kali Puja 2022

সনাতন থেকে গগন ডাকাত, সিঙ্গুরের ডাকাত কালীর পুজো ঘিরে ত্রাসের ইতিহাস

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২২ ১৬:২৫
Share:

বাংলার ডাকাতদের সঙ্গে কালীর যোগাযোগ যেন চিরকালীন। অতীতে মা কালীর পুজো সেরে তবেই ডাকাতি করতে বেরোত সর্দার ও তার দলবল। সে রঘু ডাকাত হোক বা গগন ডাকাত, প্রত্যেকেই ছিলেন কালী ভক্ত। হুগলির তেমনই দুই কুখ্যাত ডাকাতের কালী ভক্তির কথা এখন প্রায় প্রবাদের পর্যায়ে। সনাতন ডাকাত এবং গগন ডাকাত। সিঙ্গুরের ত্রাস এই দু’জনও নাকি নিয়মিত কালী পুজো করে তবেই বেরোতেন ডাকাতি করতে। সিঙ্গুরে ডাকাত কালীর পুজো বেশ বিখ্যাত। এলাকাবাসীর বিশ্বাস, এই মন্দিরের দেবী খুবই খুবই জাগ্রত। তাই ডাকাত কালীর মন্দির ছাড়া আর অন্য কোথাও কালীপুজো হয় না এ চত্বরে। আশপাশের তিন গ্রাম মল্লিকপুর, জামিনবেড়িয়া ও পুরষোত্তমপুরের কোথাও কোনও কালী মন্দির নেই। এমনকি, বাড়িতেও কালী ঠাকুরের ছবিওয়ালা ক্যালেন্ডার টাঙায় না কেউ। শোনা যায়, সিঙ্গুরের এই ডাকাত কালীর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ডাকাত সর্দার সনাতন বাগদীর হাতে। সরস্বতী নদীর তীরে বাস ছিল সনাতনের। ডাকাতি করতে বেরোনোর আগে গভীর রাতে নিবিড় জঙ্গলে মা কালীর উপাসনা করতেন তিনি। তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রচলিত কাহিনি। সে বার ঘোর অমাবস্যা। ঝড়-জলের রাত তার উপরে। পুজোর উপচার সব তৈরি। গোল বাধল পুজো শুরু করতে গিয়ে। বলির জোগাড় নেই যে! সর্দার রেগে আগুন। নরবলির ব্যবস্থা করার আদেশ দিলেন তখনই। সর্দারের সেই কথায় গা করেনি দলের লোকজন। আগে থেকেই অসন্তোষ জমে ছিল তাদের মনে। ওই রাতে ডাকাতের দল ভাগ হয়ে যায় দু’দলে। শুরু হয় বিষম যুদ্ধ। এমন সময়ে সেখানে এসে পৌঁছয় এক দল তীর্থযাত্রী। সর্দারের আদেশে ডাকাত দল হামলা করে তাঁদের উপরে। ডাকাত দল ও তীর্থযাত্রীদের লেঠেল বাহিনীর মধ্যে শুরু হয় ভীষণ যুদ্ধ। তাতে প্রাণ যায় খোদ ডাকাত সর্দার সনাতন বাগদী-সহ আরও অনেকের। বন্ধ হয়ে যায় কালী পুজোও। শোনা যায়, এই ঘটনার বহু বছর পরে উনিশ শতকের শুরুর দিকে হঠাৎই জঙ্গলের মধ্যে সেই ডাকাত কালীর পরিত্যক্ত পুজোর জায়গাটি খুঁজে পান গগন ডাকাত। তিনিই ঘট পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। শোনা যায়, গগন ডাকাত নাকি মা কালীর পুজোর সময়ে ঘট থেকে ফুল পড়লে তবেই সে দিন বেরোতেন। না হলে বেরোতেন না। ঘট থেকে ফুল পড়াকে তিনি মায়ের আশীর্বাদ বলে মানতেন।

Advertisement

রয়েছে আরও বহু জনশ্রুতি। ডাকাতের হাতে পুজো হলেও কোনও দিন সে ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি মন্দির। তা হয় পরবর্তী কালে। শোনা যায়, মা কালীর স্বপ্নাদেশ পান এলাকার এক অবস্থাপন্ন কৃষক। তিনিই এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। লোকে বলে, মন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য সোনার মোহর নাকি জোগাড় করে দেন মা নিজেই। ধানের বস্তা থেকে পাওয়া গিয়েছিল সেই স্বর্ণমুদ্রা। মন্দিরে নিত্য পুরোহিত নিয়োগ করেন বর্ধমানের রাজা। তৈরি হয় এক চালা মন্দির। ডাকাত কালীর এই মন্দিরের সঙ্গে যোগ রয়েছে মা সারদামণিরও। জনশ্রুতি বলে, অসুস্থ রামকৃষ্ণদেবকে দেখতে যাচ্ছিলেন মা সারদা। গগন ডাকাত ও তাঁর দলবল মা সারদার উপর চড়াও হলে নাকি স্বয়ং মা কালী দেখা দেন। ভয় পেয়ে যায় ডাকাত দল। সেই রাতে নাকি ডাকাত দলের অনুরোধে সেখানেই থেকে যান মা। তাঁকে পুজো করে তাঁর প্রিয় চাল কলাই ভাজা নিবেদন করা হয়। তাই আজও মায়ের ভোগে দেওয়া হয় চাল কলাই ভাজা। আজও সেবায়েতদের বংশধরেরা পুজো করেন এই মন্দিরে। শূদ্রদের আনা জলে বছরে এক বার বন্ধ দরজার ভিতরে বদলানো হয় ঘটের জল। পুজোর ভোগে দেওয়া হয় চাল কলাই ভাজা। মায়ের পুজোয় দেওয়া হয় সুরাও।

এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement