মদ-মাংস না হলে নাকি কালী পুজো হয় না। পুজোর দিনে মায়ের সন্তানদেরও তাই মদ্যপানে অবাধ ছাড়। বিধিসম্মত সতর্কীকরণের থোড়াই কেয়ার!
মাকে নৈবেদ্য হিসেবে যে মদ দেওয়া হয়, তাকে বলে কারণবারি। যদিও এ বিষয়ে নানা মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, তন্ত্রমতে যেখানে মা কালীর আরাধনা করা হয়, একমাত্র সেখানেই মদ ও মাংস নৈবেদ্য দেওয়া হয়। শুধু মদ বা মাংস নয়, মায়ের চরণে উৎসর্গ করা হয় পঞ্চ ‘ম’।
মা কালী কারণবারি পছন্দ করেন কি না, তা জানার উপায় নেই। তবে মায়ের পুজো ঘিরে সন্তানদের মাদকাসক্তি চরমে ওঠে মাঝেসাঝেই। কালী পুজোর বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই তাই মদের দোকানের সামনে লম্বা লাইন! বেশ কিছু গবেষণা বলে, বিধিসম্মত সতর্কীকরণ থাকলেও পরিমিত মদ্যপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল। এই একটা কথাই সুরা প্রেমীদের উদ্যম বাড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। কিন্তু প্রশ্ন হল, এই পরিমাণটা ঠিক কেমন।
গবেষণা বলছে, ৪৫ মিলিলিটার পর্যন্ত সুরা পান করা যেতে পারে এ ভাবে। তা ভদকা, হুইস্কি বা রাম হতে পারে। বিয়ার খেলে পরিমাণ যেন ৩৫৫ মিলিলিটারের বেশি না হয়। আর ওয়াইন খাওয়া যেতে পারে ১৪৮ মিলিলিটার পর্যন্ত। ওই গবেষণায় এটাও বলা হয়েছে যে, সারা দিনে এক বার মদ্যপান নাকি আয়ু বাড়াতে পারে। যাঁরা মাঝে মাঝে মদ্যপান করেন, কম বয়সে তাঁদের মৃত্যুর সম্ভাবনাও নাকি কম। সত্যিই কি তাই? পরিমিত মদ্যপানে কি চিকিৎসকদের সমর্থন আছে? মদ্যপানের সঠিক পরিমাপ নিয়ে কী বলছেন তাঁরা?
ডাঃ কুণাল সরকারের মতে, ‘‘পরিমিতি বোধ কথাটাই খুব আপেক্ষিক। কথাটার কোনও যৌক্তিকতা নেই। সাউথ অফ ফ্রান্স থেকে এই রকম একটা প্রচার হয়েছিল। সেখান থেকেই এই ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়, যা ক্ষতিকারক। যাঁরা মদ্যপান করতে পছন্দ করেন, তাদের কাছে কালীপুজো একটা উপলক্ষ মাত্র। এক দিন গ্যালন গ্যালন মদ্যপানের পরে শরীরের যে ক্ষতি হয়, তার পরিমাপ করা সম্ভব নয়। চিকিৎসক হিসাবে ‘পরিমিত মদ্যপান’ কথাটার বিরোধিতাই করব। সাউথ অফ ফ্রান্সে ডিনারের পরে অনেকেই দশ মিলি মদ খান। সেটা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল, এটা আমি কখনওই বলব না। অ্যালকোহল অনেক রকম আছে, তার এক এক ধরনের ঘনত্বও আলাদা। তাই হুইস্কি, বিয়ার, ভদকা বা দেশি মদ যাই খান না কেন, শরীরের জন্য সব সময়েই তা ক্ষতিকর। এক দিনের আনন্দের জন্য লিভারের ক্ষতি ডেকে আনাটা কখনওই কাম্য নয়।” মা কালীর নাম করে যে সন্তানেরা ইতিমধ্যেই দেদার মদ্যপানের পরিকল্পনা করে রেখেছেন, তাঁরা কী ভাবছেন তবে? বিধিসম্মত সতর্কীকরণ, ‘মদ্যপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর’-এ আর এক বার চোখ বুলিয়ে নেবেন নাকি?
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের অংশ।