Durga Puja 2022

খোদ রানির দেশে দুর্গা পুজো! এক ঝলকে লন্ডন শারদ উৎসব

বিদেশের মাটিতে পুজো। বেশি সংখ্যক মানুষ যাতে এই পুজোয় অংশগ্রহণ করতে পারেন - সেই ভাবনা থেকেই সপ্তাহান্ত ঘিরে আয়োজন করা হয় পুজো।

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২২ ১৫:৫৩
Share:

সন ১৮২৯, আশ্বিন মাস, শরৎ কাল। বাতাসে কাশ ফুলের দোলা, ঢাকের আওয়াজ, শিউলি ফুলের গন্ধ- আপামর বাঙালীর প্রাণের উৎসব- দুর্গা পুজো আগত দুয়ারে। দেশে- বিদেশে, যেখানে যত বাঙালী আছেন, সবার মন এই সময়ে ভরে ওঠে এক আশ্চর্য উৎফুল্লতায়। বিশেষ করে প্রবাসে বা বিদেশে বসবাসকারী বাঙালীদের মন বাড়ি মুখো হয়ে উঠেতে চায়। কিন্তু সব সময় তা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না - ফল স্বরূপ সবাই তখন খোঁজ করেন দেশের বাইরে এক টুকরো বাঙালীয়ানার।

Advertisement

বিলেতে এই সময় আকাশ মোটর ওপর ঝকঝকে, কিন্তু ভরসা নেই। একটু যেনো উত্তুরে হাওয়ার দাপট বেশী, বৃষ্টি হলেও হতে পারে। তাই মার কাছে সবার বিনীত অনুরোধ - "এ ক'দিন যেনো বৃষ্টি না হয়, মা!" কলকাতা আর বিলেত মিলেমিশে একাকার যেন। লন্ডনের পশ্চিম প্রান্তে ঐতিহাসিক স্থাপত্য ইলিং টাউন হল। বেঙ্গল হেরিটেজ ফাউন্ডেশন - এই ইলিং টাউন হলেই বিগত তেরো বছর ধরে ইউরোপের সর্ব বৃহৎ দুর্গা পুজো - লন্ডন শারদ উৎসব এর আয়োজন করে চলেছে। এ বছর এই পুজোর চতুর্দশ বর্ষ।

লন্ডনের আশেপাশে ছড়িয়ে থাকা ৬৫ টি পরিবারের সম্মিলিত আয়োজনে এই পুজো। এ যেন বিলেতের বুকে কলকাতার বারোয়ারী পুজোর স্বার্থক প্রতিফলন। শুধু মাত্র এই পরিবারগুলিই নয়, চার দিন ব্যাপী এই উৎসবের ভাগীদার হতে দূরদূরান্ত থেকে বারো হাজারেরও বেশি মানুষের আনাগোনা হয় ইলিং টাউন হলে, এই সময়।

Advertisement

বিদেশের মাটিতে পুজো। বেশি সংখ্যক মানুষ যাতে এই পুজোয় অংশগ্রহণ করতে পারেন - সেই ভাবনা থেকেই সপ্তাহান্ত ঘিরে আয়োজন করা হয় পুজো। এ বছর শুক্রবার (৩০ শে সেপ্টেম্বর) থেকে সোমবার (৩ রা অক্টোবর) অবধি পুজো। দেশের মতোই সমস্ত আচার বিচার মেনে, অত্যন্ত নিষ্ঠা ভরে এই পুজো সম্পন্ন হয়ে থাকে। গত পুজোতেই বহু সদস্যরা অনুরোধ করেছিলেন যদি 'নব পত্রিকা স্নান' সম্পন্ন করা যায় - সেই দাবি মেনে এই বছর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে আগাম অনুমতি নিয়ে, থেমেস্ নদীর তীরে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে, মহা সপ্তমীর সকালে। কোনও অংশেই কম নয় এই পুজো। বোধন থেকে শুরু করে বরণ এবং বিসর্জন সব কিছুই হয় নিপুণ ভাবে। অষ্টমীতে লন্ডন শারদ উৎসবে কুমারী পুজো বিশেষ উল্লেখযোগ্য। অঞ্জলী, আরতি, সন্ধি পুজো, চন্ডী পাঠ - সবই আছে। প্রথিত যশা চিকিৎসক শ্রী পাঞ্চজন্য ঘটকের পৌরহিত্যে সবই সুষ্ঠ ভাবে সম্পন্ন হয়ে ওঠে। তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য এবং নিয়ম নিষ্ঠতা তাক লাগিয়ে দেয় বইকি।লন্ডনের শারদ উৎসবের সব চেয়ে বড় আকর্ষণ বিজয়া দশমীর সিঁদুর খেলা। এর মাহাত্ম্য বুঝিয়ে বলা খুব কঠিন – অনেকটাই বিলেতের বুকে কলকাতার চালতা বাগানের প্রসিদ্ধ সিঁদুর খেলার মতো। ইংল্যান্ডের অনেক প্রত্যন্ত জায়গা থেকেও বহু মানুষ এই উৎসবে আসেন মাকে বরণ করতে এবং বহুল জনপ্রিয় সিঁদুর খেলাতে যোগদান করতে। মহিলা মহলে অত্যন্ত জনপ্রিয় হলেও পুরুষেরাও সমান আগ্রহে অংশগ্রহণ করে থাকেন এই খেলাতে। বিসর্জনের সময় মঙ্গল ঘট বিসর্জিত হয় কৃত্রিম জলাশয়ে।

