শিল্পবোধ, রুচি, ভাললাগা, নান্দনিকতা যখন একসঙ্গে মিলেমিশে যায় তখনই একটা সুন্দর সুসজ্জিত অন্দরমহলের সৃষ্টি হয়। সবসময়েই যে অনেক খরচ করে অন্দরসজ্জা করতে হবে, তাহলেই দারুণ লাগবে, এমনটা নয়।
গান ভালবাসেন, ভাল গান করেন, কিংবা গানের শিল্পী, সঙ্গীত নিয়ে এক একজনের মনের মধ্যে এক একরকম আবেগ। ভাললাগার সঙ্গে নিজের ঘরকে সাজিয়ে তুলতে অনেকেই চান। একটা গানঘর কীভাবে সেজে উঠতে পারে? আজ বরং সে কথা নিয়েই আলোচনা করা যাক।
বসবার ঘরে সোফার পরিবর্তে একটা লো হাইট প্ল্যাটফর্ম বানানো যায়। যেটা মাটি থেকে উচ্চতায় খুব বেশি হলে ইঞ্চি আটেক হবে। একটা চওড়া সিঁড়ি থাকবে চারপাশ জুড়ে। আর সেটি যদি একটা বড় পিয়ানোর মত দেখতে হয়? এর শেপটাও প্রচলিত আকারের হবে না। একটু কার্বিং হবে, পিয়ানোর মত, ঢেউ খেলানো। নীচের চওড়া স্টেপটি জুড়ে হরাইজেন্টালি এবং ভার্টিকালি পিয়ানোর কালো-সাদা স্টাইপস থাকবে সারিবদ্ধ ভাবে। কেমন হবে তাহলে? একেবারে অন্যধরনের আইডিয়া। এবং এই লো হাইট জায়গা যেমন বসার জন্যে ব্যবহার করা যাবে, সঙ্গে সঙ্গে দরকারে শোওয়াও যাবে। শুধু তাই নয়। উচ্চতায় ১০ ইঞ্চি মতো হলে, তার ভিতর বক্স করে নেওয়া যেতে পারে। ঢেউ খেলানো ডিজাইনের সঙ্গে মিলিয়ে পাশাপাশি কয়েকটা ড্রয়ার করে নেওয়া যায়। এই ড্রয়ারগুলোয় বেশ কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস রাখা যেতে পারে। কিম্বা ড্রয়ারের অংশ বাদ দিয়ে ভিতরের বাকি অংশটায় বক্স করা যায়। এই কম উচ্চতার বক্সটির উপরে পাঁচ ইঞ্চি পুরু গদি থাকবে। গদির উপরের চাদর সবসময় যেন গোঁজা থাকে। না থাকলে নীচের পিয়ানোর ডিজাইনের উপরে এসে পড়বে।
আরও পড়ুন: বই পড়া, আলসেমি, নস্টালজিয়ার সঙ্গী থাকুক ‘ইজিচেয়ার’
পিয়ানো অথবা গীটারের বইয়ের র্যাক বানিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
এত গেলো একটা লো হাইট পিয়ানো ডিজাইনের বসার জায়গা, অথবা খাট, যা-ই বলি না কেন। একটা ঘর সেজে উঠবে পুরোপুরি মিউজিকের ঘর হিসেবে। এমন অনেকেই করতে চান। ঘরে নানা মিউজিক ইন্সট্রুমেন্ট রাখবার জন্যে চারপাশে সুন্দর ব্যবস্থা করে নেওয়া যায়। যেমন কিছু বাদ্যযন্ত্র আছে বেশ ভারী। সেতার, তানপুরা, ইত্যাদি। সেগুলোকে রাখবার জন্যে মোটামুটি ফ্লোর লেভেল থেকে প্যাডেস্টাইল বানিয়ে তার উপর বাদ্যযন্ত্রগুলো সাজিয়ে রাখা যেতে পারে।
হারমোনিয়াম, তবলা এরকম বাদ্যযন্ত্র কিছুটা উচ্চতার চওড়া ক্যাবিনেটের উপরেও রাখা যেতে পারে। এছাড়া দোতারা, একতারা, গিটার এমন বাদ্যযন্ত্র দেওয়ালে ঝোলানো অবস্থায় রাখা যায়। মোট কথা, ঘরের যে কোনও একটা দিক প্রায় গ্যালারি করে তোলা যায়, যার মধ্যে থাকবে নানা বাদ্যযন্ত্র।
আরও পড়ুন: ঘর হয়ে উঠুক মোহময়ী, আলোর উৎস আড়াল করবেন কী ভাবে
যে ঘর গানঘর হিসেবে সেজে উঠবে সে ঘরে অন্য আসবাব বেশি না থাকাই ভাল। দেওয়ালে এলকোব বা কুলুঙ্গি বানিয়ে তার মধ্যে ছোট ছোট মিউজিক ইন্সট্রুমেন্ট রাখা যেতে পারে। যেমন ছোটো গিটার, বাঁশি, একতারা,দোতারা এমন কিছু। কুলুঙ্গির ভিতরে আলো থাকবে। বেশ ভাল লাগবে দেখতে। যে দেওয়ালের দিকে বাদ্যযন্ত্রের গ্যালারি বানাবেন, সেই দেওয়ালে যেন কোনও দরজা বা জানালা না থাকে। মানে একটা টানা দেওয়াল। কোনও প্রবেশপথ যেন না কাটে। অর্থাৎ পুরো চওড়া অংশটাই যেন পাওয়া যায় বাদ্যযন্ত্র রাখবার জন্যে।
দেওয়ালে এলকোব বা কুলুঙ্গি বানিয়ে তার মধ্যে ছোট ছোট মিউজিক ইন্সট্রুমেন্ট রাখা যেতে পারে।
মিউজিক রুম বা বসার ঘর সাউন্ড প্রুফ হলে ভালো হয়। অনেকে রেকর্ডিং ইউনিট বানিয়ে নিতে চান, এক্ষেত্রে এই ঘরটিতে নিজের মত করে একটা ছোট ঘরোয়া স্টুডিও বানিয়ে নেওয়া যেতে পারে। দরজা একটু ভারী হবে। চারদিকে প্যানেলিং করবেন। পারলে ফোম প্যাডিং করে নেওয়া যায়। ফলস সিলিং করে নিলে কিছুটা সুবিধা হয়। জানালা থাকলে স্লাইডিং গ্লাস উইন্ডো। এবং চারদিকে খুব ভাল করে কভার থাকে যেন। যাতে বাইরের আওয়াজ ঘরে ঢুকতে না পারে। জানালায় ভারী কটন পর্দা দেবেন।