গণেশ ঠাকুরের চিরাচরিত রূপ নেই। গণপতি এখানে একেবারে অন্য রকম। তামিলনাড়ুর তিরুভারুর জেলার আদি বিনায়ক মন্দিরে দূর দূরান্ত থেকে ভক্তেরা এই মন্দিরে গণপতির সেই ভিন্ন রূপ দর্শনে। এ ছাড়াও পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তিকামনাতেও মানুষ এই মন্দিরে পুজো দেন।
পুরাণ বলে, ক্রুদ্ধ শিব গণেশের মাথা কেটে ধড় থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন। এর পরে তাঁর শরীরে বসানো হয় হাতির মাথা। তাই তিনি গজানন। বিভিন্ন মন্দিরে সেই রূপেই আজও পুজো করা হয় তাঁকে। ব্যতিক্রম তিরুভারুর জেলার এই আদি বিনায়ক মন্দিরে। এখানে গণেশের মুখ মানুষেরই আদলে। ভক্তদের বিশ্বাস, শিব তাঁর মাথা কেটে ফেলার আগের রূপেই এখানে পুজো করা হয় সিদ্ধি বিনায়ককে।
এই মন্দির ঘিরে রয়েছে আরও নানা বিশ্বাস, নানা কাহিনি। ভক্তেরা মানেন, মহাগুরু অগস্ত্য স্বয়ং প্রতি ‘সংকষ্টি চতুর্থীতে’ আদি বিনায়কের পূজা করেন। এমনও বিশ্বাস রয়েছে যে, এখানে গণেশের পূজা করলে নাকি পারিবারিক সম্পর্কে শান্তি আসে এবং বিনায়কের আশীর্বাদে শিশুদের বুদ্ধি তীক্ষ্ণ হয়।
জনশ্রুতি বলে, রামচন্দ্র তাঁর পিতার আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করার সময়ে তাঁর রাখা চারটি চালের লাড্ডু পোকায় পরিণত হয়েছিল। মহাদেবের কাছে রামচন্দ্র এর সমাধান চাইলে, তিনি তাঁকে আদিবিনায়ক মন্দিরে পূজা দেওয়ার পরামর্শ দেন। শিবের আদেশে, রামচন্দ্র তাঁর পিতার আত্মার শান্তির জন্য আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে এই মন্দিরে পূজার কাজ সম্পন্ন করেন। কথিত যে, পুজোর সময়ে ধানের চারটি বল শিবলিঙ্গে রূপান্তরিত হয়। এই চারটি শিবলিঙ্গ আদি বিনায়ক মন্দিরের কাছে মুক্তেশ্বর মন্দিরে স্থাপন করা হয়েছে।
জনশ্রুতি বলে, তার পর থেকেই সাধারণ মানুষও পূর্বপুরুষদের শান্তির জন্য এই মন্দিরে পূজা দিতে শুরু করেন। এই কারণেই এই মন্দিরটি তিলতর্পণপুরী নামেও পরিচিত। তিলতর্পণের অর্থ পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা। পুরী কথার অর্থ শহর। নদীর তীরে পূর্বপুরুষদের শান্তির জন্য পূজা করা হলেও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান হয় মন্দিরের ভিতরে। মন্দিরটি সাধারণ চেহারার হলেও এর স্থানমাহাত্ম্যা অসীম।
অবস্থান/কী ভাবে যাবেন: হাওড়া থেকে তিরুভারুর। তিরুভারুর স্টেশন থেকে ৫ কিমি দূরত্বে মন্দির। কাছের বিমানবন্দর তিরুচিরাপল্লি।
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।