রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র।
নয়াদিল্লি, ২১ ডিসেম্বর: বিজেপি ‘চারশো পার’ করে ক্ষমতায় ফিরলে সংবিধান বদলে দেবে, সংরক্ষণ তুলে দেবে— লোকসভা নির্বাচনের আগে রাহুল গান্ধীর এই প্রচার বিজেপিকে বিপাকে ফেলেছিল। কিন্তু তার পরে মহারাষ্ট্র নির্বাচনে সেই একই প্রচার আর কাজে লাগেনি। এ বার নরেন্দ্র মোদী সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বাবাসাহেব অম্বেডকরকে নিয়ে করা মন্তব্যকে হাতিয়ার করে কংগ্রেস নতুন করে সেই প্রচার ফিরিয়ে আনতে চাইছে। আজ কংগ্রেস ঘোষণা করেছে, আগামী সপ্তাহকে ‘অম্বেডকর সম্মান সপ্তাহ’ হিসেবে পালন করবে তারা। রবিবার ও সোমবার কংগ্রেসের সাংসদ, ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য ও প্রথম সারির নেতারা দেশ জুড়ে দেড়শোটি সাংবাদিক সম্মেলন করবেন। আগামী ২৪ ডিসেম্বর কংগ্রেস দেশ জুড়ে অম্বেডকর সম্মান মিছিল বের করবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে অমিত শাহের ইস্তফা চেয়ে জেলাশাসকদের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি পাঠানো হবে। রাহুল গান্ধী সোমবার মহারাষ্ট্রের পরভণীতে যাবেন। পরভণীতে ডিসেম্বরের গোড়ায় সংবিধান নষ্ট করার প্রতিবাদ ও তা ঘিরে হিংসা হয়েছিল।
কংগ্রেস যখন সংবিধান, সংরক্ষণ বিতর্ক ফিরিয়ে আনতে চাইছে, তখন মোদী সরকার তথা বিজেপি প্রবল ভাবে এই বিতর্ক ধামাচাপা দিতে চাইছে। ‘অম্বেডকর, অম্বেডকর, অম্বেডকর করা এখন ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে’—রাজ্যসভার সংবিধান নিয়ে আলোচনার শেষে অমিত শাহ এই মন্তব্য করার পরেই কংগ্রেস-সহ বিরোধী শিবির এ নিয়ে মাঠে নেমেছিল। সংসদ চত্বরে বিরোধীদের বিক্ষোভ, বিজেপির পাল্টা বিক্ষোভের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির অভিযোগ নিয়েও ধুন্ধুমার বেধেছে। শুক্রবার সংসদের অধিবেশন শেষ হওয়ার পরে বিজেপি চাইছে, এ বার বিতর্কে ইতি পড়ুক। তাই বিজেপি শনিবার সামগ্রিক ভাবে এ নিয়ে বিতর্ক না বাড়িয়ে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু কংগ্রেস ফের অম্বেডকরের ছবি হাতে রাস্তায় নামছে শুনে আজ সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু কটাক্ষ করেছেন, “কংগ্রেস দলে কারও সাহস নেই যিনি রাহুল গান্ধীকে বোঝাবেন যে, তাঁর হাতে অম্বেডকরের ছবি বা সংবিধান মানায় না। জওহরলাল নেহরুর সময় থেকে এখনও পর্যন্ত কংগ্রেস অম্বেডকরকে অসম্মান করেছে।”
মুখে এ কথা বললেও অমিত শাহের অম্বেডকর মন্তব্যে দলিত ভোট নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে বিজেপি। কারণ এই প্রশ্নে কংগ্রেসের পাশে সমস্ত বিরোধী দল এককাট্টা। তৃণমূল কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টির মতো দল আদানি ঘুষ কাণ্ড নিয়ে কংগ্রেসের পাশে থাকেনি। কিন্তু বিজেপির বিরুদ্ধে অম্বেডকরকে অপমান করার অভিযোগের হাতিয়ার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অখিলেশ যাদবরা লুফে নিয়েছেন। এমনকি কার্যত রাজনৈতিক শীতঘুমে চলে যাওয়া বিএসপি নেত্রী মায়াবতীও ২৪ ডিসেম্বর প্রতিবাদের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন।
দু’এক মাসের মধ্যেই দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন। অম্বেডকর বিতর্ক জিইয়ে রেখে দিল্লিতে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অরবিন্দ কেজরীওয়ালও দলিত ভোটব্যাঙ্ক ঝুলিতে পুরতে চাইছেন। সেই লক্ষ্যে আজ কেজরীওয়াল ‘অম্বেডকর সম্মান যোজনা’ ঘোষণা করেছেন। কেজরীওয়াল বলেন, কোনও দলিত ছাত্রছাত্রীকে অর্থের অভাবে পড়াশোনায় ইতি টানতে হবে না। যে সমস্ত দলিত ছেলেমেয়েরা বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবেন, তাঁদের সমস্ত খরচ দিল্লি সরকার বহন করবে। ‘জয় ভীম’ স্লোগান তুলে আজ কেজরীওয়াল বলেন, “অম্বেডকরকে নিয়ে সংসদে রসিকতা করা বিজেপিকে আমাদের জবাব হল এই যোজনা।”
অমিত শাহ-অম্বেডকর নিয়ে কংগ্রেস মরা সংগঠনকে চাঙ্গা করতে চাইছে। কংগ্রেস ইতিমধ্যেই রাজ্যে রাজ্যে রাজভবন অভিযান করেছে। কংগ্রেসের সাংগঠনিক সম্পাদক কে সি বেণুগোপাল বলেন, ২৪ ডিসেম্বর কংগ্রেস কর্মীরা অম্বেডকরের ছবি নিয়ে অম্বেডকর সম্মান মিছিল করবেন। তার পরে ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বর বেলগাভিতে কংগ্রেসের বর্ধিত ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে কংগ্রেস অম্বেডকরের আদর্শের প্রতি দায়বদ্ধতার কথা তুলে ধরবে। কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা বলেন, “আসলে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহকে দেশের জনতা ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে যে ধাক্কা দিয়েছেন, তা এখনও তাঁরা মেনে নিতে পারেননি। লোকসভায় চারশোর বেশি আসন জয় ও সংবিধান বদলের স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ায় মোদী, শাহ হতাশ হয়ে পড়েছেন। হতাশা থেকে অম্বেডকরের সম্পর্কে অপমানজনক কথা বলছেন। অমিত শাহের মুখ থেকে অম্বেডকরকে নিয়ে যে কথা বেরিয়েছে, তা ভুল করে বের হয়নি। তা হলে উনি মাফ চেয়ে নিতেন। কিন্তু তা করেননি। এ থেকেই ওঁদের মনোভাব স্পষ্ট।”
কংগ্রেস সূত্রের খবর, রাহুল গান্ধী সোমবার মহারাষ্ট্রে পরভণীতে গিয়ে সোমনাথ সূর্যবংশীর বাড়িতে যাবেন। গত ১০ ডিসেম্বর পরভণীতে হিংসার পরে আইনের ছাত্র সোমনাথকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে জেল হেফাজতে তাঁর মৃত্যু হয়। পরভণীতে অম্বেডকরের মূর্তির সামনে কাচের বাক্সে রাখা সংবিধানের প্রতিলিপি নষ্ট করার বিরুদ্ধে বন্ধ ডাকা হয়েছিল।