গত বছর থেকে এই আয়োজন শুরু করা হয়। তাসা পার্টি না থাকলেও, আধুনিক প্রযুক্তির সাহাজ্যে এমন আবহ তৈরি করা হয়- যেন মনে হয় সত্যিই ভাসান হচ্ছে।চার দিন ব্যপী এই শারদ উৎসবে, ইলিং টাউন হলে দু'বেলা দর্শনার্থী এবং সদ্যসদের জন্য থাকে ভোগ - প্রসাদের ব্যবস্থা সদস্যরাই পালা করে স্বতঃফুর্ত ভাবে তা বিতরণের দায়িত্ব নিয়ে থাকেন। আজকাল সব জায়গাতেই 'থিমের' জয়জয়কার। সেই চাহিদার সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে লন্ডন শারদ উৎসবেও লেগেছে তার রেশ। এই পুজোর এবারের থিম- 'ভারতের স্বাধীনতার পচাত্তর তম বর্ষ পূর্তি।' থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই তৈরি হয়েছে চালচিত্র এবং সান্ধ্যকালীন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলি। দেশের বাইরের সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন এই চারটে দিনের। নিজেদের ভাল লাগার জায়গা, নিজেদের ভাষা সংস্কৃতিকে আরও বেশী করে আঁকড়ে ধরেন, চেনানোর চেষ্টা করেন তাদের উত্তরসূরিদের। প্রত্যেকে তাদের ব্যস্ত সময়ের মধ্যেও সপ্তাহান্তে, ঠিক রিহার্সালের জন্য সময় বার করে নেন। দু মাস ব্যপী অক্লান্ত পরিশ্রমে তৈরি করেন নাচ, গান, নাটক, কুইজ, গানের লড়াই এর মতো বিবিধ অনুষ্ঠানের। এবং তা অবশ্যই এই বারের থিমকে মাথায় রেখে – ‘আজাদী কা অমৃত মহোৎসব।’লন্ডন শারদ উৎসবের পুজো - কচিকাঁচাদের থেকে শুরু করে অশীতিপর বৃদ্ধ - বৃদ্ধা সবারই। তাই কেও যখন বলে ওঠেন যে অনুষ্ঠানের সর্ব কনিষ্ঠ সদস্যটি শুধু মাত্র দুই মাসের, তখন খুব একটা আশ্চর্য হয় না কেউই। এ যেন হবারই কথা। সবাই মিলে তবেই না পুজোর আনন্দ! আর এই আনন্দকে বহু গুণ বাড়িয়ে দেবার জন্য ঢালাও আড্ডার ব্যবস্থা চলে চার দিন ধরেই। যার রেশ চলে কখনও কখনও ইলিং টাউন হলের সিঁড়িতে, প্রায় মধ্য রাত অতিক্রম করে যায় সময়ের হিসেব না রেখেই। এই ভাল লাগার রেশটুকু বজায় রেখেই লন্ডন শারদ উৎসবের পক্ষ থেকে সবাইকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। মায়ের কাছে এই টুকুই কামনা - সবাই যেন সুস্থ থাকে, ভাল থাকে। সবার পুজো ভাল কাটুক! আসছে বছর আবার হবে।

এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement