ভারত সর্বধর্ম সমন্বয়ে নিরপেক্ষ এক দেশ, যেখানে সব পুজো-অনুষ্ঠানে থাকে সকল মানুষের অধিকার।
হিন্দুর পুজোতেও, তা সে দুর্গাপুজো হোক কিংবা কালীপুজো, হয় সকল ধর্মের মানুষের সমাগম।
এ তো গেল পুজোর কথা। কিন্তু যদি প্রশ্ন ওঠে হিন্দু দেব-দেবীর ভক্তিগীতি রচনার, তা হলেও কি তাতে শুধু হিন্দুদের অধিকার?
একদমই নয়। এবং তার জলজ্যান্ত প্রমাণ বাংলার শ্যামাসঙ্গীত, যা রচনা করেছেন দুই বাংলার বহু মুসলিম কবি। কালীপুজোর প্রাক্কালে জেনে নেওয়া যাক কিছু এমন মুসলিম কবির নাম, যাঁরা তাঁদের কলমের ছোঁয়ায় কিছু শ্যামাসঙ্গীতকে করে গিয়েছেন অবিস্মরণীয়।
‘কালো মেয়ের পায়ের তলায় দেখে যা আলোর নাচন’ - মুসলিম কবিদের মধ্যে শ্যামাসঙ্গীত শুনলেই যাঁর কথা সবার আগে মনে পড়ে, তিনি কাজী নজরুল ইসলাম। বলা হয়, তাঁর লেখা শ্যামাসঙ্গীতের সংখ্যা রামপ্রসাদ সেনের চেয়েও বেশি।
তারপর আসে মুন্সি বেলায়েত হোসেনের কথা। কালীর প্রতি অটুট ভক্তি থেকেই তিনি লিখেছিলেন, ‘কালী কালী বলে কালী, সহায় হইলে কালী/ নাথেরে পাইবে কালী/ ঘুচিবে এ বিরহানল’। তাঁর এই শ্যামাসঙ্গীত রচনাই তাঁকে দিয়েছে কালীপ্রসন্ন উপাধি।
আর এক মুসলমান কবির কথা না বললেই নয়। তিনি হাসন রাজা। শ্যাম এবং শ্যামা দু’জনের জন্যই তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। তাই তো লিখতে পেরেছিলেন, ‘আমার হৃদয়েতে শ্রীহরি/ আমি কি তোর যমকে ভয় করি/ শত যমকে তেড়ে দিব, সহায় শিবশঙ্করী’।
মির্জা হুসেন আলী শ্যামা-প্রেমে এমন বিভোর ছিলেন যে, তিনি মৃত্যুকেও ভয় পেতেন না! মৃত্যুকে উদ্দেশ্য করেই তিনি যেন গেয়েছেন, ‘আমি তোমার কি ধার ধারি/ শ্যামা মায়ের খাসতালুকে বসত করি/ বলে মৃজা হুসেন আলী, যা করেন মা জয়কালী/ পুণ্যের ঘরে শূন্য দিয়ে, পাপ নিয়ে যাও নিলাম করি’।
আর এক সাধক কবি ছিলেন নোয়াখালির প্রসিদ্ধ মেহের কালীবাড়ির সাধক কেয়ামত আলি খাঁ মুন্সি। তিনি লিখেছেন, ‘হরিকে কালী বলা ভুল/ কালীকে হরি বলা ভুল/ আমি ভেবে ভেবে হলাম পাগল, পেলাম না তার মূলামূল’।
শুধু যে শ্যামাসঙ্গীত রচনা, তা নয়। চট্টগ্রামের কবি সা বিরিদ খাঁ মা কালীর ভক্তিরসে বিভোর হয়ে রায়গুণাকর ভারতচন্দ্রের মতো লিখে ফেলেছিলেন ‘কালিকামঙ্গল কাব্য’।
ভক্তি কখনওই ধর্মের থেকে বড় হয় না– সেটাই বার বার প্রমাণ করে দিয়েছেন বিশিষ্ট কবিরা। তাঁদের কথা ও সুরের মাধ্যমে। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।