ছটপুজোর দিনে মহিলাদের সিঁদুর পরার এক বিশেষ গুরুত্ব আছে।
এই দিন মহিলারা কমলা রঙের সিঁদুর পরেন। সাধারণত দেখা যায় মাথা থেকে নাক পর্যন্ত লম্বা সেই সিঁদুরের টান।
বলা হয়, সিঁদুরের রেখা যত দীর্ঘ হয়, স্বামীর আয়ু তত দীর্ঘ।
অনেকেরই বিশ্বাস, বিবাহিতাদের সিঁদুর-রেখা লম্বা হওয়া উচিত, যাতে সকলে তা দেখতে পান। এ কারণেই ছটপুজোর সময়ে যে মহিলারা উপোস করেন, তাঁরা মাথা থেকে নাক অবধি সিঁদুর পরেন।
তবে এই নিয়মের নেপথ্যে একটি পৌরাণিক কাহিনিও রয়েছে। কথিত, একদা কোনও এক জঙ্গলে একটি বসতি ছিল। সেখানে বাস করতেন বীরভান নামে এক যুবক, যিনি একাধারে ছিলেন শিকারী এবং যোদ্ধা।
গ্রামের বাইরে থাকত ধীরমতি নামে এক কন্যা। এক বার ধীরমতিকে বন্য প্রাণীরা ঘিরে ধরলে বীরভান তার জীবন রক্ষা করে। দু’জনেই একে অপরের প্রতি মুগ্ধ হয়ে একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন।
তখন বিয়ের মতো প্রথা প্রচলিত ছিল না। সেই জঙ্গলে কালু নামে এক জন বাস করত, যে ধীরমতি ও বীরভানের একসঙ্গে থাকা পছন্দ করত না।
একদিন বীরভান ও ধীরমতি শিকারের জন্য গভীর জঙ্গলে যায়। কোনও শিকার না পেয়ে দু’জনেই হতাশ ও তৃষ্ণার্ত বোধ করে। বীরভান জলের সন্ধানে গেলে ধীরমতী তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
এ সুযোগে কালু বীরভানকে আক্রমণ করে। ধীরমতি বীরভানের চিৎকার শুনে ছুটে আসে এবং তাকে আহত অবস্থায় দেখে একটি কাস্তে তুলে কালুর দিকে ছুড়ে মারে। কালুও ধীরমতিকে ছুরি দিয়ে মারে।
ধীরমতি বীরভানকে বুকে জড়িয়ে ধরে। স্ত্রীর সাহসিকতার প্রশংসা করে বীরভানও তার রক্তে মাখা হাত তার স্ত্রীর মাথায় রাখে।
সেই রক্ত-রেখার অনুকরণে সিঁদুরকে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও বীরত্বের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই ছট উৎসবে নাক পর্যন্ত সিঁদুর লাগানোর প্রথারও অন্তর্নিহিত কারণ হল স্বামীর দীর্ঘায়ু, প্রতিপত্তি ও সম্মান কামনা করা। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।