কোচবিহারের অন্যতম প্রাচীন ও বড় কালী পুজো হল ‘বড় তারা’র পুজো। প্রায় দুই শতাব্দী ধরে কোচবিহারের এই পুজো হয়ে আসছে। স্থানীয়দের কাছে দেবী ‘বড় তারা’ নামেই পরিচিত।
এই পুজো ঘিরে রয়েছে বহু ইতিহাস; বহু সম্ভ্রমের গল্প। এলাকাবাসীর মতে, ‘দেবী মা এতটাই জাগ্রত যে মায়ের কাছে কোনও কিছু নিষ্ঠা ভরে চাইলে মা কখনও কাউকে খালি হাতে ফেরান না।’
কোচবিহার রাজপরিবারের হাতেই শুরু হয়েছিল এই পুজো। রাজ পরিবারের ইষ্টদেবতা মদনমোহনের পাশেই কাঠামিয়া মন্দিরে ‘বড় তারা’র পুজো হয়ে আসছে। বর্তমানে এই পুজো দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে কোচবিহার দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ড।
ট্রাস্ট বোর্ডের মতে, পুজোর বয়স ২০০ বছরের বেশি। সময় বদলেছে। তার সঙ্গে আরও অনেক কিছু বদলে গিয়েছে। অথচ এই পুজোকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের উৎসাহে একটুও ভাঁটা পড়েনি৷
এই পুজোর রীতি, সাধারণ কালী পুজোর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। দেবী মূর্তিরও আলাদা বিশেষত্ব রয়েছে। এখানে দেবী প্রতিমার গায়ের রং কালো। এক হাতে খড়্গ, অন্য হাতে কাটারু। দেবী প্রতিমার দৃষ্টি যে দিকে থাকে, সেই দিকেই মাথা দিয়ে শায়িত থাকেন শিব। তাঁর জটার মধ্যে থাকে পদ্ম। প্রতিমার পাশে একটির বদলে দু’টি শেয়াল থাকে ।
দীপান্বিতা অমাবস্যার রাতে ১০৮টি সোনা ও রুপোর মুণ্ডমালায় সেজে ওঠেন কোচবিহারের রাজপরিবারের ‘বড় তারা’। সঙ্গে থাকে রাজপরিবারের অন্যান্য স্বর্ণালঙ্কারও।
এখানে প্রতিমার হাতে কোনও মুন্ডমালা নেই। তাঁর জায়গায় রয়েছে রক্ত ভর্তি একটি পাত্র। বংশ পরম্পরায় এই মূর্তি তৈরি করে প্রভাত চিত্র করের পরিবার।
এই পুজোর রীতি অন্য পুজোর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এই পুজোতে পাঁচ রকমের বলির নিয়ম রয়েছে — পাঁঠা, হাস, মেষ, পায়রা ও মাগুর মাছ। আগে অবশ্য কচ্ছপও বলি দেওয়া হত। তবে এখন তা হয় না।
একই সঙ্গে পাঁঠার মাংসের ভোগ নিবেদন করা হয় দেবীকে। থাকে শোল মাছ পোড়াও।
পুজোর পরের দিন সকালের পুজো শেষে ‘বড় তারা’কে লম্বা দিঘিতে বিসর্জন দেওয়া হয়।