এই মন্দির ঘিরে রয়েছে একাধিক রহস্য, যার অর্থ সাধারণ বিজ্ঞানের ভাষায় উত্তর দেওয়া খানিক মুশকিলই বটে!
১৫০১ সালে এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। ৫১ পীঠস্থানের মধ্যে অন্যতম হল এই পীঠটি। কথিত যে ত্রিপুরার এই অংশে দেবীর ডান পায়ের অংশ পড়েছিল। দেবীকে এখানে ষোড়শী রূপে পুজো করা হয়। অর্থাৎ দেবী এখানে ১৬ বছরের এক বালিকা। কালিকা পূরাণে কালীকে দশমহাবিদ্যা রূপে উল্লেখ করা হয়েছে। এই দশমহাবিদ্যা হলেন — কালী, তারা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, মাতঙ্গী, বগলা এবং কমলা।
চট্টগ্রামের পাহাড় থেকে মায়ের মূর্তি নিয়ে আসা হয়। কথিত, তৎকালীন মহারাজা ধন্য মাণিক্য এখানে নারায়ণের মন্দির প্রতিষ্ঠা করবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু মহারাজ এখানে মাতৃ মন্দির প্রতিষ্ঠার স্বপ্নাদেশ পান। সেই সঙ্গে তিনি নির্দেশও পান কোথায় মূর্তি পাওয়া যাবে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী চট্টগ্রামের পাহাড় থেকে প্রথম মায়ের মূর্তি থেকে নিয়ে আসেন মহারাজা।
এই মন্দিরের একটি বিশেষত্ব রয়েছে। এখানে মন্দিরের স্থানটি কচ্ছপের পিঠের আকারের। মূল বিগ্রহের পাশে রয়েছে আরও একটি ছোট বিগ্রহ। তাঁকে বলা হয় ছোট মা। মহারাজা যখন যুদ্ধে যেতেন বা শিকারে যেতেন এই ছোট মা’কে সঙ্গে নিয়ে যেতেন পুজো করার জন্য। কারণ তাঁর মাতৃভক্তি ছিল প্রবল। কষ্টি পাথরের তৈরি এই বিগ্রহকে নিয়েও রয়েছে বেশ কিছু গল্প রয়েছে।
এই মন্দিরে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান — সব ধর্মের মানুষ আরাধনা করতে পারেন। যে কেউ মাকে শ্রদ্ধা ভরে পুজো করলে মা সেই পুজো স্বীকার করেন। মা তাঁদের মনোস্কামনা পূরণও করেন। আর শুধু আমি নই, এখানকার প্রত্যেক বাসিন্দা এটাই বিশ্বাস করেন। আর সেই কারণে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন মায়ের পুজো দিতে। এই দৃশ্য আমার নিজের চোখে দেখা।
মন্দিরের সামনেই রয়েছে সুবিশাল জলাশয় — কল্যাণ সাগর। এখানে এলেই চোখে পড়বে প্রচুর কচ্ছপ এবং বড় মাছ। কিন্তু কেউ কখনও শিকার করেন না। কচ্ছপ নিয়ে একটি কাহিনি প্রচলিত রয়েছে এখানে। যা খানিক অলৌকিকও বটে। কচ্ছপের আয়ু অনেক বেশি। অথচ কী ভাবে যেন মৃত্যুর আগে তারা টের পেয়ে যায়। মৃত্যুর আগে ৫২টি সিঁড়ি অতিক্রম করে প্রতিটি কচ্ছপ মন্দিরের সামনে গিয়ে দেহ রাখে। স্থানীয়দের মতে, এই ৫২টি সিঁড়ি একক বছরের চক্রাবর্ত। এই নিয়ে আমি নিজেও অনেক গল্প শুনেছি। যদিও সেই ৫২টি সিঁড়ি এখন আর নেই।
সত্যি বলতে, ত্রিপুরাতে এমন কোনও বড় কাজ হয় না যা মাকে আগে জানানো হয় না। আগে মাকে প্রার্থনা করে জানানো হয়। এবং সব ক্ষেত্রে মা আমাদের রক্ষা করেন এবং সাফল্য এনে দেন। তা ছাড়াও আরও একটি প্রচলিত মতবাদ রয়েছে মন্দির ঘিরে। এই মন্দিরে খুব ভাল ভাবে ধ্যান করা যায়। সকালে যখন ভিড় কম থাকে, তখন আমি গিয়ে মেডিটেশন করি ওখানে। দেখবেন বাড়িতে মেডিটেশন করলে নানা ধরনের চিন্তা মাথায় আসে। কিন্তু ওখানে মেডিটেশন করলে অদ্ভূত ভাবে আপনার মন স্থির হয়ে যেতে বাধ্য।
কালীপুজোর সময় তিন দিন ব্যাপী বিরাট মেলা হয় এই মন্দিরকে ঘিরে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দীঘির শহর উদয়পুরের প্যাঁড়া বেশ বিখ্যাত। ভারত তো বটেই, পড়শি দেশ বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে মানুষ ভিড় জমান এই মেলায়।