অফিসে ব্যাপক কাজের চাপ? এক কাপ গরম কফি খেয়ে তাজা হয়ে ফের কাজে ঝাঁপালেন! বন্ধুবান্ধবদের আড্ডায় হাতে একটা কোল্ড কফির গেলাস থাকলে গল্পগুজব আরও জমজমাট হয়ে ওঠে!
সঙ্গীকে নিয়ে সান্ধ্যভ্রমণে বেরিয়ে কোথাও বসে এক কাপ ব্ল্যাক কফি না খেলে আবার প্রেম আড়ে বহরে বাড়ে! অনেকেরই ঘুম থেকে উঠেই কফির মগ হাতে তুলে না নিলে সারা দিন ভালো কাটে না! পরীক্ষার মুখে রাত জেগে পড়ার ফাঁকে এক কাপ কফি না হলে চলে না!
সকাল থেকে রাত, আনন্দ থেকে ক্লান্তি, প্রেম থেকে বিরহ- সবেতেই কফি, তোমাকে চাই! হ্যাঁ, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাতেও গরম বা কোল্ড কিংবা ব্ল্যাক কফি পান মনুষ্য শরীরের জন্য উপকারী যেমন, মনের জন্যও তেমনই ভাল।
কফিতে থাকা ক্যাফিন, শক্তি বা 'এনার্জি' বর্ধক। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। ব্ল্যাক কফি 'টাইপ-২' ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
স্মৃতিভ্রংশ ও পারকিনসন্স রোগের ঝুঁকিও কমায় কফি। কলোরেক্টাল ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা কমায়। কফিতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট মন ভাল রাখে।
কিন্তু কফি খেলে যে সব উপকার মেলে, তার চেয়ে অনেক বেশি অপকার হয় দৈনিক অতিরিক্ত কফি খেলে। শারীরিক ও মানসিক, দু'দিকেই অপকার। আসলে কফি খাওয়ার একটি নিয়ম আছে। তার বাইরে গেলেই স্বাস্থ্যকর কফি হয়ে উঠতে পারে বিপজ্জনক!
যেমন ঘরে তৈরি করা ৮ আউন্সের এক কাপ কফিতে সাধারণত ১০০ মিলিগ্রাম ক্যাফিন থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষের জন্য মোটামুটি ৪০০ মিলিগ্রাম ক্যাফিন দৈনিক শরীরে গ্রহণ করা নিরাপদ।
তার বেশি দৈনিক পান করলে অনিদ্রা, খিটখিটে মেজাজ, পেট খারাপের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। সোজা কথায়, সারাদিনে ৩-৪ কাপের বেশি কফি খাওয়া উচিত নয়।
রোজ সকালে খালি পেটে কফি খেলে পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড তৈরি হয়। এই ক্ষতিকারক অ্যাসিড পাকস্থলীতে প্রচুর পরিমাণে জমলে তার থেকে হজমজনিত কঠিন রোগ হতে পারে।
কফির বীজে ক্যাফিন ছাড়াও অন্যান্য অম্ল জাতীয় উপাদান থাকে, যা নিয়মিত বেশি কফি খেলে পাকস্থলীর গায়ে ক্ষত সৃষ্টি করে আলসার ও গ্যাসট্রিক রোগ হয়। অতিরিক্ত কফি খেলে কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা কমতে থাকে। তার থেকে কিডনির রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ।
কফি এনার্জি বা শক্তি বৃদ্ধি করলেও একই সঙ্গে স্নায়ুতন্ত্রের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে বেশি কফি খেলে যৌনকার্যের মতো শরীরের স্বাভাবিক উদ্দীপনা নষ্ট হতে পারে।
দীর্ঘ দিন ধরে বেশি কফি খেলে শরীরের রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়, যার থেকে ব্লাড প্রেশার রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। যাঁদের হজমের গোলমাল আছে, তাঁদের কফি থেকে দূরে থাকাই ভাল। এ ক্ষেত্রে তাঁরা আদা দিয়ে চা খেতে পারেন, কিন্তু কফি নয়।
আবার যাঁরা অনিদ্রায় ভোগেন, তাঁরা বেশি কফি খেলে ঘুমোতে পারবেন না। মাথাব্যথা, অম্লতায় ভুগবেন। খিটখিটে মানসিকতার হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
এ জন্য দিনে সর্বাধিক তিন কাপ কফি সেবনে সন্তুষ্ট থাকুন। পারলে ব্ল্যাক কফি খাওয়া অভ্যেস করুন।