কারও রক্তে চিনির মাত্রা কমতে চায় না, কারও আবার রক্তচাপ নিজের ইচ্ছে মতই বাড়ে কমে। কেউ হাঁটু-কোমরের ব্যথায় নাস্তানাবুদ। সঙ্গে আছে কোভিড সংক্রমণের ভয়। অনেক বাড়ির প্রবীণদেরও হুঁশ নেই। পুজোর দিনে প্যান্ডেলে ঘুরে বেড়ানোর পরিকল্পনা করে রেখেছেন এখন থেকেই। তবে এ বারের কোভিড অতিমারিতে পরিবারের প্রবীণতম মানুষদের পুজোর সময় প্যান্ডেলে ঘুরে ঠাকুর দেখতে যাওয়া মানা, এমনই জানালেন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ দেবকিশোর গুপ্ত।
কোভিড-১৯ ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে বিশেষজ্ঞদের একটাই পরামর্শ ভিড় এড়িয়ে চলা। এ দিকে বাঙালির সেরা উৎসব পুজোয় ভিড় ইতিমধ্যে চিন্তায় ফেলেছে প্রশাসনকে।
জুতোর দোকানে ভিড় দেখে চিকিৎসকরা চিন্তিত। কেরালায় ওনামে মানুষের ঢল নামায় দক্ষিণের এই রাজ্যে কোভিড সংক্রমণ বেড়েছে ৭১২%। পুজোর ১৫ দিনের মধ্যেই কলকাতা-সহ আমাদের রাজ্যে নভেল করোনার প্রকোপ বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন দেবকিশোর গুপ্ত-সহ সব চিকিৎসকরাই। তাঁদের পরামর্শ, এ বারের পুজো হোক ভার্চুয়াল। এ সময়ে বাড়ির খুদে মানুষ থেকে তাদের দাদু-দিদা সকলের মন খুশিতে ভরা। বেশি বয়সে অনেকেরই রক্তচাপের সমস্যা, ডায়াবিটিস, হার্টের সমস্যা থাকে। চিকিৎসকের পরামর্শ ওষুধ ও সঠিক ডায়েটের সঙ্গে কোনও প্রয়োজনে বাইরে বেরতে হলে (যেমন ব্যাঙ্ক কিংবা ডাক্তার দেখানো ইত্যাদি) সঠিক মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দিলেন দেবকিশোর বাবু।
আরও পড়ুন : অন্য রকম শারদীয়ায় এই সব মানলেই মন ভাল, নিরাপদে কাটবে পুজো
পাড়ার পুজোর প্যান্ডেলে সকালে বা দুপুরে যখন ভিড় থাকে না তখন একবার ঘুরে আসা যেতে পারে, মন্তব্য দেবকিশোরের। চিকিৎসকদের অনুরোধ, ভিড় থাকলে সেই প্যান্ডেলে একেবারেই যাওয়া যাবে না বাড়ির প্রবীণ সদস্য কিংবা খুদেদেরও।
বেশি বয়সে হাঁটু আর কোমরের ব্যথার কষ্টে ভুগতে হয় অনেককেই। কিন্তু তা বলে ঠাকুর দেখার সময় অনেকেই হেঁটে হেঁটে ঠাকুর দেখতে যাবেন বলে ঠিক করে ফেলেছেন। বেল্ট পরা নিয়ে অনেকের আপত্তি থাকলেও স্পাইন ও অর্থোপেডিক সার্জন সৈকত সরকারের মত, বাড়ির বাইরে কাজের জন্য গেলে নি-ক্যাপ, লাম্বার বা সারভাইকাল বেল্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সারা দিন পরে থাকা অনুচিত। হাঁটুর ব্যথায় ঠান্ডা সেঁক ও কোমরের ব্যথায় গরম সেঁক দিলে ব্যথার হাত থেকে অনেকাংশে রেহাই পাওয়া যায় বলে জানালেন সৈকতবাবু।
হাঁটার সময় ব্যথায় কাবু হলে নিরাপদ দু-একটা ব্যথার ওষুধ সঙ্গে রাখুন। প্যারাসিটামল জাতীয় ব্যথার ওষুধ সব থেকে নিরাপদ, জানালেন সৈকত। পাড়ার প্যান্ডেল ফাঁকা থাকলে প্রণামের সময় মাটিতে বসবেন না। চেয়ারে বসে বা দাঁড়িয়ে ঠাকুর দেখুন প্রয়োজনে।
বয়স্কদের ক্ষেত্রে তো বটেই সকলের জন্যেই পুজোয় মাইকের অত্যাচার অনেক সময় অসহনীয় হয়ে ওঠে। ৮৫ ডেসিবেলের উপরে লাগাতার মাইকের শব্দ, তা যত পছন্দের গানই হোক না কেন হৃদরোগের কারণ হতে পারে। শ্রবণযন্ত্রে খারাপ প্রভাবও ফেলতে পারে। এ ক্ষেত্রে দেবকিশোর গুপ্তর পরামর্শ দরকার হলে পুজো কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করুন। না হলে বর্ষীয়ান মানুষের ঘরের দরজা-জানলা বন্ধ করে রাখা ছাড়া উপায় নেই। প্যান্ডেলে ধুপ-ধুনোর ধোঁয়ার মধ্যে থাকলে থেকে হাঁচি-কাশির ঝুঁকি থাকে।
যাঁদের হাঁপানি, সিওপিডি, আইএলডি-সহ অন্য ফুসফুসের অসুখ রয়েছে তাঁরা ভুলেও ধুপ-ধুনোর ধোঁয়ার কাছে যাবেন না, বললেন মেডিসিনের চিকিৎসক দীপঙ্কর সরকার। হাইপারটেনশন, ডায়াবিটিস, কোলেস্টেরল, হার্টের অসুখের জন্যে অনেককেই নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়।
আরও পড়ুন : পুজোর সময় রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে এই সব মানতেই হবে
পুজোর আনন্দে ওষুধ খেতে ভুলে গেলেই মুশকিল। রোজকার ওষুধ খেতে ভুলবেন না। গ্লকোমার জন্যে যাদের নিয়ম করে চোখে ওষুধ লাগাতে হয়, তাঁরা ওষুধ লাগাবেন। বেশি বয়সে কিছু অসুখ নির্দিষ্ট উপসর্গ ছাড়াও হতে পারে। সাধারণ ভাবে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ বুকে ব্যথা বা চাপ ধরা ভাব, নিঃশ্বাসের কষ্ট আর দরদরিয়ে ঘাম। বয়স্ক মানুষের এ সব লক্ষণ ছাড়াও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। যেমন-হঠাৎ পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলেন। হার্ট অ্যাটাক বা ব্রেন স্ট্রোকের লক্ষণ। তাই কোনও শারীরিক সমস্যা হলে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
যদি দেখেন বয়স্ক মানুষটি আচমকা অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছেন বা অদ্ভুত আচরণ করছেন, দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, দীপঙ্করবাবু জানান এমনই। বেশি বয়সে সোডিয়াম-পটাসিয়ামের ভারসাম্য কমের গেলে বয়স্ক মানুষরা অসংলগ্ন আচরণ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে অবিলম্বে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে নিতে হবে। তবে কোভিড অতিমারিতে পুজোয় একটু সংযত হতে হবে সকলকেই। বাড়িতে বসে টেলিভিশনে পুজো দেখুন। প্যান্ডেল প্যান্ডেলে ঘুরে ঠাকুর দেখা এ বছরের জন্যে বন্ধ রেখে কোভিডমুক্ত থাকুন, ভাল থাকুন।