ছবি: সংগৃহীত
ভূত-প্রেত ইত্যাদিকে ধর্মের আড়ে বেঁধে দিয়ে বাধ্যতামূলক ও প্রতীকীরূপে করে দেওয়া হলেও মূল কথা হল দু’টি-
এক- এই চোদ্দো রকম শাকের চাষ বহতা কৃষিপ্রধান সংস্কৃতিকে ইঙ্গিত করে। এই চোদ্দোটি ভিন্ন প্রকারের, ভিন্ন গোষ্ঠীভুক্ত শাকের সহজলভ্যতা পক্ষান্তরে সুন্দর-সুগঠিত কৃষি ব্যবস্থাকেই ইঙ্গিত করে। অর্থাৎ এই চোদ্দো শাককে সহজলভ্য করতে হলে কৃষিব্যবস্থার প্রতি নজর দিতে হবে। যত্ন নিতে হবে ধরিত্রীর। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই সমস্ত শাকগুলি মাটিতে নাইট্রোজেনের উপাদান বাড়ায়। ফলে মাটির উর্বরতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়।
দুই- কার্তিক মাসের ঋতু পরিবর্তনগত সমস্যা যেমন, শ্লেষ্মা, অগ্নিবৃদ্ধি, আড়ষ্টতা প্রভৃতির বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধের দেওয়ালটিকে সুদৃঢ় করা। এ ছাড়াও, কার্তিক মাস হল চৌকাঠ। এটি পেরিয়ে গেলেই চার মাসের লম্বা শীতকাল। তাই সেই সময়ের সঙ্গে লড়াই করার জন্য শরীরকে আগাম পোক্ত করাও অন্যতম কারণ। তাই শুধুমাত্র এই নির্দিষ্ট দিনেই চোদ্দো শাক নয়, বরং মাঝেমধ্যে তা খাওয়ার প্রয়োজনীয়তাকেই পক্ষান্তরে ইঙ্গিত করা হচ্ছে।”
শাক পরিচয়
“ওলং কেমুকবাস্তুকং সার্ষপঞ্চ নিম্বং জয়াং। শালিঞ্চিং হিলমোচিকাঞ্চ পটুকং শেলুকং গুড়ুচীন্তথা। ভন্টাকীং সুনিষণ্ণকং শিবদিনে যদন্তি যে মানবাঃ প্রেতত্বং না যান্তি কার্তিকদিনে কৃষ্ণে চ ভূতে তিথৌ।’’
কৃত্যকৃত্ব/রঘুনন্দন
শ্লোকটি মূলত চোদ্দো শাকের নাম ও তত্ত্ব। শ্লোকে উল্লেখিত চোদ্দো শাক-
১. ওল ডাঁটা
২. কেউ
৩. বথুয়া
৪. কালকাসুন্দ
৫. সরষে
৬. নিম
৭. জয়ন্তী
৮. শালিঞ্চে বা শিঞ্চে
৯. গুলঞ্চ
১০. পটল বা পলতা
১১. শেলুকা
১২. হিলমোচিকা বা হেলেঞ্চা
১৩. ভাঁট বা ঘেঁটু
১৪. সুনিষণ্ণক বা শুষনি
চাষের দিকটি মাথায় রেখে বঙ্গের অনাবাদি অন্যান্য শাকগুলিও খাওয়া যেতে পারে। যেমন- আমরুল, কলমি, কুলেখাড়া, খারকোন বা ঘাটকোল, ব্রাহ্মী, ঢেঁকিশাক, নুনিয়া বা নুন খুড়িয়া, তেলাকুচা, দণ্ডকলস, গিমা, থানকুনি, কাঁটানটে বা খৈরাকাটা, কচু, ঘাগরা বা হাগড়া (বিষাক্ত), মালঞ্চ, কালমেঘ বা আলুই, বাসক, চুকোর বা টক ভেন্ডি, কস্তরী, মোরগফুল।
ভূতচতুর্দশীর রাত ঝলমল করবে চোদ্দো পিদিমের আলোয়। সে দিনটাই কিন্তু চোদ্দো শাক খাওয়ারও দিন। মনে আছে তো?
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।