ইট, কাঠ, কংক্রিটের দুনিয়ায় সবুজের ছোঁয়া প্রায় সোনার পাথরবাটির সমান। তবুও তারই মাঝে ইচ্ছা হয় একটা ছোট ফ্ল্যাটে কিংবা বাড়িকেও সবুজে সবুজে ভরিয়ে দিতে। জায়গা কম হওয়ায় বড় গাছ লাগানোর অসুবিধাল থাকেই। অগত্যা বারান্দা, ছাদ, বাড়ির সামনের ছোট্ট একটু বাগান, নিদেনপক্ষে রান্নাঘরের জানলার কাছটুকুই ভরসা।
বারান্দার কথা ধরা যাক প্রথমেই। কী ভাবে রাখবেন গাছ সেখানে? গ্রিলের সঙ্গে টব রাখার জন্য কিছু জায়গা প্রথম থেকেই লাগিয়ে নিতে পারেন। লোহার গোল গোল চাকতির মতো সেই সব চাকতি লাগিয়ে সেখানে ঝুলিয়ে রাখা যায় টব। গ্রিলের ভিতরের দিকের অংশেও করতে পারেন, আবার বাইরের দিকের অংশেও করতে পারেন। বাইরের দিকের অংশে করলে গ্রিলের ফাঁকগুলো দেখে নেওয়াটা দরকার, যাতে জল দিতে অসুবিধে না হয়। গ্রিলের ফাঁক যেন হাত গলানোর পক্ষে যথেষ্ট থাকে। শুধু তাই নয়, টবটাকে মাঝেমধ্যে বের করে এনে গাছের যত্ন করার জন্যে সেই ফাঁকটুকুও থাকা চাই।
এ ছাড়া বারান্দায় সারিবদ্ধ ভাবে মেঝেতে লেয়ার করে গাছ রাখা যেতে পারে। মাটির ভারী টব ব্যবহার না করে প্লাস্টিক বা ফাইবারের টব, কিংবা সেরামিক টব, নিদেনপক্ষে ফেলে দেওয়া বালতি বা প্লাস্টিকের মগ— যেখানে ইচ্ছে গাছ বসিয়ে দেওয়া যায়। শুধু চাই নান্দনিকতা। গাছগুলো সারিবদ্ধ ভাবে লাগিয়ে তো দেওয়া হল।কিন্তু সৌন্দর্য রক্ষা কি হল? এ ক্ষেত্রে এই সব ফেলে দেওয়া জিনিসের গায়ে সুন্দর করে তুলির টান দিয়ে, রংয়ের ছোঁয়া বুলিয়ে তারপর মাটি দিয়ে গাছ লাগাতে পারেন। দেখতে দারুন লাগবে।
আরও পড়ুন:আকাশ, সমুদ্র কিংবা একটা আস্ত খেলার মাঠ ঘরের মধ্যে!
বারান্দায় গাছ রাখার আগে যে বিষয়গুলো দেখে নেওয়া খুব দরকার, তা হল সূর্যের আলো ভাল ভাবে বারান্দায় আসছে কি না। জলের ব্যবস্থা সঠিক রয়েছে কি না, অর্থাৎ বারান্দার মেঝেতে ঢাল ঠিক মতো রয়েছে কি না। টবের জল মেঝেতে জমে থাকা অস্বাস্থ্যকর। এতটুকু জলও যেন জমে না থাকতে পারে বারান্দায়। ক্রমাগত টবের জল বারান্দায় পরে শ্যাওলা যেন না জমে যায় বারান্দার মেঝেতে, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। তাই কিছু দিন পর পরই টবের পজিশনে বদল আসাটা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত।
আরও পড়ুন:টিনএজ সন্তানের ঘর সাজানোর আগে মাথায় রাখুন এ সব জরুরি বিষয়
কোন কোন গাছ লাগাবেন সেটাও একটা বিষয়। এ ক্ষেত্রে নানা রকম পাতাবাহার, অরোকেরিয়া, ড্রাসিনা, রাবার, বনসাই এ সব গাছ লাগাতে পারেন। দেখতে বেশ ভাল লাগে। ইচ্ছে হলে মাঝেমধ্যে বারান্দায় রাখা গাছগুলোকে ঘরে এনেও রাখতে পারেন।
যদিও এখন অনেকেই বারান্দাতেও ছোট্ট কিচেন গার্ডেন বানিয়ে নিচ্ছেন। যেখানে বেগুন থেকে শুরু করে ক্যাপসিকাম, লঙ্কা, টম্যাটো, ফুলকপি, লেবু, জলপাই, শশা, সিম এমন অনেক গাছই লাগিয়ে নেওয়া যায়। আর শুধু তাই-ই নয়, রীতিমতো সেসব গাছ থেকে সব্জিও পাওয়া যায়।
বারান্দায় সিজনাল ফুলের গাছও বেশ সুন্দর লাগে দেখতে। গাঁদা, গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, রজনীগন্ধা, জুঁই এসব গাছ লাগালে একটা মুগ্ধতায় ভরে ওঠে সকাল-বিকেলগুলো। যেটাই হোক,বাড়িতে সবুজের ছোঁয়া ও অক্সিজেনের অফুরন্ত ভাঁড়ার মজুত রাখার জন্য গাছ লাগানোটা খুবই জরুরি। তাই ছোট ঘর হোক বা বড় বাড়ি গাছের জায়গাটুকু রেখেই সাজান ঘরবাড়ি।