কালী পুজোর দিন খুব সকালে ডাবের জল দিয়ে শুরু হয় মায়ের ভোগ। সকালের ভোগে থাকে পাঁচ রকম বা ন’রকমের ভাজা, সাদা অন্ন, পায়েস ও মিষ্টি। কখনও ফ্রায়েড রাইস। এই একই ভোগের আয়োজন থাকে শ্মশান কালীর জন্যও।
আমিষ ভোগের মূল উপাদান হল শোল মাছ। ভোগের পাতে এই মাছ না থাকলে ভোগ গ্রহণ করেন না মা তারা। কিন্তু কেন? শোল মাছের এই ভোগের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে এক অলৌকিক কাহিনি।
শোনা যায়, জয়দত্ত নামে এক সওদাগর বাণিজ্য করতে বেরিয়ে চণ্ডীপুরে এসে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য নোঙর করেন। তখন তারাপীঠ পরিচিত ছিল চণ্ডীপুর নামে।
চণ্ডীপুরে বণিক জয়দত্তের সঙ্গে ছিল তার ছেলে। হঠাৎ সেই ছেলেকে সাপে কামড়ায়। সঙ্গে সঙ্গে তার মৃত্যু হয়। শোকে পাথর হয়ে যান ওই বণিক।
ছেলের পারলৌকিক কাজে নিয়মরক্ষার জন্য মাছ খেতে হবে। এদিকে কারওরই তখন মাছ ধরতে যাওয়ার মতো মনের অবস্থা নেই। তবুও মাছ তো চাই। শেষে এক জন জীবিতকুণ্ড পুকুর থেকে ধরে আনল একটা শোল মাছ। মাছ কেটে ওই পুকুরেই ধুতে নিয়ে গেল।
অবাক কাণ্ড, মাছ ধোয়ার সময়ে কাটা মাছ জোড়া লেগে বেঁচে উঠল! এই ঘটনায় আশা জাগল জয়দত্তর মনে। তাঁর নির্দেশে মরা ছেলেকে নিয়ে ওই পুকুরের জলে ডোবানো হল।
এক ডুবেই বেঁচে উঠল সাপের কামড়ে মারা যাওয়া সেই ছেলে। সবাই জয়ধ্বনি শুরু করল তারা মায়ের। তারাপীঠে শোল মাছ হয়ে উঠল মঙ্গলের প্রতীক। এই ঘটনার পর থেকেই নাকি মায়ের ভোগ শোল মাছ ছাড়া অসম্পূর্ণ।
তারা মায়ের যে ভাবে ভোগ পুজো হয়, সেই একই ভাবে পুজো করা হয় শ্মশান কালীকে। শ্মশানেই রয়েছে মায়ের আসল শিলা পাদুকা। তার পাশে বামদেবের সমাধি।
তারাপীঠের নিয়ম অনুযায়ী সন্তানকে খাইয়ে তবেই তারা মা ভোগ গ্রহণ করেন। তাই বামদেবের ভোগ আগে দেওয়া হয়।
ভোগের তালিকায় রয়েছে প্রেত ভোগও। ডাকিনী যোগিনীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া এই ভোগ শ্মশানেই দেওয়া হয়। রাতে এক বারই এই ভোগ আয়োজন থাকে। বামদেবের খুব প্রিয় কুকুর ছিল শিবা। তার জন্যও থাকে বিশেষ ভোগের আয়োজন।