হাতে গোনা আর ক’টা দিন। তার পরেই শুরু বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গা পুজো। সাবেকি থেকে থিমের সাজ— সবেতে সেজে উঠেছে জেলার পুজো মণ্ডপগুলি। সাজছে পাঁশকুড়ার গোগ্রাস কেশববাড়ের একটি ক্লাবের মণ্ডপও। ওই মণ্ডপে এবার তৈরি হচ্ছে ৪০ ফুট উচু দুর্গা প্রতিমা এবং ২০ ফুটের লক্ষ্মী, সরস্বতী, মহিষাসুর। স্বাভাবিক ভাবেই ওই প্রতিমা দেখতে এবার ক্লাবের মণ্ডপে দর্শনার্থীর ঢল নামার আশা করছেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু এত বড়সড় আয়োজনে আম জনতার ভোগান্তি এবং নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
তমলুক-পাঁশকুড়া রাজ্য সড়কের বিড়ি দোকান বাসস্ট্যান্ডের বিবেকানন্দ মোড় থেকে আধ কিলোমিটার গেলেই দেখা মিলবে ওই পুজো মণ্ডপের। দর্শক টানতে উঁচু প্রতিমার দিকে ঝুঁকেছে পুজো কমিটি। এই মণ্ডপে দুর্গার রয়েছে ২০টি হাত।
উদ্যোক্তাদের পক্ষে সমর গুছাইত বলেন, ‘‘দুর্গার ২০টি হাতের ব্যাপারে পৌরাণিক প্রেক্ষাপট নেই। তবে মা অসুরদলনী। তাঁর শক্তি কয়েকশো হাতের সমান। সেই শক্তির প্রতীক হিসেবেই আমরা ২০টি হাত গড়েছি।’’ থিমের পাশাপাশি সাবেকিয়ানাকে মাথায় রেখে মণ্ডপে দশভূজার একটি ছোটো মূর্তিও তৈরি করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কের ৮০ ফুট উচ্চতার দুর্গা প্রতিমা তৈরি করা হয়েছিল। সেটিই ছিল রাজ্যের সবচেয়ে বড় প্রতিমা। ওই প্রতিমা দেখতে মানুষের ঢল নেমেছিল। শেষ পর্যন্ত ভিড়ের চাপ সামলাতে না পেরে প্রশাসন ও পুজো কমিটি প্রতিমা দর্শন বন্ধ করতে বাধ্য হয়। পাঁশকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রামের ওই পুজো কমিটি উঁচু প্রতিমার দিকে ঝুঁকেছে ঠিকই। কিন্তু পুজোর অনুমতি নেওয়া এবং দর্শনার্থীর নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, এবার পাঁশকুড়া ব্লকে মোট পুজোর সংখ্যা ৯৭টি। এর মধ্যে আদালতের অনুমতি রয়েছে ৪৪ টির। বাকি পুজো কমিটিগুলি স্থানীয় থানা, বিডিও অফিস এবং পঞ্চায়েতের গাইডলাইন মেনে পুজো করে থাকে।
কেশববাড়ের পুজোতে কি আদলতের অনুমতি রয়েছে? পুজো উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, আদালতের অনুমোদন না থাকলেও তাঁরা থানার গাইডলাইন মেনেই পুজো করেন। পুলিশ সূত্রের খবর, পুজোর সপ্তাহখানেক আগে থানার গাইডলাইনগুলি জানানো হয়। পাঁশকুড়া থানার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এ বছরের জন্য শীঘ্রই পুজো কমিটিগুলিকে ডেকে গাইডলাইন ঠিক করা হবে। বিডিও এ সঙ্গে যুক্ত থাকবেন।
কী ধরনের গাইডলাইন সাধারণ থাকে? পুলিশ জানাচ্ছে, মণ্ডপের প্রবেশ এবং প্রস্থানের এলাকায় যথেষ্ট জায়গা থাকা, দমকলের গাড়ি যাতায়াতের রাস্তা, ওই রাস্তা না থাকলে জলের পাম্প মজুত রাখা, ভিড় নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাগুলির উপরে নজর রাখা হয়।
ওই সব বিষয়গুলি কি কেশববাড়ের পুজোর কমিটি নজর রেখেছে? উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, অন্য বারের মত এবারও ভিড় সামলাতে ৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করবেন তাঁরা। থাকবে সিভিক ভলান্টিয়ারও। পুজো মণ্ডপ পর্যন্ত দমকলের গাড়ি যাওয়ার রাস্তা নেই ঠিকই, তবে বিপর্যয় এড়াতে মণ্ডপের পাশে চারটি পাম্প মজুত রাখা হবে। সেই সঙ্গে বিসর্জন নিয়ে কোনও রকম বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুজোর পর বড় প্রতিমাটি জলে দিয়ে গলিয়ে ফেলা হবে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।