করেন।
তখনই এক অলৌকিক কাণ্ড! চার দিক ভরে ওঠে কালো মেঘে। সঙ্গে কানফাটানো বাজের শব্দ। সেই সময়ে কাপালিকও মূর্ছা যান। জ্ঞান ফিরে দেখেন, বিদ্যা ও সুন্দর দু’জনেই উধাও!
তখন থেকেই মানুষের বিশ্বাস, দেবীর আশীর্বাদে বিদ্যা ও সুন্দর দু’জনেই বেঁচে যান। অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও প্রেমিক যুগলের সন্ধান মেলেনি।
এই অমর প্রেমের কাহিনির হাত ধরেই মন্দিরের নামকরণ হয় বিদ্যাসুন্দর কালীমন্দির। রাজার আদেশে তখন থেকে বন্ধ হয়ে যায় নরবলিও।
এখন কালীপুজোর দিন হয় পাঁঠাবলি। এই জাগ্রত মন্দিরে মাকে প্রার্থনা জানাতে ভিড় করেন বহু মানুষ। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।