মা দুর্গা মর্ত্য থেকে কৈলাসে ফেরার পরেই বাঙালির মন বিষাদে ঢেকে যায়। তবে তার মধ্যেও মনের কোথাও উঁকি মারে আনন্দের রেশ। কারণ এ বার যে পালা আর এক মেয়েকে শঙ্খ বাজিয়ে বরণ করে নেওয়ার, মা লক্ষ্মীকে ঘরে স্বাগত জানানোর।
অনেক পরিবারই, বিশেষত বাঙালরা মূর্তির বদলে পুজো করেন লক্ষ্মীর সরা। মাটির সরার উপর আঁকা থাকে মা লক্ষ্মীর ছবি। এই সরারও কিন্তু আছে অনেক প্রকারভেদ। কেনার আগে তাই ভাল করে জেনে নিন সরা কত রকমের হয়।
সুরেশ্বরী- সুরেশ্বর ছিল অবিভক্ত বাংলার ফরিদপুর জেলায় মাদারীপুর এলাকার একটি গ্রাম। সরা চিত্রকলার জন্মস্থান রূপে যাকে চিহ্নিত করা হয়। এই সরার ছবি তিন ভাগে বিভক্ত। উপরের অংশে শিব, মাঝামাঝি দুর্গা অবস্থান করছেন সপরিবার এবং দেবী লক্ষ্মী সরার শেষ অংশে আঁকা। এটি সূক্ষ্ম অঙ্কন শৈলীর জন্য বিখ্যাত। বাংলাদেশে সুরেশ্বরী সরা তৈরি হয় ফরিদপুরের চন্দ্র-মুখডোবা অঞ্চলে।
গণকি সরা- গণক ঠাকুরের হাতে তৈরি হয়েছে এই সরা। প্রাচীনকালে পূর্ববঙ্গের গ্রামে অন্তত একটি ঘর গণক থাকতেন। তাঁদের বংশগত পেশা ছিল জন্ম রাশিফল তৈরি, ভাস্কর্য ও প্রতিমা চিত্রাঙ্কন করা। ব্রাহ্মণদের এই বিশেষ সম্প্রদায় মন্ত্রোচ্চারণের পর প্রতিমা তৈরি করত। তাঁরা সরা চিত্রকর্মের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। তাঁদেরই নামানুসারে এই বিশেষ সরার নামকরণ করা হয়েছিল ‘গণকী সরা’। যার পটভূমি প্রায় সব সময়েই লাল। সরার চিত্র দু’টি ভাগে বিভক্ত, মা দুর্গা তার পরিবারের সঙ্গে রয়েছেন প্রথম ভাগে এবং নীচের ভাগে মা লক্ষ্মী। সূক্ষ্ম অঙ্কনে ফুটিয়ে তোলা হয় ছবি। এতে দেবী দুর্গা সর্বদা অস্ত্রে সজ্জিত। বর্তমানে শরিয়তপুরের (অবিভক্ত ফরিদপুরের অংশ) কৈলারা গ্রামের ভাস্কররা বাংলাদেশে এটি তৈরি করেন।
ফরিদপুরী সরা- ফরিদপুরী সরাও দু’ভাগে বিভক্ত। উপরের দিকে মা দুর্গা থাকেন আর নয়তো লক্ষ্মী-নারায়ণ বা রাধা-কৃষ্ণ। নীচের ভাগে মা লক্ষ্মীকে চিত্রিত করা হয়।
ঢাকাই সরা- ঢাকাই সরায় মা লক্ষ্মীকে একাকী বাণিজ্যের জন্য ব্যবহৃত একটি নৌকায় বসে থাকতে দেখা যায়। অতীতে একে ময়ূরপঙ্খী নৌকা বলা হত। অনেক ঢাকাইয়া পরিবারে কলা পাতা থেকে ক্ষুদ্রাকৃতির নৌকা তৈরি করে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোয় দেবীকে নিবেদনের প্রথা রয়েছে। বাংলাদেশে এই ধরনের সরা তৈরি হয় বিক্রমপুরের বাসাইল ও আবিরপাড়ায়।
পরবর্তীকালে সরার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কৃষ্ণনগর এবং কুমোরটুলিতে দু’টি পৃথক অঙ্কন শৈলীর উদ্ভব হয়।