লক্ষ্মী পুজো ২০২২
মা দুর্গা পাড়ি জমিয়েছেন কৈলাশে। এ বার মর্ত্যে মা লক্ষ্মীর আগমণের পালা। দুর্গাপুজোর ঠিক পরেই আশ্বিন মাসের শেষে পূর্ণিমা তিথিতে লক্ষ্মী দেবীর আরাধনা করা হয় শহর জুড়ে। ধন, সম্পদ, বৈভবের আশায় মায়ের কাছে প্রার্থনা করেন আপামোর সাধারণ জনতা। তবে শুধু মাত্র আশ্বিনেই নয়, বছরের অন্যান্য সময়েও পূজিতা হন দেবী লক্ষ্মী — ভাদ্র, পৌষ, চৈত্র। কোথাও মা লক্ষ্মীকে মূর্তি হিসেবে, কোথাও বা সরায় আঁকা পটে পুজো করা হয়। তবে, আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে হওয়া লক্ষ্মী পুজোর এক আলাদা বিশেষত্ব রয়েছে।
এই লক্ষ্মী পুজোকে বলা হয় কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো। ‘কোজাগরী’ নামের একটি বিশেষ অর্থ রয়েছে।‘কোজাগরী’ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘কঃ জাগর’ শব্দ-বন্ধ থেকে । ‘কঃ’ মানে কে, ‘জাগর’ শব্দের অর্থ হল জেগে আছ। দু’য়ে মিলে দাঁড়ায় ‘কে জেগে আছ’? প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, এই দিন পূর্ণিমার রাতে স্বর্গ থেকে মর্ত্যে নেমে আসেন দেবী লক্ষ্মী৷ যে ভক্ত রাত জেগে তাঁর আরাধনা করেন, তাঁকে দু’হাত ভরে আশীর্বাদ করে যান তিনি ৷ তাঁর ঘর ভরে ওঠে ধনসম্পত্তিতে।
একটু পুরনো ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে লক্ষ্মীপুজোর দিন সন্ধেবেলাতেই মায়ের আরাধনা করা হত। আসল নিয়ম এটাই। তবে সময় বদলেছে। বহু মানুষ বর্তমানে সুবিধার জন্য সকালের দিকে বা বিকেল নাগাদ পুজো সেরে নেন। তবে এখনও লক্ষ্মীপুজোর দিন সন্ধেবেলায় বাঙালির ঘরে, তুলসীতলায় জ্বলে ওঠে সন্ধ্যাপ্রদীপ। দশমীর বিসর্জনের পরে ফের শাখ, কাঁসরের ঘণ্টায় মুখরিত হয় আকাশ-বাতাস। রাত জেগে চলে মাতৃ আরাধনা। পূর্ণিমার সেই রাতে মা আশীর্বাদ করে যান তাঁর ভক্তদের। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘বাংলার ব্রত’ বইতে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো সম্পর্কে বিশদে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই বইতেই তিনি জানিয়েছেন যে, মা লক্ষ্মীর কাছে ভাল ফলের কামনা করাই এই পুজোর নৃতাত্ত্বিক কারণ।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের অংশ।