পুজো, উৎসব, ফুল - এই তিনটে যেন একে অন্যের পরিপূরক, সমার্থক। যেন সেই ছোটবেলাকার গল্পের অরুণ-বরুণ-কিরণমালা। একটা না থাকলে বাকি দুই অসম্পূর্ণ! এ বার পুজোয় সেই ফুলের সাজেই যদি উৎসব আসে আপনার ঘরে?
উৎসব এলে প্রায় সমস্ত বাড়িই সেজে ওঠে নতুন করে। সবটা সাফসুতরো হয়ে ঝকঝকে। কোথাও এবার গোটা বাড়িতে নতুন রঙের প্রলেপ। আর পুজোর সময়ে রকমারি ফুল দিয়ে ঘরদোর সাজানো তো এখন প্রায় বাঙালি বাড়ির চেনা ছবি।
সেই 'ফুল-সজ্জা' কী ভাবে, কেমন করে সাজালে সবচেয়ে সুন্দর দেখায়, তার সন্ধান নিয়ে এল আনন্দবাজার অনলাইন।
গাঁদার সাজ: ফুলের মধ্যে সবচেয়ে সহজ এবং জনপ্রিয় হল গাঁদা ফুলের সজ্জা। প্রধানত হলুদ এবং কমলা রঙের এই ফুলের মালার সঙ্গে টাটকা সবুজ পাতায় ঘরে আসুক তরতাজা ভাব। সঙ্গে হালকা, অর্থাৎ কম পাওয়ারের বাল্ব জুড়ে ঘর সাজালে বিশেষত সন্ধেবেলায় প্রাণবন্ত দেখতে লাগে। বড় হলঘরের মাঝখানে কার্পেট বিছিয়ে তার ঠিক মধ্যিখানে গাঁদা দিয়ে সাজালেও অসাধারণ দেখায়। গাঁদা ফুল ২-৩ দিন তাজা থাকে। তাই রোজ রোজ ফুল পাল্টানোর দরকার পড়ে না।
গোলাপের সাজ: গোলাপ ফুল প্রিয় নয়, এমন মানুষ খুবই অল্প আছে। কথাতেই আছে, যে মানুষ গান, শিশু আর গোলাপ ভালোবাসে না, সে খুন করতে পারে! গোলাপের সুবাস এই ফুল দিয়ে ঘরদোর সাজানোর ক্ষেত্রে একটা বিরাট বাড়তি প্রাপ্তি। এই সজ্জায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় গোলাপের পাপড়ি। লাল গোলাপের পাপড়ি মনকে একটা অদ্ভুত তৃপ্তি দেয়, ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি করে পরিবারে।
একটা মাটির সুসজ্জিত বিরাট পাত্র অথবা তামার পাত্র, কিংবা পেতলের পাত্রে পরিষ্কার জল ঢালুন পাত্রের অর্ধেকে। তাতে হাল্কা করে লাল ও হলুদ রঙের গোলাপের পাপড়ি সযত্নে জলের ওপরে ভাসিয়ে দিন। যাতে গোলাপের সমস্ত পাপড়ি জলের ওপরে ভাসতে থাকে। এবার ওই পাত্র বাড়িতে আপনার পছন্দসই বিভিন্ন স্থানে, ঘরের কোণে, হলঘরের ঠিক মাঝখানে রেখে দিন। ঘরদোরের জেল্লাই বেড়ে যাবে নিমেষে। ঘরের মেঝে জমকালো দেখাবে। গোলাপের সুগন্ধে বাড়ি ম ম করবে। গোলাপ সর্বাধিক ২ দিন তাজা থাকে। তার পরে ফুল পাল্টাতে হবে অবশ্যই। গোলাপ তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়।
