মা কালীর সঙ্গে ডাকাতদের যোগ বেশ আত্মিক। এক সময়ে রাতের অন্ধকারে ডাকাতদের গোপন আস্তানায় চলত মা কালীর আরাধনা। পুজো শেষে মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে রওনা দিত ডাকাতেরা। পুজোয় বলি দেওয়া হত পাঁঠা থেকে মানুষ, সবই।
আজ বন্ধ হয়েছে ডাকাতি। তা বলে পুজো কিন্তু বন্ধ হয়নি। আজও বিশাল আড়ম্বরের সঙ্গে চলছে সেই সব পুজো। আসুন দেখে নেওয়া যাক পশ্চিমবঙ্গের ডাকাত কালীর ইতিহাস।
গগন ডাকাতের পুজো: সিঙ্গুরের কালী পুজোর ইতিহাসে রয়েছে এই পুজো। স্বাধীনতার আগে ব্রিটিশের বিরোধিতা করতে জমিদার বাড়িতে চলত ডাকাতি বা লুঠতরাজ। সেই সময়েই এলাকার ত্রাস হয়ে ওঠেন গগন ডাকাত। শোনা যায়, এক সন্ধ্যায় রামকৃষ্ণ দেবকে হুগলিতে দেখতে যাচ্ছিলেন সারদা মা। গগন ডাকাতের কবলে পড়েন তাঁরা। তখনই নাকি আশ্চর্য ভাবে সারদা মায়ের মধ্যে মা কালীকে দেখতে পান গগন ডাকাত। ভয় পেয়েই নাকি তিনি প্রতিষ্ঠা করেন কালী মন্দির।
রঘু ডাকাতের পুজো: রঘু ডাকাতের নাম কে না শুনেছে? হুগলীর বাঁশবেড়িয়া অঞ্চলের ত্রাস ছিলেন রঘু ডাকাত। শুধু ডাকাতি নয়, তাঁর নাম ছিল কালীভক্ত হিসেবেও। লুঠতরাজে সাফল্যের জন্যই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন কালী মন্দির। বাসুদেবপুরে মা কালী ও ত্রিবেণীতে ডাকাত কালীর পুজো শুরু তাঁর হাতেই। কথিত, রঘু ডাকাত নাকি রোজ পোড়া ল্যাটা মাছ মাকে অর্পণ করে পুজো দিতেন। যে প্রথা আজও চলছে।
কেলে ডাকাতের কালী পুজো: হুগলির জিরাটে কেলে ডাকাত প্রতিষ্ঠা করেন এই ডাকাত কালীর। সময়ের সঙ্গে এই এলাকার পুজোর নামও কালীগড় থেকে কেলেগড় হয়ে গিয়েছে। শোনা যায়, এই এলাকার জমিদার কালিচাঁদ নাকি রাতে মায়ের পুজো করে ডাকাতি করতে বেরোতেন। যদিও জমিদার পরিবারের সদস্যরা এ কথাকে মিথ্যে রটনা বলেই উড়িয়ে দেন।
প্রহ্লাদ ডাকাতের কালী পুজো: পূর্ব বর্ধমানের পাণ্ডুক গ্রামে ডাকাত সর্দার প্রহ্লাদের হাতে প্রতিষ্ঠিত এই বামা কালী মন্দির। শোনা যায়, একবার কেতু গ্রামের রাম-সীতা মন্দিরে ডাকাতি করতে গিয়ে এক মহিলাকে আক্রমণ করে ডাকাত দলের এক জন। মহিলা স্পর্শের অপরাধে ডাকাত সর্দার তাকে হত্যা করে। জানা যায়, এর পরেই সেই মহিলা কালী রূপ ধারণ করেন। এই ঘটনার পরেই ডাকাত সর্দার স্থাপন করেন বামা কালীর মন্দির।
আউশ গ্রামের কালী পুজো: জনশ্রুতি বলে, এক কালে মেটে পাড়ার ডাকাতদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল বর্ধমানের আউশ গ্রাম ও তার আশপাশের গ্রামের লোকজন। এক করে স্থানীয় সব জমিদারেরা একজোট ওঠে পাল্টা হামলা করেন ডাকাত দলের উপরে। তখন নাকি মা কালী তাঁদের রক্ষা করেন। এর পরেই কালী পুজোর রমরমা আরও বেড়ে ওঠে।