English Mahalaya by Supriyo Sengpta

বাংলায় নয়, বরং মহালয়ার ভোরে ইংরেজিতে শুনুন মহিষাসুরমর্দিনী, সুপ্রিয়র কণ্ঠে

মহিষাসুরমর্দিনী ইংরেজি ভাষায়! বছর পাঁচেক আগে যখন প্রথম বার বাঙালির নস্টালজিয়ার রসদ নিয়ে এমন সাহসিকতা প্রকাশ্যে এসেছিল, তখন হই হই রব উঠেছিল বৈকি! আজও সমালোচনা হয়। তবে প্রশংসার সুরও আসে ভেসে।

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:০৯
Share:

সুপ্রিয় সেনগুপ্ত

আশ্বিনের শারদ প্রাতে, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী শুনেই বরাবর পুজো শুরু বাঙালির। সে কণ্ঠ চিরন্তন। বাঙালি যত দিন দুর্গাপুজোয় মাতবে, হয়তো তত দিনই দেবীপক্ষের সূচনা হবে কাকভোরে সেই মেঘমন্দ্র স্বরের আমেজে। প্রতি বার নতুন করে জাগবে শিহরণ। তবে তার মধ্যেই গত কয়েক বছরে সোশ্যাল মিডিয়ায় সাড়া ফেলেছে ইংরেজি মহিষাসুরমর্দিনী। সৌজন্যে সুপ্রিয় সেনগুপ্ত। যাঁকে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ কণ্ঠী বললে বোধহয় অত্যুক্তি হবে না!

Advertisement

শুধুই কি এই প্রজন্মের কাছে পুরনো স্বাদ নতুন মোড়কে পৌঁছে দেওয়ার ইচ্ছে থেকে এই প্রয়াস? নাকি নতুন কিছু করার উন্মাদনা? বাঙালি মননের অঙ্গকে ভেঙেচুরে নতুন করে গড়তে সাহসও লাগে যথেষ্টই।

সুপ্রিয়র সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা তাঁর মা। ছোট থেকেই তিনি আয়ত্ত করেছিলেন চণ্ডীপাঠ। মা গণনাট্যের সঙ্গে যুক্ত থাকায় বাড়িতে খুব ছোট থেকেই সাংস্কূতিক পরিমণ্ডল পেয়েছিলেন। পাড়ার পুজোয় তাঁর চন্ডীপাঠ প্রশংসা এনেছিল সেনগুপ্ত পরিবারে। কিন্তু সুপ্রিয়র মা কখনও চাননি ছেলের গুণ এই একটি গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকুক। প্রায়ই তিনি ছেলেকে উৎসাহিত করতেন নতুন কিছু করতে। সেই ইচ্ছের বীজটুকু বোধহয় ছেলের মনে রোপণও করে দিতে পেরেছিলেন!

Advertisement

সুপ্রিয়র সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা তাঁর মা

যাদবপুর থেকে ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা তখন শেষ। সুপ্রিয়র বন্ধু মহলে অনেকেই তখন চাকরি সূত্রে পরিবার নিয়ে দেশে বিদেশে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত। মাঝে মধ্যে সাক্ষাৎ, গল্প, আড্ডা। এক দিন বন্ধুদের সেই আড্ডাতেই প্রসঙ্গ উঠে এল এ প্রজন্মের শিশুদের। বিশেষত যে সব বাঙালি পরিবার কর্মসূত্রে বিদেশে থিতু, তাদের সন্তানেরা কী ভাবে জানবে বাঙালি মনন, সংস্কৃতি, উৎসব আর চিরন্তন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে। এ প্রজন্ম বেড়ে উঠছে ইংরেজি পাঠক্রমে। আশ্বিনের শারদ প্রাতের গভীরতা তাদের ছোঁবে কী ভাবে?

ইউরেকা! সুপ্রিয় বাড়ি ফিরে মাকে বললেন তিনি যা খুঁজছিলেন, পেয়ে গিয়েছেন। মাস্টারমশাই নির্মলচন্দ্র সাহার কাছে অনুবাদের সাহায্য চাইলেন। 'পাগলামি' ভাবলেও তিনি এগিয়ে এলেন। প্রথমে একটা পংক্তি। বার বার সেটাই রপ্ত করা। মাকে শোনানো। একটু একটু করে তৈরি হল ইংরাজিতে মহিষাসুরমর্দিনী।

প্রথম বার সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করে বেশ রোষের মুখে পড়তে হয়েছিল সুপ্রিয়কে। তবে হাল ছাড়েননি। কারণ, লক্ষ্য স্থির ছিল। প্রথম দিকে ভেবেছিলেন, এক ঘণ্টার মহিষাসুরমর্দিনী ইংরেজিতে কী ভাবে করবেন। চণ্ডীপাঠ, গান সব বাদ দিয়ে শুধু বীরেন্দ্রকৃষ্ণের অংশটুকুই তিনি ইংরেজিতে পাঠ করেন। এর পরে প্রতি বছর পরিমার্জিত হতে থাকে ইংরেজি মহিষাসুরমর্দিনী। এ বছরও তিনি চেষ্টা করেছিলেন যদি গানগুলো ইংরেজিতে করা সম্ভব হয়।

কিন্তু নামী শিল্পীরাও পিছিয়ে যাচ্ছেন ইংরেজিতে মহিষাসুরমর্দিনীর নাম শুনেই। তা ছাড়া, আশ্বিনের শারদ প্রাতে ইংরেজিতে পাঠ করা আর ‘বাজল তোমার আলোর বেণু’ ইংরেজিতে গাওয়া এক নয়। সুপ্রিয় নিজেও সেটা মানেন।

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার সুপ্রিয় এখন একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। প্রতি মহালয়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায় সকাল আটটায় ইংরাজি মহালয়া প্রকাশ করতে দেরি করেন না সুপ্রিয়। সেখানে তিনি লেখেন, ‘বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে মহিষাসুরমর্দিনীর পরে শুনুন ইংরেজিতে মহিষাসুরমর্দিনী। কণ্ঠে সুপ্রিয় সেনগুপ্ত।‘ হয়তো ওটাই তাঁর তর্পণ।

এই প্রতিবেদনটি আনন্দ উৎসব ফিচারের একটি অংশ।

ইংরেজিতে মহিষাসুরমর্দিনী শুনুন

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement