এনার্জি ড্রিঙ্ক। পরিভাষায় শক্তিবর্ধক পানীয়। ঘরে ঘরে অবশ্য ছেলে-বুড়ো থেকে শুরু করে মা-মাসিমারা এই সুস্বাদু ঠান্ডা পানীয়কে এনার্জি ড্রিঙ্ক-ই বলে থাকেন সখেদে। কারণে, হয়তো বা তার চেয়েও বেশি অকারণে যখনতখন খেয়ে নেন।
কিন্তু মুশকিলটা হল, বেশির ভাগই আমরা জানি না যে, সাধারণ ঠান্ডা নরম পানীয় আর এনার্জি ডিঙ্কসের মধ্যে কতটা পার্থক্য। যদিও সাধারণ ঠান্ডা পানীয়ের মতোই পাড়ার পান-সিগারেটের দোকান থেকে শুরু করে ছোট-বড় মল্, রেস্তরাঁ-হোটেল, প্রায় সর্বত্র আজকাল এনার্জি ড্রিঙ্কসের ছোট-বড় বোতল, ক্যান আপনি চাইলেই কিনতে পারেন। কয়েকটা বিশেষ ব্র্যান্ড ছাড়া অধিকাংশ এনার্জি ড্রিঙ্কের দামও আহামরি কিছু নয়। ফলে আরও বেশি কিনে খাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ মানুষের।
বেশি এনার্জি ড্রিঙ্ক খেলে শরীরে কী মারাত্মক ক্ষতি হয়, জানেন কি? চিকিৎসকদের মতে, পরিশ্রমের ফলস্বরূপ শরীরের ক্যালোরি একটা বিশেষ মাত্রায় ক্ষয় ঘটলে তবেই মানুষের এনার্জি ড্রিঙ্কস খাওয়ার দরকার পড়ে। তার জন্য খেলোয়াড়-মহলে এই বিশেষ পানীয়ের বেশি কদর এবং প্রয়োজন। কিন্তু এখন মুড়ি-মিছরির এক দর হয়ে যাওয়ার মতো বিরাট কোহলি আর পাড়ার পঞ্চা বা বাড়ির খোকা, সবাই এনার্জি ড্রিঙ্ক খাচ্ছে। শরীরে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খোঁজখবর না নিয়েই। সেই খোঁজখবর দিচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন।
তার আগে জানিয়ে রাখা ভাল, ব্রিটেনের ভারতীয় বংশোদ্ভুত প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক সেই দেশে অনূর্ধ্ব আঠারো বছর, এমনকি দরকারে ষোলো বছরের কম বয়সিদের এনার্জি ড্রিঙ্কস বিক্রির ওপর নাকি নিষেধাজ্ঞা জারির কথা ভাবছেন। কারণ, গবেষণা এবং সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এনার্জি ডিঙ্কসের সবচেয়ে বেশি কুফল আঠারো বছরের কম বয়সিদের ওপর পড়ে। অথচ তারাই সব চেয়ে বেশি এনার্জি ড্রিঙ্কস খায় ব্রিটেনে। এমনকি গোটা ইউরোপের ভেতর সবচেয়ে বেশি এই অঞ্চলেই এমনটা ঘটে। এর মধ্যেই সে দেশের অনেক দোকান স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আঠারো বছরের নীচের ছেলেমেয়েদের এনার্জি ড্রিঙ্কস বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু তাতেও নাকি বিশেষ সুফল মিলছে না! ভেন্ডিং মেশিনে ‘কয়েন’ ফেলে ছেলেমেয়ের দল দিব্যি একের পর এক খেয়ে চলেছে এনার্জি ড্রিঙ্ক।
এবার জানানো যাক, এনার্জি ড্রিঙ্কের ক্ষতিকারক দিকগুলি ঠিক কী কী?
প্রথম কথা হল, সমস্ত এনার্জি ড্রিঙ্কে অত্যন্ত উঁচু মাত্রায় সুগার ও ক্যাফিন থাকে। ফলে এনার্জি ড্রিঙ্কস বেশি খেলে, শরীরে স্থূলতা, দাঁতে ক্ষয়রোগ, নিয়মিত মাথার যন্ত্রণা, ঘুমের ব্যাঘাত, মধুমেহ অর্থাৎ ডায়াবেটিসের মতো গুরুতর রোগগুলি দেখা দেয়।
শিক্ষক সংগঠনগুলি সমীক্ষা করে এমনও প্রমাণ পেয়েছে, কম বয়সি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যারা বেশি এনার্জি ড্রিঙ্ক খায়, ক্লাস রুমে তাদের আচরণ গড়পড়তা অন্য ছাত্রছাত্রীদের তুলনায় খারাপ হয়!
এনার্জি ড্রিঙ্কগুলিতে থাকা অত্যাধিক মাত্রায় ক্যাফিন গর্ভবতী মহিলা এবং যে মায়েদের বুকের দুধ তাঁর শিশুরা সেবন করে, সে রকম মহিলাদের রক্তচাপ বৃদ্ধি করে। তাতে হৃদরোগের আতঙ্ক তৈরি হয়।
অথচ, সমস্যা হল, এনার্জি ড্রিঙ্কে বেশি মাত্রায় সুগার ও ক্যাফিনের উপস্থিতিই ওই পানীয় মারফত পরিশ্রমে ক্লান্ত মানুষের শরীরে ফের শক্তি বৃদ্ধি করে। এরকম একটা ছোট এনার্জি ‘শট’-য়েই (৬০ মিলিলিটার ক্যান) ১৬ মিলিগ্রাম অবধি ক্যাফিন থাকে। আর সব চেয়ে বড় ৩০০ মিলিলিটার এনার্জি ড্রিঙ্কসের ক্যানে ক্যাফিন পাওয়া গিয়েছে ৩২ মিলিগ্রাম পর্যন্ত।
এ ব্যাপারে পুষ্টিবিদ রিম্পা বসু বললেন, ‘‘বাজারে পাওয়া এনার্জি ড্রিংকের থেকে বাড়িতে বানানো গুড়ের জল, নুন চিনির জল বা ছাতুর শরবত অনেক বেশি উপকারি।’’
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।