জুঁইয়ের সাজ: জুঁই ফুল ১ দিনের বেশি তাজা থাকে না। তাই উৎসবের মরসুমে ঘরদোর এই ফুল দিয়ে সাজালে আপনাকে রোজ ফুল পাল্টাতে হবে। জুঁইয়ের মালা সাধারণত ছোট হয়। বাড়ির ঠাকুরঘরে তাই এর ব্যবহার বেশি। প্রতিমা সাজানোর জন্য জুঁইয়ের মালার খুব চল। ঠাকুরঘরে প্রদীপের চারপাশে জুঁই ফুল ছড়িয়ে সাজালে অপরূপ দেখায়। সজ্জার রঙে বৈপরীত্য আনতে জুঁইয়ের মালার মাঝেমাঝে বড় সাইজের তুলসী পাতা এবং গোলাপের কুঁড়ি লাগালে আরও সুন্দর দেখতে লাগে। রং আর সুবাসে জমজমাট যুগলবন্দি! জুঁই ফুলের মনমাতানো সুগন্ধে আর সাজে ঘরের চেহারাই পাল্টে যায়। একটা ইতিবাচক আবহ তৈরি হয় বাড়িতে।
পদ্ম ফুলের সাজ: দুর্গাপুজোয় নানা ফুলের মধ্যে পদ্মের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। কথিত আছে, রাবণ নিধনের জন্য রাম অকালবোধনে দেবী দুর্গার আরাধনার সময়ে পুজোয় ১০৮টা পদ্ম ফুল নিবেদন করছিলেন। তখনই দেখেন একটা পদ্ম কম, ১০৭টা ফুল আছে। কোথাও সেটি না পেয়ে রাম নিজের একটি চোখ উপড়ে মা দুর্গাকে নিবেদন করতে যান। কারণ, রামের চোখের আর এক নাম পদ্মলোচন। তখন স্বয়ং মা দুর্গা রামকে নিরস্ত্র করে বলেন, রামের ভক্তির পরীক্ষা নেওয়ার জন্য তিনিই একটা পদ্ম ফুল লুকিয়ে রেখেছিলেন। এবং সেই ১০৮ নম্বর পদ্ম ফুলটি নিজের হাতে রামকে ফিরিয়ে দেন দেবী।
পদ্ম ফুল ঘরদোরের চেয়ে মন্দিরে বেশি ব্যবহৃত হয়। দুষ্প্রাপ্য এবং দামি এই ফুল পুকুরের জলে যেখানে ফোটে, তার আশপাশে সাপ থাকে বেশি। পদ্মের অত্যাশ্চর্য গন্ধে নাকি সাপের নেশা ধরে যায়। সে জন্য পদ্ম ফুল যারা তোলে, সাপের কামড় খাওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি। গোলাপের মতো পদ্ম ফুলের পাপড়ি দিয়ে ঘর সাজালেও চমৎকার দেখায়। পদ্ম ফুল ২-৩ দিন তাজা থাকে। তারপর আস্তে আস্তে শুকোতে থাকে। সেজন্য পদ্ম ফুল দিয়ে সাজালে সেই একই ফুল দিনকয়েক রেখে দেওয়া যায়।
জবার সাজ: জবার সবচেয়ে পরিচিত জাত হল লাল রঙের ফুল। এ ছাড়াও নানা রঙে এই ফুল ফোটে - হলুদ, কমলা, গোলাপী, সাদা। বাড়ি বা ঘরদোর জবা দিয়ে সাজানোর সেরা কম্বিনেশন হল সাদা-লাল এবং লাল-কমলা রঙের ফুলের সংমিশ্রণ। ছড়ানো আকৃতির তামার প্লেটে এরকম দু'রঙের জবা ফুল রেখে সেটা দিয়ে ঘর সাজালে বাড়ি জমকালো দেখায়। জবা অবশ্য আধ বেলা বড়জোর চব্বিশ ঘণ্টা তাজা থাকে। সে জন্য এই ফুল দিয়ে ঘরদোর সাজালে সকাল-সন্ধে নতুন ফুল দিতে হবেই। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।