ভোক্কাট্টা! আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। কলকাতার আকাশ জুড়ে তো বটেই, গোটা রাজ্যের আকাশ-বাতাস মুখরিত হবে সে দিনটা সকাল থেকে বিকেল। আজ্ঞে হ্যাঁ, এক্কেবারে সামনেই বিশ্বকর্মা পুজো। আর বিশ্বকর্মা পুজো মানেই সে দিনটা জুড়ে ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব বাংলায়।
বিশ্বকর্মা পুজোর দিন বাংলায় ঘুড়ি ওড়ানো শুরু হয়েছে ১৮৫০ সাল থেকে। কলকাতা ও গ্রাম বাংলার কতিপয় বিরাট ধনী জমিদাররা ঘুড়িতে টাকা বেঁধে ওড়ানো শুরু করেন। তাঁদের বিশ্বকর্মা পুজোর উৎসব ও পারিবারিক শুভ কামনার উদ্দেশ্যে।
ঘুড়ির আবিষ্কার কিন্তু চীন দেশে। আজ থেকে ২৮০০ বছর আগে। মোজা এবং লু বান নামে দুই চিনা, তাঁরাও ওই উৎসব পালন আর শুভ সময়ের প্রার্থনায় বিশ্বে সর্ব প্রথম ঘুড়ি ওড়ান আকাশে। এমনকি বৈজ্ঞানিক বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন উড়ন্ত ঘুড়ির মধ্যেই আকাশে বিদ্যুৎ চিনেছিলেন প্রথম!
আবার বিশ্বকর্মা পুজো এবং ঘুড়ি ওড়ানোর ভেতর সম্পর্কের পৌরাণিক ব্যাখ্যাও যুগ যুগ ধরে বর্তমান। পুরাণ মতে বিশ্বকর্মা দেবলোকের কারিগর। ঋক বেদ অনুসারে বিশ্বকর্মা স্থাপত্য এবং যন্ত্রবিদ্যা বিদ্যার জনক। কৃষ্ণের বাসস্থান, গোটা দ্বারকা নগরী নির্মাণ করেছিলেন বিশ্বকর্মা দেবতা। যে জন্য শ্রমিক থেকে ইঞ্জিনিয়র সমাজের কাছে বিশ্বকর্মা পুজোর দিনটার গুরুত্ব চিরকাল অপরিসীম।
আর অন্য সব দেবতাদের জন্য উড়ন্ত রথ বানিয়ে ছিলেন বিশ্বকর্মা। সেটা স্মরণ করতেই বিশ্বকর্মা পুজোর দিন কলকাতা তথা গোটা রাজ্যের আকাশে ঘুড়ি ওড়ানো হয়। যদিও অন্যান্য রাজ্যে ঘুড়ি ওড়ানোর পৃথক দিন আছে।
গুজরাতের উত্তরায়ণ উৎসব, তামিলনাড়ুতে পঙ্গাল আর ভারতের অনেক রাজ্যেই মকর বা পৌষ সংক্রান্তির দিন ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা পর্যন্ত হয়। আর ঘুড়ির সে কত নাম! কত তার প্রকার ভেদ!
আমাদের এখানে সব চেয়ে জনপ্রিয় ঘুড়িগুলির নাম পেটকাটি, চাঁদিয়াল, মোমবাতি ময়ূরপঙ্খী, বগ্গা। এ গুলো তো চেনা চেনা মুখ। বাকি? অন্য খানের ঘুড়ি? নাম শুনবেন তার?
অবাক হবেন।— ডায়মন্ড ঘুড়ি, বার্ন ডোর, ডোপিরো, রোলার, স্লেড, ডেল্টা, বক্স এবং অক্টোপাস ঘুড়ি। তাদের আকারও সব অন্য রকম।
স্লেড ঘুড়ি যেমন অনেকটা প্যারাসুটের মতো দেখতে। অক্টোপাস ঘুড়ি আবার হুবহু অক্টোপাসের মতো চেহারা! সমুদ্র সৈকতে অক্টোপাস ঘুড়ি উড়তে খুব দেখা যায়।
মজা কী জানেন, আমাদের এই বাংলার দিঘা, এমনকি পাশের রাজ্য পুরীতে সমুদ্র তীরে গেলে এই সময় অক্টোপাস ঘুড়ি ওড়ে!