সপ্তাহ ঘুরলেই পুজো। তোড়জোড় তুঙ্গে। ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী/নবমী, দশমী, প্রত্যেক দিনে নতুন জামার বাছাই পর্ব শেষ। কবে কোথায় পেটপুজো হবে, সেই তালিকা তৈরি। ত্বক-চুল ঘষামাজাও চলছে। কিন্তু সেই সঙ্গে শরীর-স্বাস্থ্যের যত্নে কী কী করছেন?
শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে মন দিতে গিয়ে নিজের যত্নে খামতি থেকে যাচ্ছে না তো? তা হলেই মুশকিল! যতই শাড়ি-গয়নায় মন দিন, পুজোয় শরীর বিগড়ে গেলে বা চেহারায় ক্লান্তি ধরা পড়লে কিন্তু পুরো সাজটাই মাটি। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ঘরোয়া একটি সহজ টোটকা জানা থাকুক সকলের।
কয়েক ফোঁটা তেলই হতে পারে মুশকিল আসান। সে নারকেল তেল হোক বা সরষের তেল, কাঠবাদামের তেল হোক বা ঘি। নাভিতে মালিশ করলেই ডজন ডজন সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন আপনি। আয়ুর্বেদে এই টোটকার অনেক গুণ।
নাভিকে বলা হয় শরীরের কেন্দ্রবিন্দু। যার সঙ্গে যুক্ত থাকে শরীরের বিভিন্ন শিরা। তাই তাতে তেল মালিশ করলে প্রভাব পড়বে নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গে। এ বার তাহলে জেনে নিন নাভিতে তেল মালিশ করার সঠিক উপায় কী।
ব্যবহার করতে পারেন যে কোনও তেল। কয়েক ফোঁটা একটি পাত্রে নিয়ে সামান্য গরম করুন। আঙুলের ডগায় তেল লাগিয়ে আলতো করে ম্যাসাজ করুন নাভি এবং তার চার পাশে। প্রতি রাতে ঘুমোনোর আগে এ ভাবে নাভিতে তেল মালিশ করলে সবথেকে ভাল ফল পাওয়া যায়।
দিদা-ঠাকুমারা এই প্রাচীন উপশম-পন্থায় বিশ্বাসী ছিলেন। বিশেষত শিশুদের নাভি মালিশ করা হয় এখনও। তাতে মেলে একাধিক সুফল। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্করাও এই পদ্ধতি অবলম্বন করে দেখতে পারেন। এই টোটকায় কী কী উপকার পেতে পারেন? কিংবা কোন তেল ব্যবহারে কী উপকারিতা? রইল তারই হদিশ।
১। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: নাভির সঙ্গে যুক্ত থাকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিরা। তাই এই অংশে তেল মালিশ করলে রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। নিমের তেল বা চা গাছের তেল (টি ট্রি অয়েল) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভাবে কার্যকর।
২। হজমের উন্নতি: নাভি হল শরীরের কেন্দ্রস্থল। এই জায়গায় তেল মালিশ পাচনতন্ত্রকে সক্রিয় করতে সাহায্য করে। ক্যাস্টর অয়েল, অলিভ অয়েল বা নারকেল তেল মালিশ করলে হজমশক্তি উন্নত হয়। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি মেলে।
৩। মাসিকের ক্র্যাম্প উপশম: নাভির চার পাশে তেল মালিশ বদহজম, ঋতুচক্রকালীন পেট ব্যথার ক্ষেত্রে শরীরের ওই অঞ্চলে রক্তপ্রবাহকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে। ফলে ব্যথার উপশম হয়। নাভিতে তেল মালিশের ফলে জরায়ুতে রক্ত প্রবাহ বাড়ে।
৪। উদ্বেগ এবং দুশ্চিন্তা হ্রাস: নাভির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ভ্যাগাস স্নায়ু। যা প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করে। ল্যাভেন্ডার তেল বা ক্যামোমাইল তেল মনকে শান্ত করতে এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।
৫। গর্ভধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি: নাভির যোগ রয়েছে দেহের প্রজনন অঙ্গগুলির সঙ্গে। ক্যাস্টর অয়েলের মতো তেল মালিশ করলে সেই অঙ্গগুলিতে রক্তপ্রবাহ বাড়তে পারে। যার ফলে গর্ভধারণের ক্ষমতার উন্নতি ঘটে৷
৬। ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি: নাভির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু রক্তনালী। তাই সেখানে তেল মালিশ করলে ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। ফলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ হয় এবং ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। ত্বকের জেল্লাও ফিরে আসে অনেক ক্ষেত্রে। তা ছাড়া ব্রণ, একজিমা এবং সোরিয়াসিস প্রতিরোধে সাহায্য করে এই মালিশ।
৭। অনিদ্রা দূর: ঘুমোনোর আগে নাভিতে তেল মালিশ করলে অনিদ্রা দূর হতে পারে। ফলে ঘুমের উন্নতি হয়। স্বাভাবিক ভাবেই এর ফলে শরীর থেকে মালিন্য দূর হয়ে রোগমুক্তি ঘটে।
৮। শ্বাসযন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি: নাভিতে তেল মালিশ শ্লেষ্মা নিঃসরণে সাহায্য করে এবং শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ দূর করতে পারে। কাশি, শ্বাসকষ্টের মতো অস্বস্তি থেকেও আরাম দেয় এই টোটকা।
৯। গাঁটের ব্যথা উপশম: নাভির সঙ্গে যুক্ত শিরা গাঁটে গাঁটে রক্ত সরবরাহ করে। ইউক্যালিপটাস তেল বা পেপারমিন্ট তেল ম্যাসাজে রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয় এবং জয়েন্টের ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
১০। চুল গজানো: নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয়। চুলের ফলিকলে পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে এই টোটকা। এর ফলে চুল স্বাস্থ্যকর এবং মজবুত হয়। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।