Story of first Durga Puja

সত্য থেকে সেন, পাল যুগ, রামচন্দ্রের পুজো, দুর্গা পুজোর ইতিহাসে হরেক কাহিনি

রামচন্দ্রের অকালবোধনের পরে পূজা কিন্তু কখনও বন্ধ হয়নি। কখনও শরৎ কালে, তো কখনও বসন্তকালে, মা কিন্তু নিয়মিত পূজা পেয়ে এসেছেন।

Advertisement

তমোঘ্ন নস্কর

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:৩৩
Share:

দুর্গাপূজার প্রাচীনত্ব কথাটি বললেই সবাই তাহেরপুরের জমিদার রাজা কংস নারায়ণ আর তার শাস্ত্র লকার ভট্টাচার্য-তিলক রমেশ শাস্ত্রীর কথাই বলেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, তাই যদি হয়, তবে বঙ্গের বিভিন্ন প্রত্নক্ষেত্র খুঁড়ে এই যে মহিষমর্দিনী মায়ের এত মূর্তি পাওয়া গিয়েছে! সেন যুগের যে ব্রোঞ্জের দশভূজা মূর্তি পাওয়া গিয়েছে, তা কি মিছে?

Advertisement

না মিছে নয়। একচালার প্রতিমা বা সন্তান-সহ মায়ের আগমনের প্রতিমা রূপকল্পটি রাজা কংসনারায়ণ এবং রমেশ শাস্ত্রীর বিধানমূলীয় আধুনিক দুর্গা পূজা।

রামচন্দ্রের অকালবোধনের পরে পূজা কিন্তু কখনও বন্ধ হয়নি। কখনও শরৎ কালে, তো কখনও বসন্তকালে, মা কিন্তু নিয়মিত পূজা পেয়ে এসেছেন। কুষাণ যুগে প্রাপ্ত মূর্তিদের মধ্যে মাতৃ মূর্তিকায় স্পষ্ট দেখা যায়, দ্বিভূজা মা মহিষের পিঠে বসে তাকে বধ করছেন। গুপ্ত যুগের একাধিক পাঞ্জায় বা মাতৃকাশীলে মায়ের দশভুজা আয়ুধ(অস্ত্র) হস্তা মূর্তি দেখতে পাওয়া যায়।

Advertisement

পাল যুগে আমরা একাধিক এমন দেবী মূর্তি পাই, যেখানে মা পূর্ণ অবয়বে অবস্থান করছেন। তাঁর দশ হাতে দশ অস্ত্র। তিনি সিংহারূঢ়া এবং মহিষাসুরকে বধ করছেন। কথিত, অষ্টমী তিথিতে মায়ের বীরাষ্টমী পূজা অর্থাৎ অস্ত্র পূজা করে তবেই রাজা দশমী অন্তে অপরাজিতা পূজার পরে যুদ্ধযাত্রায় বেরোতেন।

পাল-সেন যুগ আক্ষরিক অর্থেই বাংলায় এক অন্যতম স্বর্ণখচিত যুগ। গৌড়েশ্বর শ্রী বল্লাল সেন নিজহস্তে ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। দেবী ঢাকেশ্বরী দশভূজা মা দুর্গা, ঢাকেশ্বরীর নামেই ঢাকার নামকরণ। আপন ক্ষেত্র বরেন্দ্রভূমে বল্লাল সেন স্থাপন করেন মাতা গৌড়চণ্ডীকে ( মালদহের মা জহুরাকালী)।

ভাবছেন কেবলই কি তথ্য? না, শুধু তথ্য নয়, প্রত্নতাত্ত্বিক বিভিন্ন নিদর্শন এবং তার সঙ্গে প্রাচীন পূজাগুলি যথা- গঙ্গারিডির দশভুজা মূর্তি থেকে আজও পূজিতা মা শ্যামরূপা।

হ্যাঁ, ইছাই ঘোষের আরাধ্যা মা শ্যামরূপা আজ ১১০০ বছর ধরে পূজা পাচ্ছেন। দশভূজা দেবীর প্রাচীন স্বর্ণ মূর্তিটি চুরি হয়েছে। কিন্তু গড়ে পুজো হচ্ছে তাঁর শ্বেতপাথরের মূর্তিতে। ইছাই ঘোষের গড়, দেউল আর মা মঙ্গলচণ্ডীর কথা তো সর্বজনবিদিত।

মালদার সুকুল রাজবাড়ির স্বপ্নাদিষ্ট মা সিদ্ধেশ্বরী আজ ৯৯১ বৎসর ধরে পূজিতা। নবম্যাদি কল্পারম্ভ থেকে পূর্ণ নিয়মে হয় মায়ের পূজা। সে পূজার ইতিহাসের গভীরতায় যাচ্ছি না।

ঝাড়খণ্ডের শিখরভূম রাজবংশের কুলদেবী শ্রী শ্রী রাজরাজেশ্বরী মাতা ৮০০ বছরের প্রাচীন। শ্রীরামচন্দ্রের পূজা বিধি অনুসরণ করেই মায়ের পূজা হয়। এই বংশের প্রবাদ পুরুষ রাজা কল্যাণশেখর মা কল্যাণেশ্বরীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। মা কল্যাণেশ্বরীই মা দুর্গা।

গোপভূম ভাল্কি রাজ্যের মা শিবাখ্যা, দশভুজা দনুজদলনী। সেই মূর্তি আবার পাওয়া গিয়েছিল খাজুরডিহির জমিদার জগৎ সিংহের থেকে, প্রায় ৭০০ বছর আগে। মা শিবাখ্যা নামেই এতকাল পূজা পেয়ে আসছেন দেবী।

বর্গী বীর ভাস্কর পণ্ডিতের অসমাপ্ত দুর্গাপূজা এখন কিংবদন্তি। কাজেই, মা আদতেই গৌড়েশ্বরী। স্মরণাতীত কাল ধরে এখানে পূজিতা দেবী। শারদে আর বসন্তে তিনি আসেন বাপের বাড়ি। সব মানুষ তাঁর আপনার জন, বাপের ঘরের আত্মীয়।

ঋণ

বাংলার দুর্গাপূজার প্রাচীনত্ব / যুগ ভিত্তিক আলোচনা ও প্রাচীনতম পাঁচ দুর্গাপূজা— সৌম্যদীপ বন্দোপাধ্যায়, কাঞ্জিক ইতিহাসের পাতায় দুর্গাপূজা— গ্রাম-নগর বার্তা, বিবিধ প্রবন্ধ এবং বঙ্গের ইতিহাস, গিরিশচন্দ্র বেদান্ততীর্থ গ্রন্থাবলি।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement