মহাসপ্তমীর ভোর। ঘুম চোখ খুলে যায় ঢাকের বোলে। ঠান্ডা হাওয়ার আলতো ঝাপটায় শরতের আমেজ- পাড়ার মহিলারা মিলে চলেছেন পুকুরের দিকে। সঙ্গী পুরোহিত ঠাকুর, ঢাকি এবং একটি ছোট কলাগাছ।
তবে দুর্গাপুজোয় হঠাৎ কলাগাছ স্নান করানো হবে কেন? এই রীতির শুরু কোথায়? কোন দেবীরই বা রূপ কলাবৌ? রইল কিছু খুঁটিনাটি।
মায়ের বোধনের পরের দিন, সপ্তমীর ভোরে বিবাহিতারা কলাগাছকে স্নান করাতে নিয়ে যান। তার পরে সেই গাছকে নববধূর মতো শাড়ি পরিয়ে, সিঁদুর মাখিয়ে বসানো হয় গণেশের মূর্তির ডান পাশে। তিনিই কলাবৌ। বাকি তিন দিন তাঁকেও অন্যদের সঙ্গেই পুজো করা হয়। এই রীতিকে বলে কলাবৌ স্নান, তাঁকে পুজো করা হয় ফুল, চন্দন, ধুপ-ধুনো দিয়ে।
অনেকের বাড়িতে কলাবৌ স্নান করানো হয় পাল্কিতে এনে। কোথাও বা বিবাহিতারা বয়ে নিয়ে যান নিজেরাই। কলাবৌকে লাল পাড় সাদা শাড়ি পরিয়ে, সিঁদুর মাখিয়ে হয় তাঁর অধিষ্ঠান।
কলাবৌয়ের পরিচয় ঘিরে হরেক কথা প্রচলিত। গণেশের স্ত্রী হিসেবে তাঁকে পাশে রেখে পুজো করা হয়। তাই কলাবৌ স্নানের রীতি যেন হয়ে ওঠে বিয়ের আগে কুমারীর পালন করা আচার-রীতি।
তবে অন্য মতে বলা হয়, যে কলাবৌ আসলে মা দুর্গারই রূপভেদ মাত্র। অনেক ভক্ত কলাবৌকে গণেশের স্ত্রী বলে মানতে নারাজ। তাঁদের মতে, মা দুর্গা যেহেতু নিজের হাতে গণেশের সৃষ্টি করেছিলেন, তাই তাঁর ডান পাশে কলাবৌকে রেখে পুজো করা হয়।
কলাবৌয়ের পরিচয় নিয়ে আরও একটি তত্ত্ব প্রচলিত। তিনি নাকি আসলে মা দুর্গার সৃষ্ট রূপ। অসুরের বিনাশ ঘটিয়ে তিনি আবির্ভূতা হয়েছিলেন মর্ত্যে শান্তি ও সবুজ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে। তাই তাঁর অঙ্গে ৮ রকমের গাছের অংশ বেঁধে দেওয়া হয়। কলাবৌয়ের আর এক নাম তাই ‘নবপত্রিকা’। দেবী দুর্গার শস্যশ্যামলা রূপ হিসেবেই তাঁর পুজো হয়।
এই ৮ রকমের গাছ হল- হলুদ গাছ বেল গাছ ডালিম গাছ মানকচু গাছ ধান গাছ অশোক গাছ কচু গাছ জয়ন্তী গাছ
প্রত্যেকটি গাছ দেবীর ৯টি রূপের আধার- কলাগাছ দেবীর ব্রাহ্মণী রূপ, হলুদ গাছ দেবীর দুর্গা রূপ, বেল গাছ মহাদেবের রূপ, বেদানা গাছ রক্তবীজ রূপ, মানকচু গাছ চামুণ্ডারূপ, ধান গাছ লক্ষ্মীর রূপ, অশোক গাছ সক্রাহিতা রূপ, কচুগাছ কালিকা রূপ এবং জয়ন্তী দেবীর কার্তিকই রূপ।
নবপত্রিকা দেবী দুর্গার সেই রূপ, যা মানুষের ভরণপোষণ ও ওষুধের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাই গণেশের পাশে কলাবৌয়ের এই অবস্থান এত উদযাপিত।