পুজোয় বাকি মাত্র হাতে গোনা কয়েক দিন। খোঁপা হোক কিংবা খোলা চুলের ফ্যাশন, কোনওটাই জমবে না এখন থেকেই চুলের সঠিক যত্ন না নিলে। এমনিতেই শরতের আগে বর্ষায় বাতাসের আর্দ্রতার কারণে চুলের গোড়া আলগা হয়ে চুল পড়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। তার উপর মাথার ত্বকে বৃষ্টির জল পরলে তা চুলের পক্ষেও ক্ষতিকর। তাই চুলের ক্ষতি না আটকাতে পারলে পুজোয় চুলের হারানো জেল্লা ফিরে পেতে সমস্যায় পড়বেন আপনি।
বুদ্ধি খাটাতে পারলে চুলের আর্দ্র ভাব কটাতে এই এক সপ্তাহই যথেষ্ট। চুলের যত্নে মেনে চলুন কিছু ঘরোয়া টোটকা। তৈলাক্ত চুলের জন্য যে উপায়ে আস্থা রাখা যায়, শুষ্ক চুলের বেলায় সে উপায়ে ভরসা রাখা যায় না। তাই আপনার চুলের ধরন বুঝে তবেই প্রয়োগ করুন এই টোটকাগুলি।
হট অয়েল ট্রিটমেন্ট চুলের যত্নের জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপায়। সহজেই এই ট্রিটমেন্ট বাড়িতেই করতে পারবেন আপনি। বিশেষ করে চুলে রং করা থাকলে এই হট অয়েল মাসাজ চুলের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। শুষ্ক চুলে সপ্তাহে তিন দিন নারকেল তেল ও ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে গরম করে নিন। ওই মিশ্রণ দিয়ে চুলে ও মাথার ত্বকে আলতো মাসাজ করুন। চুল খুব শুষ্ক বা তেলা কোনওটাই না হয়ে মাঝারি ধরনের হলে আলাদা করে সাপ্তাহিক নিয়মে অয়েল ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন পড়ে না। তবে চুলকে ঝলমলে আর সুস্থ রাখতে মাসে দু’বার হট অয়েল ট্রিটমেন্ট করাতে পারেন। সে ক্ষেত্রেও নারকেল তেল ও ক্যাস্টর অয়েলে ভরশা রাখতে পারেন। আপনার চুল অতি তৈলাক্ত হলেও হট অয়েল ট্রিটমেন্ট চুলের গোঁড়াকে মজবুত করবে। এ ক্ষেত্রে আমন্ড তেল ও ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে গরম করে এই ধরনের চুলে মাসাজ করুন। তবে সারা রাত চুলকে তেলে মুড়ে না রেখে আধ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে শ্যাম্পু করে নিলেই যথেষ্ট।
হট অয়েল ট্রিটমেন্ট চুলের গোঁড়াকে মজবুত করে
চুলকে মোলায়েম ও ঝলমলে করতে বাড়িতে সহজেই বানিয়ে ফেলুন হেয়ার প্যাক। দু’চামচ টক দই ও তিন চামচ মধু মিশিয়ে একটা প্যাক বানিয়ে নিন। স্নানের আগে এই মিশ্রণ মেখে নিন চুলে। তার পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন চুল। শুষ্ক চুলের সমস্যা থাকলে এখনই ব্যবহার করুন এই হেয়ার প্যাক।
বর্ষায় চুলে খুব জট পড়ে। দুটো ডিম ভেঙে তাতে তিন চামচ মধু যোগ করে ফেটিয়ে নিন। এই প্যাকটিও স্নানের আগে চুলে লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন খুব ভাল করে। শ্যাম্পুর পর ক্ষারবিহীন বা খুব অল্প ক্ষারযুক্ত কোনও কন্ডিশনার দিয়ে ধুয়ে ফেলুন চুল। রুক্ষ ও তেলতেলে উভয় প্রকার জন্যই বিশেষ কার্যকরী এই প্যাক।
আরও পড়ুন: পুজোর আগে এই ডায়েট মেনে চলুন! তা হলেই পাবেন নজরকাড়া ফিটনেস!
স্নানের সময় এক মগ জলে মিশিয়ে নিন আধ কাপের চেয়ে একটু বেশি পরিমাণ মধু। শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার ব্যবহারের পরিবর্তে এই মিশ্রণ ঢেলে দিন চুলে। আঙুল চালিয়ে হালকা ম্যাসাজ করুন। জল দিয়ে ভাল করে ধুয়ে নিন চুল। উপকার পাবেন সব ধরনের চুলেই।
চুলের জেল্লা ফিরে পেতে এড়িয়ে চলুন যন্ত্রপাতির বাড়াবাড়ি
অ্যালোভেরা পাতা চিরে তার শাঁসটা বার করে নিন। বাজারেও অনেক রকম অ্যালোভেরা জেল কিনতে পাওয়া যায়। তবে সেখানেও রাসায়নিকের উপস্থিতি থাকে। তাই প্রাকৃতিক উপায়ে সে জেল হাতে এলে সেটাই ব্যবহার করুন। চুল ও মাথার ত্বকে পিএইচ-এর ভারসাম্য রক্ষা করতে অ্যালোভেরা অত্যন্ত কার্যকর। তবে অনেকের এই শাঁস ত্বকে সহ্য হয় না, তাঁরা ফুটিয়ে নিয়ে ব্যবহার করুন। চুলের আগা থেকে গোড়া এই শাঁস লাগান ও মাথার ত্বকে আঙুলের সাহায্যে মাসাজ করুন। শ্যাম্পুর পর এটি ব্যবহার করুন।
আরও পড়ুন: পুজোয় লাগাতার মেক আপ? ত্বক বাঁচাতে এ সব মানুন এখন থেকেই
গ্রীষ্ম হোক বা বর্ষা, স্নানের পরে ভিজে চুল শুকনোর জন্য আমরা বেশির ভাগ সময়ই ব্যবহার করি ব্লো ড্রায়ার। কিন্তু এই ব্লো ড্রায়ারের মাধ্যমে চুল শোকানো যে আরও কত বড় ক্ষতি করতে পারে তার কোনও সীমা নেই। চুল রুক্ষ হওয়া তো রয়েইছে, এ ছাড়া হেয়ার ড্রায়ারের গরম হাওয়া মাথার ত্বকেরও ক্ষতি করে। ঘন ঘন হেয়ার ড্রায়ার চুলের গোড়াকেও নষ্ট করে। তাই হেয়ার ড্রায়ার ছাড়া প্রাকৃতিক রোদ, হাওয়া অথবা পাখার হাওয়ায় চুল শোকাতেই পরামর্শ দেন ত্বক বিশেষজ্ঞরা।
প্লাস্টিকের চিরুনি বাতিল করে এখন থেকে ব্যবহার করুন কাঠের দাঁড়া যুক্ত চিরুনি। এই উপায় আপনার চুল পড়ার সমস্যাকে বেশ জব্দ করা যাবে।