উত্তরবঙ্গে ছোট্ট শহর রায়গঞ্জ। কুলিক নদীর তীরে রায়গঞ্জ বন্দর। সেখানে নেমে ছোট তিন রাস্তার মোড়ে আজও বিদ্যমান আদি কালী মন্দির।
মন্দিরের আনুমানিক বয়স প্রায় ২০০ বছরের বেশি। সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মায়ের ক্ষ্যাপা ছেলের নাম। আজও সেখানে পুজো করেন সাধক বামাক্ষ্যাপার উত্তরসূরিরা।
শোনা যায়, এক সময়ে কুলিক নদী দিয়ে বজরা নিয়ে বাণিজ্যে যেতেন সওদাগরেরা। আজ অবশ্য আর তা হয় না। সরু হয়েছে কুলিকের গতিপথ। তাই এখনও কিন্তু রায়গঞ্জের বন্দরে কার্ত্তিকি অমাবস্যা তিথিতে পূজিতা হন মা।
প্রতিষ্ঠিত রয়েছে পঞ্চমুণ্ডির বেদির উপরে কষ্টিপাথরের মাতৃমূর্তি। শোনা যায়, তার বয়স নাকি প্রায় ২০০ বছর। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই মন্দিরের দেবী খুবই জাগ্রত।
তবে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা কিন্তু আরও আগে। কথিত, ভিতরে প্রতিষ্ঠিত পঞ্চমুণ্ডি আসনের বয়স নাকি আনুমানিক ৫০০ বছরের বেশি।
প্রধান পুরোহিত জানান, প্রায় ১৪৭০ সালে জন্ম হয় এই মন্দিরের। পঞ্জাবের এক তান্ত্রিক নাকি মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়েই এই কুলিক নদীর ধারে এসে বট গাছের নীচে প্রতিষ্ঠা করেন পঞ্চমুণ্ডির আসন। সেই বট গাছ আজও রয়েছে মন্দির প্রাঙ্গণে।
শোনা যায়, সেই সময়ে কোনও মন্দির ছিল না। এমনকি, মা পূজিত হতেন ডাকাতদের কাছে। তাই সেই অর্থে এই মন্দির ডাকাত কালীও বটে।
পরে অবশ্য ধনী ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যে আসা যাওয়ার পথে পুজো দিয়ে যেতেন এখানে। পরে লোক মুখেই ছড়িয়ে পরে এই জায়গার মাহাত্ম্য। কথা। আবার কেউ কেউ বলেন, মায়ের ইচ্ছেতেই তৈরি হয় তাঁর মন্দির। ১৮০৮ সালে স্বপ্নাদেশ পেয়েই দিনাজপুরের রাজা তারকনাথ চৌধুরী গড়ে তোলেন এই মন্দির।
জনশ্রুতি রয়েছে পঞ্চমুন্ডির বেদিতে নাকি হেঁটে বেড়াতেন মা কালী। কালী পুজোর রাতে শোনা যেত নূপুরের শব্দ। তন্ত্র মতে আরাধনা করা হয় মায়ের, ভোগে দেওয়া হয় শোল মাছ। আজও হয় পাঁঠা বলি।
পরে সাধক বামা ক্ষ্যাপার উত্তরসূরি জানকীনাথ চ্যাটার্জিকে দেওয়া হয় এই পুজোর ভার। সেই থেকেই তাঁর উত্তরসূরিরা বংশ পরম্পরায় দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।