শহরের থানা মোড়ে আমার ছোট্ট রেস্তরাঁ। সকালে ভাত-ডাল, মাছ-মাংসের পরে বিকেল থেকে বিক্রি হয় পোলাও, মাংস-রুটি, চপ-ঘুগনি। পুজোর মুখে এই সময়টায় বিক্রিবাট্টা অনেক বেড়ে যায় বলে একা হাতে দোকান সামাল দিতে ব্যস্ততাও বেড়ে যায় অনেকখানি। এ বারে করোনা পরিস্থিতি সব হিসেবে পাল্টে দিয়েছে। টানা লকডাউনে প্রায় ৫ মাস দোকান খুলতে পারিনি।
খাবারের এই দোকানের রোজগারে বৃদ্ধ বাবা-মা ও স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে সংসার চলে। লকডাউনের সময়ে চরম কষ্ট পেয়েছি। আশা ছিল, দুর্গাপুজোর আগে সব ঠিক হয়ে যাবে। আবার দোকানে ক্রেতার ভিড় হবে। রকমারি খাবার তৈরি থেকে পরিবেশনের কাজে ফের ব্যস্ততার মধ্যে দিন কাটবে। কিন্তু করোনার পরে বন্যায় সেই আশাও ক্রমে ফিকে হয়ে যাচ্ছে। পুজোর তিন সপ্তাহও বাকি নেই। বাজার সে ভাবে জমেনি। কী করে কী হবে বুঝতে পারছি না।
করোনার আগে দিনে পাঁচ-ছশো টাকা আয় হত। এখন তার অর্ধেকও নেই। সংসারে রোজকার চাল-ডাল-আনাজ কিনতে গিয়ে পুঁজিতে হাত পড়েছে। রেস্তোরাঁর খাদ্যসামগ্রী ধার করে কিনতে হচ্ছে। অথচ বাড়িতে বাবা-মা ও স্ত্রী আমার দিকে চেয়ে রয়েছেন। ৬ বছরের ছেলেটাও পুজোয় নতুন জামা-জুতো ও খেলনা বন্দুক বায়না করেছে। কী করে যে কিনি! ক্লাবগুলোর পাশাপাশি রাজ্য সরকার আমাদের মতো দুঃস্থ রোজগেরে কর্মীর জন্যও যদি ভাবত! পুজোর সময়ে অন্তত দু’হাজার টাকা সাহায্য পেলে নতুন জামাকাপড় কিনে বাড়ির লোকের মুখে হাসি ফোটাতে পারতাম।
আরও পড়ুন: লকডাউনের একঘেয়েমি কাটাতে প্রতিমা গড়ল অর্ঘ্যদীপ, পুজোয় সামিল হবেন পড়শিরা
(লেখক: রেস্তরাঁ কর্মী)