শহর জুড়ে থিমের পুজোর রমরমা বেশ কিছু বছর ধরেই। সেই তালিকায় এ বার নাম লেখাচ্ছে সোনাগাছিও। উত্তর কলকাতার মসজিদ বাড়ি স্ট্রিটের ছোট্ট মণ্ডপ থেকে এ বছর পরিবেশ বাঁচানোর বার্তা দেবেন যৌনকর্মীরা।
আমাজনের জঙ্গলে আগুন থেকে চেন্নাইয়ের জলসঙ্কট, প্লাস্টিকের বিপদ থেকে অবাধ বৃক্ষনিধনের পরিণতি— কাগজে-টিভিতে এ সব কিছুরই খবর শুনেছেন যৌনকর্মীরা। বুঝেছেন, পরিবেশ রক্ষায় এখনই কিছু করা না হলে সামনেই আসছে বিপদ, যা থেকে রক্ষা পাবে না যৌনপল্লিও। পরিবেশ বাঁচানোর বার্তা দেওয়ার চিন্তা-ভাবনার শুরু সেই তখন থেকে। ‘বিশ্ব উষ্ণায়ন কমাও, পৃথিবী বাঁচাও’— এই ভাবনার আঙ্গিকেই তাই এ বছর সেজে উঠবে তাঁদের একচিলতে পুজোমণ্ডপ। যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির সচিব এবং যৌনকর্মী কাজল বসু বলছেন, ‘‘যত দিন এগোচ্ছে ততই পরিবেশ বদলাচ্ছে। গাছ কাটা, জল অপচয়ের পরিমাণ বাড়ছে। উষ্ণায়নের ফলে আবহাওয়ার বদল ঘটছে, ঘনঘন বজ্রপাতে লোক মরছে। তাই পরিবেশ নিয়ে শুধু যৌনকর্মীদেরই নয়, সমাজের সকলকেই সচেতন করতে চাইছি। এ বছর উষ্ণায়নই আমাদের অসুর।’’
এক সময়ে আর-পাঁচটা পুজো মণ্ডপে উৎসবের দিনে ব্রাত্য থাকতেন এই যৌনকর্মীরা। সেই থেকেই এক সময়ে ইচ্ছে হয় নিজেদের দুর্গাপুজো করার। ২০১৩ সালে সোনাগাছির একটি ঘুপচি ঘরে পুজো শুরু হলেও তাতে মন ভরছিল না। ২০১৫ সালে পুজো সরিয়ে আনা হয় এলাকার একটি মন্দির চত্বরে। কিন্তু যৌনকর্মীদের ইচ্ছে ছিল, প্রকাশ্যে রাস্তার উপরেই পুজো করার। ২০১৭ সালে সেই ইচ্ছেকে মান্যতা দেয় হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশমতো গত দু’বছর মসজিদ বাড়ি স্ট্রিটের আট বাই কুড়ি ফুটের মণ্ডপেই নারীশক্তির আরাধনা করেন এই যৌনকর্মীরা। এ বছরেও ইতিমধ্যেই কুমোরটুলিতে শিল্পী প্রশান্ত পালের কাছে প্রতিমার বায়না দেওয়া হয়ে গিয়েছে। বাকি প্রস্তুতিও চলছে পুরোদমে। এমনকি, সোনাগাছির গণ্ডি ছাড়িয়ে এ বছর থেকে পুজো শুরু করছেন দুর্গাপুর, আসানসোল, বসিরহাট ও বিষ্ণুপুরের যৌনকর্মীরাও।
তবে হঠাৎ থিমের ভাবনা কেন? কাজল জানাচ্ছেন, গত বছর আহিরীটোলার একটি পুজো কমিটি থিম করেছিল যৌনকর্মীদের উপরে। তাঁদের জীবনযুদ্ধের কাহিনী ছত্রে ছত্রে ফুটে উঠেছিল সেই মণ্ডপে। তার পর থেকেই থিমে মন মজেছে সোনাগাছির ‘লক্ষ্মী-দুর্গা’দের। তাই এ বার নিজেদের পুজোতেই থিমের প্রবেশ। এক যৌনকর্মীর সন্তান রতন দলুই জানাচ্ছেন, তাঁর হাতে আঁকা পোস্টার ও পেন্টিংয়ে মণ্ডপ ও তার আশপাশের এলাকা সাজিয়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। লালপেড়ে সাদা শাড়ির প্রতিমার হাতে অস্ত্রের বদলে থাকবে পরিবেশ সংক্রান্ত বার্তা— কোনও হাতে গাছ লাগানোর, কোনও হাতে জল অপচয় বন্ধ করার পোস্টার। রতনের কথায়, ‘‘মাত্র আড়াই লাখের বাজেটে অনেক কিছু করা তো সম্ভব নয়। তবে তার মধ্যেও থিমের মাধ্যমে যদি যৌনকর্মীদের মধ্যে জল-গাছ নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা যায়, মন্দ কী!’’