রঘু ডাকাত নিয়ে প্রচুর কাহিনি চালু রয়েছে বাংলার গ্রামগঞ্জে, শহরের আনাচকানাচে। জমিদারবাড়িতে আগাম রক্তে লেখা চিঠি পাঠিয়ে রঘু ঘোষণা করত নিজের আগমনের সতর্ক বার্তা।
এরপর রাত বাড়লে দেড় দু’মাইল দূর থেকে ‘হা রে রে হা রে হা রে’ শব্দে সকলের হাড়হিম করে দিত। রঘু ছিল সে যুগের রবিন হুড, ধনিদের লুঠ করে গরিবদের সাহায্য করত।
সে কালের ডাকাতেরা বাড়ির মহিলাদের মাতৃজ্ঞানে শ্রদ্ধা করত। রঘু ডাকাত ডাকাতিতে বেরোনোর আগে কালীপুজো করত। এ কথা তো সকলেরই জানা। কিন্তু কোন মন্দির? জানেন সেই তথ্য?
নিজের বুকের রক্ত দিয়ে পুজো সারত ডাকাত সর্দার। তারপর দলের সবাই গলায় জবা ফুলের মালা ঝুলিয়ে, কানে জবাফুল দিয়ে ‘হা রে রে হা রে রে’ শব্দ তুলে বের হত ডাকাতির উদ্দেশে। সেই সব ডাকাত-কালী আজও রয়ে গিয়েছে ঝাঁ-চকচকে শহুরে আবাসনের পাশেই!
এমনই এক মন্দির হল কাশিপুরের ‘রঘু ডাকাতের কালী বাড়ি’। কলকাতার কাশীপুর অঞ্চলে অবস্থিত মা কৃপাময়ী কালীর এক সুবিশাল মন্দির।
১৯০৪ সালে ধনি ব্যবসায়ী বামনদাস মুখোপাধ্যায় এটির প্রতিষ্ঠা করেন। এটির বর্তমান ঠিকানা ৮৫, কাশীপুর রোড। সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৩৯ সালে কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এখানে ওঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
শোনা যায়, ভাগীরথী নদী দিয়ে এই মন্দিরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে রামপ্রসাদ মাকে গান শোনাতেন।
নেপথ্যে এক অত্যাশ্চর্য কাহিনি রয়েছে। এক জলা জায়গায় দু’টি পাথর পড়ে থাকতে দেখে রঘু ডাকাত। মনে একটু সন্দেহ হলেও পাথর দু’টি ওখানেই ফেলে ডেরায় ফিরে আসে রঘু।
রাতে নাকি রঘু স্বপ্নাদেশ পায়, ওটি মহাদেব ও কালী বিগ্রহ, ওই পাথর দু’টি উদ্ধার করে পুজো করতে হবে এবং সঙ্গে ডাকাতিও ছেড়ে দিতে হবে। সেই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে রঘু ডাকাত।
পরবর্তীকালে মন্দিরের জরাজীর্ণ অবস্থা হলে কাশীপুর গান সেল ফ্যাক্টরি মন্দির পুনরুদ্ধারে এগিয়ে আসে। কথিত কাছে, মন্দিরের প্রধান পুরোহিত দেবীর স্বপ্নাদেশ পাওয়াতেই শুরু হয় মন্দির পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজ। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।